র্যাবের ক্যাম্পে হামলা আইএসের দায় স্বীকার,১৭ জনকে হত্যার পরিকল্পনা
রাজধানীর আশকোনার হাজি ক্যাম্পের পাশে প্রস্তাবিত র্যাব সদর দফতরে আত্মঘাতী হামলার দায় স্বীকার করেছে আইএস। ওই জাঙ্গি গোষ্ঠির সংবাদ মাধ্যম আমাক-এ জানানো হয়েছে, ঢাকায় র্যাব বাহিনীর একটি সামরিক ক্যাম্প লক্ষ্য করে একজন আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী আক্রমণ চালিয়েছে। আমাক মেসেজিং অ্যাপ টেলিগ্রামের মাধ্যমে এই হামলার দায়িত্ব স্বীকার করেছে। শুক্রবার দুপুর ১টার দিকে র্যাবের প্রস্তাবিত সদর দফতর এলাকার দেয়াল টপকে ভেতরে ঢুকে পড়ে এক যুবক। এসময় র্যাবের কয়েকজন সদস্য তাকে চ্যালেঞ্জ করলে সে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এরই এক পর্যায়ে বোমার বিস্ফোরণ ঘটায় ওই যুবক। এতে ঘটনাস্থলেই ওই যুবক মারা যায়। আহত হন র্যাবের দুই সদস্য। তাদেরকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। সূত্র : বিবিসি
যে ১৭ জনকে হত্যার পরিকল্পনা ছিল জঙ্গিদের
গুলশানের হলি আর্টিজান রেঁস্তরায় হামলার পরে আরো বাণিজ্যিক ও সেচ্ছাসেবক প্রতিষ্ঠানে হামলার হামলার পাশাপাশি অন্তত ১৭ জন ভিন্ন ধর্মাবলম্বীকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল জঙ্গিরা। ১৭ জনের মধ্যে তিন ব্যবসায়ীও ছিলেন। কিন্তু আইশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় ১৯ জঙ্গি গ্রেপ্তার হওয়ার পর তাদের হামলার পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। পূর্বপশ্চিমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পুলিশের সংশ্লিষ্ট বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।
পুলিশের স্পেশাল টাস্ক গ্রুপ (এসটিজি) সূত্র জানায়, ২০১৫ সালের ২৬ ডিসেম্বর বগুড়া শিবগঞ্জে শিয়া মসজিদে হামলা এবং গত বছরের ২৩ এপ্রিল রাজধানী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. এএফএম রেজাউল করিম সিদ্দিকীকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটে। ওই দু’টি ঘটনায় এবং গাজীপুরের পাতারটেকে সোয়াত টিমের অভিযানে গ্রেপ্তার হওয়া ১৯ জঙ্গির কাছ থেকে পরবর্তী হামলার টার্গেট সম্পর্কিত কয়েকটি তালিকা পাওয়া যায়। ওই তালিকা থেকে জঙ্গিদের পরবর্তী হামলার টার্গেট সম্পর্কে জানতে পারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
অন্তত ১৭ জন বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের ওপর হামলার পরিকল্পনা ছিলো জঙ্গিদের। তালিকার প্রথমে নাম ছিলো শেরপুর কল্যাণী দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের গণিতের শিক্ষক শ্রী বিপ্লব মাস্টারের। হত্যাকাণ্ড ঘটানোর সম্ভাব্য দিন নির্ধারণ করা হয়েছিলো গত বছরের ২০ জুন। তালিকার দ্বিতীয়তে নাম ছিলো সরকারী মদ ব্যবসায়ী শ্রী নব কুমারের। উল্লাপাড়া মোহনপুর বাজারের সরকারি ভাটিখানায় তার মদের দোকান। হত্যাকাণ্ড ঘটনানোর সম্ভাব্য দিন নির্ধারণ করা হয় গত বছরের ২৩ জুন। এরপরেই নাম ছিলো কম্পিউটার যন্ত্রাংশ ব্যবসায়ী গোপাল চন্দ্রের। সিরাজগঞ্জ সদরে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। তালিকার চতুর্থতে নাম ছিলো নাটোরের রাজবাড়ীর শিবমন্দিরের পুরোহিত গোবিন্দ সাধুর। এরপর নাম ছিলো ঠাকুরগাঁও হরিপুর বাজারের এক হিন্দু চিকিৎসকের।
