পানামা পেপারস কেলেঙ্কারির ধাক্কা বিশ্ব সামলে নেওয়ার আগেই আরেকটি ধাক্কা, এবার এলো প্যারাডাইজ পেপারস কেলেঙ্কারি। ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর নামও আছে এ কেলেঙ্কারিতে! প্রায় ১৪ কোটি গোপন নথি ফাঁস হওয়া এই কেলেঙ্কারির নাম দেওয়া হয়েছে প্যারাডাইজ পেপারস। পানামা পেপারস কেলেঙ্কারির মতোই এবারও তথ্য প্রকাশ করেছে জার্মান দৈনিক জিটডয়েচ সাইতং। বারমুডায় অবস্থিত অ্যাপলবাই নামের এক আইনি সহযোগী সংগটনের গোপন নথি জোগাড় করে সেটা তারা দিয়ে দিয়েছে আন্তর্জাতিক অনুসন্ধানী সাংবাদিক সংঘটনকে (আইসিআইজে)। ৬৭টি দেশের ৩৮০ জন সাংবাদিক ১ কোটি ৩৪ লাখ ডকুমেন্টস এখন তদন্ত করে দেখছে। অধিকাংশ তথ্যই বিভিন্ন দেশের রাজনীতিবিদদের। যারা কর থেকে বাঁচার জন্য বিভিন্ন ট্যাক্স হেভেনে (কর দিতে হয় না কিংবা খুবই নিম্ন হারে কর দেওয়া যায় এমন দেশ) বিনিয়োগ করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। তদন্তের এখনো শুরু মাত্র। তাই পুরো তথ্য পাওয়া এখনো সম্ভব নয়। তবে এর মাঝেই চমকে দেওয়ার মতো কিছু তথ্য দিয়েছে বিশ্বের বড় বড় সব সংবাদমাধ্যম।

রাজনীতিবিদ, দ্বৈতনাগরিক, উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষাকারী ও জনপ্রিয় ব্যক্তিরা কীভাবে কর ফাঁকি দিতে বা গোপনীয়তার আবরণে নিজেদের লেনদেন ঢাকতে জটিল কাঠামোর ট্রাস্ট, ফাউন্ডেশন ও শেল কোম্পানি গড়ে তুলছেন, তা উঠে এসেছে অনেক নথিতে। ফাঁস হওয়া নথিতে দেখা গেছে, ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের ব্যক্তিগত অর্থের প্রায় এক কোটি পাউন্ড অফশোর কোম্পানিতে বিনিয়োগ হয়েছে। ডাচি অব ল্যাঙ্কাস্টার নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এসব অর্থ কেমান আইল্যান্ডস ও বারমুডায় গেছে। ওই প্রতিষ্ঠানটি রানির ব্যক্তিগত সম্পদ ৫০ কোটি পাউন্ডের বিনিয়োগ দেখভাল করে এবং তাকে মুনাফা তুলে দেয়। বিবিসি বলছে, এই বিনিয়োগে অবৈধ কিছু নেই এবং রানি কর দিচ্ছেন না বলেও এটা ইঙ্গিত করে না। তবে রাজপরিবার অফশোর কোম্পানিতে বিনিয়োগ করতে পারে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যেতে পারে। গ্রাহক ‘ঠকানোয়’ সমালোচিত ব্রিটিশ কোম্পানি ব্রাইট হাউজেও রানির বিনিয়োগ রয়েছে। যুক্তরাজ্যজুড়ে কিস্তিতে ইলেকট্রনিক, গৃহস্থালি পণ্য ও আসবাব সরবরাহ করে ব্রাইট হাউজ। কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ গ্রাহকদের সঙ্গে তাদের অসদাচরণ সংবাদ শিরোনাম হয়েছে। বিপুল অংকের কর ফাঁকির অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনে বাণিজ্যসচিব হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত উইলবার রস। নব্বইয়ের দশকে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করেছিলেন বলেই রসের এমন অবস্থান প্রাপ্তি- এমন তথ্য প্রচারিত। বিভিন্ন নথিতে দেখা গেছে রস এমন এক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত, যারা রাশিয়ান সংস্থাকে তেল ও গ্যাস শিপিং করে। যে প্রতিষ্ঠানে অংশীদার ভ্লাদিমির পুতিনের জামাই এবং আরও দুজন ব্যক্তি যারা যুক্তরাষ্ট্রের চোখে অপরাধী। কানাডার প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনে আর্থিকভাবে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করেছেন স্টেফান ব্রনফম্যান। মাত্র দুই ঘণ্টায় জাস্টিন ট্রুডোকে আড়াই লাখ ডলার তহবিল এনে দিয়েছিলেন ব্রনফম্যান। কিন্তু গোপন নথিতে দেখা যাচ্ছে, ব্রনফম্যান ও তার প্রতিষ্ঠান কেম্যান আইল্যান্ডে প্রায় ৬ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছেন। অথচ ট্রুডো বারবারই ‘অফশোর’ (কর থেকে বাঁচার জন্য বিদেশে বিনিয়োগ) বিনিয়োগের বিপক্ষে নিজের অবস্থান তুলে ধরেছেন।

গতবার পানামা কেলেঙ্কারিতে লিওনেল মেসির নাম এসেছিল। এবারও ফুটবল বাদ পড়েনি। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব এভারটন এফসিতে বিনিয়োগ করা বড় একটা অংশ নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে। অ্যাপলবাই লিকসে যে দেশের ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম পাওয়া গেছে তার মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ৩১,১৮০; যুক্তরাজ্য ১৪,৪৩৪; বারমুডা ১২,০১৭; ক্যামান আইল্যান্ডস ৮,৬৪০; হংকং ৭,০৬৫; চীন ৫,৯২৪; কানাডা ৩,১৭৬; আইল অব ম্যান ৩,০৫৪; সুইজারল্যান্ড ২,৩৬৩; ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডস ২,১৬৬।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn