যুক্তরাষ্ট্রে এক মাসে ৩ বাংলাদেশী নিহত
এনআরবি নিউজ, নিউইয়র্ক থেকে : জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের আটলান্টা ডাউন টাউনে নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কৃষ্ণাঙ্গ বন্দুকধারির গুলিতে মারাত্মকভাবে আহত হবার ১৩দিন পর মারা গেলেন বাংলাদেশী দীপংকর দাস (৫৭)। এর ঠিক এক মাস আগে একই সিটিতে দুর্বৃত্তের গুলিতে মারা গেছেন আরো দুই বাংলাদেশী। এরা ছিলেন ব্যবসায়ী সাইফুল ভ’ইয়া (৩৬) এবং তার দোকানের কর্মচারি রেজওয়ানুল ইসলাম (২০)। পৃথক দৃটি সশস্ত্র ডাকাতির ঘটনার সাথে জড়িতরা এখনও গ্রেফতার না হওয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশীদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার ঘটেছে।
সর্বশেষ ডাকাতির ঘটনায় মাথায় গুলিবিদ্ধ হন দীপংকর দাস গত ১৪ অক্টোবর সকাল সাড়ে ১০টায়। আটলান্টা সিটির ক্যাসকেড এভিনিউতে জি কর্ণার ফুড মার্টে ডাকাতির সময় এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। ব্রেনডেড অবস্থায় তাকে নিকটস্থ গ্র্যাডি মেমরিয়াল হাসপাতালে (এৎধফু গবসড়ৎরধষ ঐড়ংঢ়রঃধষ.)ভর্তি করা হয়েছিল। কমায় থাকাবস্থায়ই ২৭ অক্টোবর শুক্রবার অপরাহ্ন সাড়ে ৪টায় তাকে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন। আটলান্টা পুলিশের মেজর এডাম লী জানান, ‘তরুন বয়েসী এক বন্দুকধারি দীপংকরের মাথায় তাক করে গুলি ছুড়েছিল। দীপংকর দোকানের মেঝেতে লুটিয়ে পড়ার পর ক্যাশ বাক্স থেকে নগদ সব ডলারসহ লটারির কিছু টিকিট নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তটি। দুর্বৃত্তের ছবি সর্বসাধারণের জন্যে প্রচার করা হয়েছে। পুলিশী অভিযান অব্যাহত রয়েছে তাকে গ্রেফতারের জন্যে।’
দীপংকরের ভাগিনা অভিক দাস বলেন, ‘মামা ছিলেন গ্যাস স্টেশন কাম কনভেনিয়েন্ট স্টোরটির মালিক। সাথে আরেকজন সেলসম্যান ছিলেন বাইরে।’ মৌলভীবাজার জেলা সদরের সন্তান দীপকংকর দাসের ১৬ বছর বয়েসী পুত্র দেব জ্যোতি পড়ছে একাদশ গ্রেডে। একমাত্র কন্যার বয়স ১৩ বছর এবং আটলান্টার একটি হাই স্কুলে নবম গ্রেডে পড়ছে। দীপংকরের স্ত্রী এখন শুধু কেঁদে দিন কাটাচ্ছেন। উল্লেখ্য, দীপংকর নিউইয়র্কে বসবাস করছিলেন। নিউইয়র্কস্থ ‘শ্রীকৃষ্ণ ভক্তসংঘ, ইউএসএর ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন। এই দুর্বৃত্তের সন্ধান পুলিশকে জানানোর জন্যে হটলাইন চালু করেছে। এ নম্বর হচ্ছে ৪০৪-৫৭৭-৮৪৭৭.
এর আগে গত মাসের ১০ সেপ্টেম্বর রাত ১১টায় আটলান্টা সিটির সাউদার্ন গ্রোসারি স্টোর বন্ধ করে কর্মচারিসহ নিজ গাড়িতে উঠার সময়ই দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত হন বাংলাদেশী সাইফুল ইসলাম ভ’ইয়া। এ সময় মারাত্মকভাবে আহত হন কর্মচারি রেজওয়ানুল ইসলাম। ৪ দিন পর গ্র্যাডি মেমরিয়াল হাসপাতালের চিকিৎসকরা তাকেও মৃত ঘোষণা করেন। এ হত্যাকান্ডের জন্যে দায়ী দৃর্বৃত্তরাও এখন পর্যন্ত গ্রেফতার হয়নি। তবে গ্রোসারি স্টোরের বাইরের সার্ভিলেন্স ভিডিও ফুটেজের উদ্ধৃতি দিয়ে আটলান্টা পুলিশ জানিয়েছে যে, দুই বন্দুকধারি স্টোরের নিকটেই অপেক্ষমান একটি গাড়ি থেকে নেমেই সাইফুল ভুইয়াকে গুলি করতে থাকে। ড্রাইভিং সীটেই গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান সাইফুল। তার পাশের সীটে বসা রেজওয়ানুল মারাত্মকভাবে আহত হয়েছিলেন। এ ঘটনায় অবশ্য দুর্বৃত্তরা কোন কিছু ছিনতাই করেনি। কিংবা গ্রোসারিতেও হানা দেয়নি। স্থানীয় সিটি কাউন্সিলম্যান ক্লেতা উইন্সলো (অঃষধহঃধ ঈরঃু ঈড়ঁহপরষসবসনবৎ ঈষবঃধ ডরহংষড়ি ) গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘২০১০ সালে একইভাবে এই গ্রোসারি স্টোরের সে সময়ের মালিক বাইক সাং -কেও দৃর্বৃত্তরা গুলি করে হত্যা করেছে। কাউন্সিলম্যানের ধারণা যে, এই গ্রোসারি স্টোর চিরতরে বন্ধের জন্যেই হয়তো কোন মহল এহেন হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে। এদিকে, দীপংকর দাসের হত্যাকান্ডের নিন্দা এবং অবিলম্বে ঘাতক গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রস্থ বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাবেক সেক্রেটারি ও শ্রীকৃষ্ণ ভক্তসংঘের নেতা সুশীল সাহা। তিনি নিহতের পরিবারের প্রতি সহমর্মিতাও জ্ঞাপন করেছেন।