টার্গেট তালিকার ৫ নম্বরে নাম ছিলো ঠাকুরগাঁও হরিপুর বাজারের অপূর্ব গার্মেন্ট নামের এক গার্মেন্ট মালিকের। এরপরেই নাম ছিলো ঠাকুরগাঁও জেলার হরিপুরের যাদুরানী বাজার এলাকার হিন্দু হোমিও চিকিৎসক কিশন চন্দ্র ভৌমিকের। তালিকার অষ্টমের নাম ছিলো দিনাজপুর বিইউ উচ্চ বিদ্যালয়ের কম্পিউটার শিক্ষক খগেন্দনাথের। এরপরেই নাম ছিলো গাইবান্ধার বাদিয়া খালি বাজারের পশ্চিম দিকের এক হিন্দু ওষুধের দোকানীর। তালিকার দশমে নাম ছিলো রাজশাহী বাগমারার চিকিৎসক নিরেন্দ্র নাথ সরকারের। এরপরেই নাম ছিলো জয়পুরহাট ডিগ্রী কলেজের প্রিন্সিপাল ওয়াজেদ পারভেজের। তালিকার দ্বাদশ নম্বরে ছিলো আশুলিয়া পঞ্চপুটি বৌদ্ধমিন্দরের ৪ থেকে ৫ জনের। গতবছরের জুলাই মাসে এই হামলার সম্ভাব্য দিন নির্ধারণ করা ছিলো। এর কয়েকদিন পরেই টাঙ্গাইলের খ্রিস্টানপল্লী হিসেবে পরিচিত জলছাত্র এলাকায় হামলা চালিয়ে ভিন্নধর্মাবলম্বীদের ওপর হামলা চালানো।
জঙ্গিদের ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের ওপর হামলার টার্গেট সেট করার বিষয়ে ডিএমপি অতিরিক্ত কমিশনার ও সিটির প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, জঙ্গি সংগঠনের মধ্যে দুটো ভাগ রয়েছে। এরমধ্যে একটি ভাগ নব্য জেএমবি, আর অন্য ভাগটি আনসারুল্লাহ বাংলাটিম (এবিটি)। এদের মধ্যে মতাদর্শগত ভিন্নতাও রয়েছে। এবিটি মনে করে ভারতে আমাদের একজন মুসলিম ভাইয়ের ওপর হামলা হয়েছে তাই আমরা পুরো হিন্দু বডির ওপর প্রতিশোধ নিবো। হিন্দু বডি বলতে বাংলাদেশে যত হিন্দু আছে তাদেরকেই এবিটি হিন্দু বডি মনে করে। আর এ কারণেই তারা তৃনমূল পর্যায়ের হিন্দুদের ওপর হামলার টার্গেট করে।
তিনি আরো বলেন, বর্তমানে আইশৃঙ্খলা বাহিনীর সম্মিলিত চেষ্টার ফলে জঙ্গিরা অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে যে সব জঙ্গিদের যারা অর্থায়ন করতো, তারাও এখন আর সে ভাবে অর্থায়ন করতে পারছে না। এসব মিলিয়ে জঙ্গিদের কার্যক্রম এখন অনেকটাই স্তিমিত। তবে তাই বলে কোনো ভাবে তাদের দূর্বল ভেবে অবহেলা করা যাবে না। আইনশৃঙ্খলার তত্পরতা অব্যাহত রাখতে হবে বলেও জানান মনিরুল ইসলাম।
উল্লেখ্য, গত বছরের ১ জুলাই রাতে একদল জঙ্গি গুলশান-২ এর ৭৯ নম্বর সড়কের হলি আর্টিজান বেকারিতে ঢুকে ১৭ বিদেশিসহ ২০ জনকে হত্যা করে। পরদিন সকালে কমান্ডো অভিযান চালিয়ে ওই রেস্তোরাঁর নিয়ন্ত্রণ নেয় নিরাপত্তা বাহিনী। এরপর ঈদের জামাতের সময় শোলাকিয়ায় হামলা চালায় জঙ্গিরা। পরবর্তীতে রাজধানীর কল্যাণপুর, মিরপুর, উত্তরার আশকোনায় জঙ্গি আস্তানায় অভিযান পরিচালনা করে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এমনকি সর্বশেষ সীতাকুণ্ডে ২ টি জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালানোর একদিনের মাথায় উত্তরায় হজ্জ্ব ক্যাম্পের পাশে র্যাব সদস্যদের ওপর আত্নঘাতী বোমা হামলা চালিয়েছে জঙ্গিরা।