জেলহত্যা দিবস আজ
বেদনাবিধুর ৩রা নভেম্বর আজ। জেলহত্যা দিবস। এদিন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নির্মম ও নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় জাতীয় চার নেতাকে। পনেরই আগস্টের নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর মাত্র তিন মাসেরও কম সময়ের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, জাতীয় নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী এবং এএইচএম কামারুজ্জামানকে এই দিনে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের অভ্যন্তরে হত্যা করা হয়। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি সামরিক জান্তার কারাগারে বন্দি বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে জাতীয় চার নেতা দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন। দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সময় বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন উপ-রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম।
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তাজউদ্দিন আহমেদ। ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী অর্থমন্ত্রী ও এএইচএম কামারুজ্জামান খাদ্য ও ত্রাণমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। একই সঙ্গে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধ পরিচালনার ক্ষেত্রে নীতি ও কৌশল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন তারা। একটি স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় জাতীয় এই চার নেতার অবদান ছিল অপরিসীম। ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যাকাণ্ডের পর পরই তার ঘনিষ্ঠ চার জাতীয় নেতাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। পরবর্তী অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ক্যু-পাল্টা ক্যু-এর মধ্যে ৩রা নভেম্বর নির্মম এই হত্যাকাণ্ড ঘটায় ঘাতকেরা। বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভার সবচাইতে ঘৃণিত বিশ্বাসঘাতক হিসেবে পরিচিত এবং তৎকালীন স্বঘোষিত রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোস্তাক আহমদের প্ররোচনায় এক শ্রেণির উচ্চাভিলাষী মধ্যম সারির জুনিয়র সেনা কর্মকর্তা এ নির্মম হত্যাকাণ্ড ঘটায়। ষড়যন্ত্রকারীরা প্রথমে গুলি এবং পরে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে চার নেতার মৃত্যু নিশ্চিত করে।
আজ জাতি যথাযথ শ্রদ্ধা প্রদর্শনের মাধ্যমে চার জাতীয় নেতাকে স্মরণ করবে। রাষ্ট্রীয়ভাবে এবং আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠনের উদ্যোগে সারা দেশে বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হবে। জেল হত্যা দিবস উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। বিবৃতিতে তারা শহীদ জাতীয় চার নেতার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান। জেল হত্যা দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সকাল ৬টায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবন ও দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ দেশের সর্বত্র শাখা কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ, কালো ব্যাজ ধারণ ও কালো পতাকা উত্তোলন। সকাল ৭টায় বঙ্গবন্ধু ভবনে জমায়েত এবং বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা হবে। এছাড়া সকাল ৮টায় বনানী কবরস্থানে ১৫ই আগস্টের শহীদ ও জাতীয় নেতাদের কবরে পুষ্পার্ঘ অর্পণ, ফাতেহা পাঠ, মিলাদ মাহফিল ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। একইভাবে রাজশাহীতে জাতীয় নেতা শহীদ কামরুজ্জামানের কবরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, ফাতেহা পাঠ, মিলাদ মাহফিল ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। জেল হত্যা দিবস উপলক্ষে বিকাল ৩টায় রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।