সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগে ঐক্য, উজ্জীবিত নেতাকর্মী
সুনামগঞ্জে আ.লীগের বিবদমান নেতারা একজন আরেকজনের মুখ দেখাদেখি অনেকদিন ধরেই বন্ধ রেখেছিলেন। তবে সেই ধারা ভেঙে গিয়ে ‘এক মঞ্চে’ আসছেন তিন নেতা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ ইউনেস্কোর ‘মেমোরি অব দ্যা ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টারে’ অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে বিশ্বপ্রামাণ্য ঐতিহ্যের স্বীকৃতি লাভ করার আজ শনিবার জেলা প্রশাসন আয়োজিত আনন্দ অনুষ্ঠানে তারা একসঙ্গে উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গেছে। এদিকে শুক্রবার রাতে জেলা আ.লীগের তিন শীর্ষ নেতা প্রকাশ্যে বৈঠকও করেছেন। রাতেই বিষয়টি শহরে নানা আলোচনার সৃষ্টি করে। জেলা আ.লীগ বর্তমানে তিন ভাগে বিভক্ত। এক ভাগের নেতৃত্ব দিচ্ছেন জেলা আ.লীগের সভাপতি মতিউর রহমান এবং জেলা আ.লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুল হুদা মুকুট। অন্য দু’টি গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন আ.লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য এবং পৌর মেয়র আয়ূব বখত এবং জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক, জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক ব্যারিস্টার এম. এনামুল কবির ইমন। মতিউর রহমান, নুরুল হুদা মুকুট ও আয়ূব বখত জগলুল আগে এক গ্রুপে থাকলেও সম্প্রতি জগলুল এই বলয় থেকে বেরিয়ে গেছেন। তিনি নিজেই এখন আলাদা বলয়ের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। অন্যদিকে মতিউর রহমান ও নুরুল হুদা মুকুট আগের অবস্থান থেকেই দলীয় কর্মসূচি পালন করছেন। অন্যদিকে ব্যারিস্টার ইমনের গ্রুপের প্রতিটি কর্মসূচিতে প্রতিমন্ত্রী এবং জেলার সংসদ সদস্যদের উপস্থিত থাকতে দেখা যায়।
দলীয় সূত্র জানায়, এই চার নেতার তীব্র বিরোধ শুরু হয় গত জেলা পরিষদ নির্বাচন থেকে। নুরুল হুদা মুকুটকে নিয়ে মতিউর রহমান ও আয়ূব বখত জগলুল একপক্ষে ছিলেন। আর দলীয় সমর্থন নিয়ে তাদের প্রতিপক্ষ ছিলেন ব্যারিস্টার এম. এনামুল কবির ইমন। সম্প্রতি সুনামগঞ্জ-৪ (সদর-বিশ্বম্ভরপুর) আসনের মনোনয়নকে কেন্দ্র করে মতিউর-মুকুট বলয় থেকে বেরিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে বিরোধেও জড়িয়ে গেছেন আয়ূব বখত জগলুল। মতিউর রহমান ও আয়ূব বখত জগলুল দু’জনই জেলার গুরুত্বপূর্ণ এই আসনটিতে মনোনয়ন চান। আর সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনে এই আসনটিতে মনোনয়ন পেয়েছিলেন ব্যারিস্টার ইমন। তিনি এবারো মনোনয়ন প্রত্যাশী। মনোনয়নসহ নানা কারণে এই চার নেতাদের বিরোধিতার মধ্যেই আ.লীগ শিবিরে গুঞ্জন উঠেছে তীব্র প্রতিপক্ষ থাকলেও মতিউর রহমান, নুরুল হুদা মুকুট ও ব্যারিস্টার এম.এনামুল কবির ইমন এক মঞ্চে দাঁড়াচ্ছেন। এতদিন মুখ দেখাদেখি বন্ধ থাকলেও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চ-এর ঐতিহাসিক ভাষণ ইউনেস্কোর ‘মেমোরি অব দ্যা ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টারে’ এ অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে বিশ্বপ্রামাণ্য ঐতিহ্যের স্বীকৃতি লাভ করার আজ শনিবার জেলা প্রশাসনের আনন্দ শোভাযাত্রাসহ অন্যান্য আয়োজনে তাদের একসঙ্গে দেখা যেতে পারে। মতিউর রহমান, নুরুল হুদা মুকুট ও ব্যারিস্টার ইমন নিশ্চিত করেছেন উপস্থিত হওয়ার বিষয়টি।
এদিকে, শুক্রবার রাতে প্রকাশ্যে বৈঠক করেন মতিউর রহমান, নুরুল হুদা মুকুট ও ব্যারিস্টার এম. এনামুল কবির ইমন। শহরের হাজীপাড়াস্থ জেলা আ.লীগের সভাপতি মতিউর রহমানের বাসায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে দলীয় নেতা-কর্মীরাও উপস্থিত ছিলেন। তিন নেতাকে বৈঠকে হাস্যোজ্জ্বল দেখা যায়। নেতাকর্মীরা বলছেন, আগামীতে এই তিন নেতার নেতৃত্বেই আ.লীগকে শক্তিশালী হবে।
এদিকে পৌর আ.লীগের পক্ষ থেকে শনিবার বিকেলে একটি আনন্দ মিছিলের আয়োজন করা হয়েছে বলে জানা গেছে। মিছিলে নেতৃত্ব দেয়ার কথা রয়েছে আয়ূব বখত জগলুলের। জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুল হুদা মুকুট বলেন, যেহেতু এ প্রোগ্রামের আয়োজক সরকার সেহেতু আওয়ামী লীগের সকল নেতাকর্মীরা আমরা এ প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করবো। আওয়ামী লীগের সকল নেতারাই এ আয়োজনটিকে সফল করে তোলতে কর্মসূচিতে যোগ দেবেন। সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে আমরা প্রস্তুত’। জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম. এনামুল কবির ইমন বলেন, জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সরকারি অনুষ্ঠানে যাব। সেখানে জেলা আ.লীগের সভাপতিও থাকবেন। যদিও জেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছিল, কিন্তু আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জেলা আ.লীগ ঐক্যবদ্ধ। আমাদের মধ্যে কোন বিভেদ নেই। সবাই শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে কাজ করে যাচ্ছি। জেলা আ.লীগের সভাপতি মতিউর রহমান জানিয়েছেন, আ.লীগ দেশের একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল। দলীয় নেতৃবৃন্দ আমরা ঐক্যবদ্ধ। সবাই মিলেই দলকে শক্তিশালী করতে কাজ করে যাচ্ছি।