এনআরবি নিউজ, নিউইয়র্ক থেকে :

লন্ডন এবং প্যারিস স্টাইলে পিকআপ ভ্যান দিয়ে পথচারি এবং সাইকেল আরোহির ওপর সন্ত্রাসী হামলায় ৮ ব্যক্তি নিহত এবং আরো ডজনখানেক আহত হয়েছেন। ৩১ অক্টোবর মঙ্গলবার বিকেল ৩টা ৪ মিনিটে নিউইয়র্ক সিটির ডাউন টাউনে গ্রাউন্ড জিরোর নিকটে এবং স্টাইভ্যাসেন্ট হাই স্কুলের পাশের রাস্তায় এই হামলার ঘটনায় জড়িত সন্ত্রাসীকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় নিকটস্থ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নিউইয়র্কের পুলিশ কমিশনার জেমস পি ও’নীল জানিয়েছেন যে, হামলাকারির নাম সাইফুল্লাহ সাইপোভ এবং তার বয়স ২৯ বছর। উজবেকিস্তানের নাগরিক সাইফুল্লাহ ২০১০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে আসার পর নিউজার্সির প্যাটারসনে বাস করছিলেন। হামলায় ব্যবহৃত পিকআপ ভ্যানটি ভাড়া করেছিলেন নিউজার্সি থেকেই। নীরিহ পথচারিদের ওপর ভ্যান উঠিয়ে দেয়ার ঘটনা প্রত্যক্ষকারি এবং তাকে থামাতে গুলিবর্ষণকারি পুলিশ অফিসারের উদ্ধৃতি দিয়ে পুলিশ কমিশনার আরো উল্লেখ করেন যে, ভ্যানটি একটি স্কুল বাসের সাথে ধাক্কা খেয়ে থমকে দাঁড়ানোর পরই ড্রাইভার অস্ত্র উচিয়ে আল্লাহু আকবর ধ্বনিতে সন্ত্রস্ত পথচারিদের ধাওয়া করেন। সে সময় টহল পুলিশ তাকে নিবৃত করার চেষ্টা করেও সাড়া না পাওয়ায় পুলিশ অফিসার রায়ান ন্যাশ তার উদ্দেশ্যে গুলি করতে বাধ্য হন। গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে স্কুল বাস এবং আক্রমণকারি ভ্যানের মধ্যিখানে। এ ঘটনার কিছুক্ষণ পর পুলিশ প্লাজায় অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে সিটি মেয়র বলেছেন, এটি সন্ত্রাসী আক্রমণ। নীরিহ পথচারিদের টার্গেট করা হয় কাপুরোষিতভাবে।
পুলিশ কমিশনার উল্লেখ করেন, ভ্যানটি পথচারি এবং সাইকেল আরোহিদের চাপা দিয়ে হাডসন নদীর পাশ দিয়ে ৫০ ফুটের মত এগুনোর পর তা রাস্তার পার্শ্ববর্তী কার্ভের সাথে ধাক্কা খেয়ে সম্মুখের স্কুল বাসে আটকে পড়ে। সেই বাস থেকে উদ্ধার করা হয় কয়েকজনকে। এরপরই পিস্তল উচিয়ে লোকজনকে ধাওয়া করেন। এ সময় অকুস্থলেই ৬ জনের মৃত্যু হয়। হাসপাতালে নেয়ার পর আরো দু’জনকে মৃত ঘোষণা করা হয় বলে পুলিশ জানায়। সাথে সাথে এ সংবাদ গণমাধ্যমে আসার পর সর্বত্র সন্ত্রস্ত ভাব সৃষ্টি হয়েছে। সিটির গুরুত্বপূর্ণ স্থানে টহল বাড়ানোর পাশাপাশি গাড়িসহ লোকজনের ওপর মনিটরিং বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিশেষ করে টাইমস স্কোয়ার, ইউনিয়ন স্কোয়ার এবং পাতাল ট্রেনে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এই ঘটনার পর হ্যালোইনের আনন্দ মাটি হয়েছে। হ্যালোইন মাস্ক এবং পোশাক পরতে সাহস পায়নি শিশু-কিশোরেরা। পুুৃলিশ জানিয়েছে, সাইফুল্লাহ যে পিস্তলটি উচিয়ে দেখায়, সেটি সত্যিকারের পিস্তল নয়। তার কাছে পরিচয়পত্র পাওয়া গেছে, তা ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের। ইতিপূর্বে লন্ডন এবং প্যারিসে এ ধরনের সন্ত্রাসী হামলা হয়। অনেক মানুষ হতাহত হয়েছেন ঐসব হামলায়। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর সন্ত্রাসী হামলায় ধ্বসে পড়া টুইন টাওয়ার থেকে সামান্য দূরে এই গাড়ি-হামলার পর সিটির মুসলমানদের মধ্যেও নতুন করে ভীতির সঞ্চার ঘটেছে। সকল গণমাধ্যমে মুসলিম সন্ত্রাসী শব্দ ব্যবহার করা হচ্ছে। এমনকি প্রধান প্রধান গণমাধ্যমে আক্রমণকারি শনাক্ত হবার আগে কখনো বাংলাদেশী, আবার কখনো মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছিল।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn