একটি মহল প্রশাসনকে বিচার বিভাগ সম্পর্কে ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে যাচ্ছে। এজন্য বিচার বিভাগের সঙ্গে প্রশাসনের ভুল বোঝাবুঝি চলছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমির সিনহা। শনিবার রাজধানীর বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের সেমিনার হলে বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের অনলাইন অ্যাপ্লিকেশন রেজিস্ট্রেশন সিস্টেমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার বলেন, ‘পাকিস্তান আমল থেকে দেখলে বিচার বিভাগকে ক্ষতি করেছে আমাদেরই বিচার বিভাগের কয়েকজন। আমাদের বিচার বিভাগের কয়েকজন এজন্য দায়ী। বলা হয়, বিচার বিভাগ প্রশাসনের প্রতিপক্ষ। এটা কখনো ঠিক নয়। প্রত্যেক সরকারের আমলেই কিছু বিষয়ে বাড়াবাড়ি হবে। সে বিষয়গুলোকে নিয়ন্ত্রণে রাখবে বিচার বিভাগ। এজন্য বিচার বিভাগের স্বাধীনতা প্রয়োজন’।

তিনি আরও বলেন, ‘মাসদার হোসেন মামলার রায়ের মাধ্যমে আমরা বিচার বিভাগকে আলাদা করেছি। বিচার বিভাগ স্বাধীনতা রক্ষার জন্য। আমেরিকা সরকার বাড়াবাড়ি করলে বিচার বিভাগ তা নিয়ন্ত্রণ করে সমতা বজায় রাখছে। ভারতেও তাই ঘটছে। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা, জেল হত্যা মামলা, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, চট্রগ্রামে জাহাজ ভাঙার ক্ষেত্রে নিয়ম, মেডিকেল ভর্তির গাইড লাইন-এর সবটাই সুপ্রিম কোর্টের (বিচার বিভাগ) দ্বারা হয়েছে’।

প্রধান বিচারপতি অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ‘বিচার বিভাগে ৩ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়। অথচ আমাদের জন্য কোনো খাত নেই। একটি মহল থেকে বিচার বিভাগ নিয়ে প্রশাসনে উল্টো মত তুলে ধরা হয়। তাই বিচার বিভাগের সঙ্গে প্রশাসনের ভুল বোঝাবুঝি চলছে।’  বিচার বিভাগকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিলে দেশে সন্ত্রাস ও অন্যায় কার্যক্রম অনেকাংশে কমে আসবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা।  দেশে প্রশ্ন ফাঁসের কয়েকটি ঘটনা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘পাবলিক সার্ভিস কমিশনসহ দেশের প্রতিটি পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় প্রতিদিন পত্রিকায় নিউজ হচ্ছে। কিন্তু জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনে প্রশ্ন ফাঁসের কোনো অভিযোগ বা গুঞ্জন এখন পর্যন্ত আসেনি। সুতরাং স্বল্প বাজেটের মধ্যেও এই কমিশনের যে কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ তাদের দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে চলেছেন তা সকলের কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।’

এর আগে সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের সচিব পরেশ চন্দ্র শর্মা। কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে সভায় আরো বক্তব্য রাখেন জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচীর কান্ট্রি ডিরেক্টর সুদীপ্ত মুখার্জি, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের সদস্য বিচারপতি কামরুল ইসলাম সিদ্দিকী, বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহা পরিচালক বিচারপতি খোন্দকার মূসা খালেদ প্রমূখ।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn