বইপত্র, কাপড়-চোপড় সবই আগের জায়গায় আছে, নেই শুধু শিলা। আশুলিয়ার শিলাদের বাড়িতে এখন শুধুই শূণ্যতা। যেন পাথরের মূর্তি হয়ে গেছে বাবা-মা। শোকের ছায়া এলাকার সর্বত্র। শিলার আত্মা যেন কেঁদে কেঁদে বলছে- ‘ওদের ছেড়ে দিও না, ওদের বিচার চাই, না হলে ওরা আরও মেয়ের জীবন ধ্বংস করবে। ‘ বখাটেদের উৎপাতে চরম আত্মাভিমানে একটি চিরকুট লিখে গত বৃহস্পতিবার রাতে পৃথিবী থেকে বিদায় নেয় শিলা। প্রতিবাদ করতে না পেরে নিজেকেই হত্যা করে সে। মৃত্যুর আগে জানিয়ে যায় কারা তার এ মৃত্যুর জন্য দায়ী। মেয়ের লিখে যাওয়া চিরকুটের উপর ভিত্তি করে নিহতের বাবা গত সোমবার রাতে জাফর ও খোকন নামে দুজনকে আসামি করে আশুলিয়া থানায় মামলা দায়ের করেছেন। বিষয়টি তদন্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা। মৃত্যুর আগে শিলা চিরকুটে লিখে যান- ‘যা করিনি তার জন্য কেন দোষী হতে হবে? তার থেকে মরে যাওয়া ভাল। আমার জন্য আমার মা-বাবার সম্মানহানি হোক সেটা আমি চাই না। আমার মৃত্যুর জন্য জাফর, খোকন দায়ী। ইতি হতভাগী শিলা। ‘

শিলা ঢাকার আশুলিয়ার শিমুলিয়া ইউপির পশ্চিম কলেশ্বরী এলাকার মো. আওলাদ হোসেনের মেয়ে। সে শিমুলিয়া শ্যামা প্রসাদ (এসপি) হাইস্কুলের ১০ম শ্রেণির ছাত্রী ছিল। এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে ঘরের দরজা বন্ধ করে দেয় শিলা। দীর্ঘ সময় তার কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে তার বাবা আওলাদ হোসেন ঘরের দরজায় ধাক্কা দেন। এ সময় ভিতর থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে মেয়ের ঝুলন্ত দেহ দেখেন। পরে ঘরে ঢুকে টেবিলে চিরকুট পান।

খবর পেয়ে আশুলিয়া থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই এলাকার এক ব্যক্তি জানান, চিরকুটে লেখা ‘জাফর’ শিলার বড় ভাইয়ের বন্ধু। শিলার স্বজন সালমান চৌধুরী আফসোস করে  বলেন, সৌন্দর্যই শেষ পর্যন্ত শিলার জন্য কাল হয়ে দাঁড়াল। ছোটবেলা থেকেই ওকে আমরা সবসময় আগলে রেখেছি। খুবই আত্মভিমানি মেয়ে ছিল। সুন্দর হওয়ায় অনেক ছেলেপেলেই পেছনে ঘুরতো। কিন্তু, শিলার স্বপ্ন ছিল অনেক বড় হবার। তাই এসবে কখনো পাত্তা দেয়নি। স্কুল শেষ করেই বাড়ি ফিরে আসতো। কিন্তু বখাটেরা শিলাকে বাঁচতে দিল না।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn