ঢাকা : ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে তৎকালীন বিডিআরের সদর দফতর পিলখানায় সংঘটিত বিদ্রোহের ঘটনায় সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে হত্যার মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে হাইকোর্ট বলেছেন, পিলখানা হত্যাকাণ্ড দেশের ইতিহাসের নৃশংসতা ঘটনা। সোমবার পূর্নাঙ্গ রায় পড়া শেষ হবে জানিয়েছেন বেঞ্চের বিচারপতি। এর মাধ্যমে রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা ও শান্তি বিনষ্টের যড়যন্ত্র করা হয়েছিল। উদ্দেশ্যে ছিলে সেনাবাহিনির চেইন অব কমান্ড ধ্বংস করা। বিডিআর ও সেনাবাহিনিকে সাংঘর্ষিক অবস্থায় নিয়ে যাওয়া। রবিবার বিচারপতি মো. শওকত হোসেনের নেতৃত্বাধীন ৩ সদস্যের বিশেষ বেঞ্চে মামলাটির রায়ে এ পর্যবেক্ষণ দেন। সকাল ১০টা ৫৫ মিনিটে মামলাটির রায় পড়া শুরু হয়। বেঞ্চের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার। রায়ে আদালত বলেন, পিলখানায় ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়েছে; এই যে হত্যাকাণ্ড, স্বাধীনতা যুদ্ধেও এত সেনা কর্মকর্তা নিহত হয়নি। এটা ছিল মাস কিলিং (গণহত্যা)। আমরা হারিয়েছি আমাদের সূর্য সন্তানদের। এটি আমাদের দেশের ফৌজদারী অপরাধের একটি ঐতিহাসিক মামলা। ৩০ ঘণ্টায় এত সেনা কর্মকর্তা হত্যা করা হয়েছে, যা পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন। রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করার জন্য একটি ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়। এই হত্যাকাণ্ডের শুধু বিচার করলেই হবে না, প্রতীয়মান হতে হবে ন্যায়বিচার হয়েছে। ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদর দফতরে রক্তাক্ত বিদ্রোহের এই ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন প্রাণ হারান।

‘আসামিদের দণ্ডের বিষয়ে তিন বিচারপতিই একমত’

নিউজ ডেস্ক:: অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, ২০০৯ সালে পিলখানা হত্যা মামলায় কয়জন আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকবে, কয়জন আসামির যাবজ্জীবন বহাল থাকবে, কতজন খালাস পাবেন-এসব দণ্ডের বিষয়ে তিন বিচারপতিই একমত হয়েছেন বলে আদালত জানিয়েছেন। পিলখানা হত্যা মামলার রায় নিয়ে রোববার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। সে সময় তিনি সাংবাদিকদের এ কথা জানান। আদালতের রায় ঘোষণা শুরু করার আগেই বিচারপতি মো. শওকত হোসেন উপস্থিত আইনজীবী ও সাংবাদিকদের জানান, ন্যাক্কারজনক ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় রায়ের বিষয়ে আমরা তিন বিচারপতি একমত। এর আগে সকাল ১০টা ৫৫ মিনিটে বিচারপতি মো. শওকত হোসেন, বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চে আপিলের রায় পড়া শুরু হয়। অ্যাটর্নি জেনারেল সাংবাদিকদের বলেন, এ মামলায় এক বছরেরও বেশি সময় ধরে শুনানি হয়েছে। আজ এ মামলার রায় পড়ছেন আদালত।

মাহবুবে আলম জানান, তিন সদস্যের বিচারপতির বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করছেন। নেতৃত্ব প্রদানকারী বিচারপতি মো. শওকত হোসেন প্রথমে রায় পড়া শুরু করেন। এরপর বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী তার পর্যবেক্ষণ পড়তে শুরু করেন। দুপুরের পর বেঞ্চের আরেক সদস্য বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার তার পর্যবেক্ষণ পড়বেন। পূর্ণাঙ্গ রায় যদি পড়া হয়, তাহলে সময় লাগতে পারে বলে জানান অ্যাটর্নি জেনারেল। তিনি বলেন, আজ হয়তো আসামিদের অর্ডার পোরশন (আদেশের অংশ) দেয়া হবে। আসামির চূড়ান্ত রায় হবে বলে মনে হয় না। যেসব আসামির দণ্ড বহাল থাকবে বা খালাস পাবেন, কী কারণে দণ্ড বহাল থাকল বা খালাস হলো, তার পর্যবেক্ষণ ও যুক্তি আদালত তুলে ধরবেন। এ রায় মোট কত পৃষ্ঠার, তা পূর্ণাঙ্গ রায় না হলে বলা যাবে না। এ মামলাটি পৃথিবীর ইতিহাসের উল্লেখযোগ্য একটি মামলা বলে উল্লেখ করেন অ্যাটর্নি জেনারেল।

২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় নারকীয় হত্যাযজ্ঞে ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন প্রাণ হারান। আসামিসংখ্যার দিক থেকে এটি দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় মামলা। এ হত্যা মামলায় ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর বিচারিক আদালত রায় দিয়েছিলেন। এ মামলায় আসামি ছিলেন ৮৫০ জন। সাজা হয় ৫৬৮ জনের। তাদের মধ্যে বিচারিক আদালতের রায়ে ১৫২ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড, ১৬০ আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, ২৫৬ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড হয়েছিল। খালাস পেয়েছিলেন ২৭৭ জন। এরপর আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) হাইকোর্টে আসে। সাজার রায়ের বিরুদ্ধে দণ্ডিতরা জেল আপিল ও আপিল করেন। আর ৬৯ জনকে খালাসের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করে। এসবের ওপর ২০১৫ সালের ১৮ জানুয়ারি হাইকোর্টে শুনানি শুরু হয়, শেষ হয় ৩৭০তম দিনে গত ১৩ এপ্রিল। সেদিন শুনানি শেষে আদালত মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখেন। এরপর হাইকোর্ট রায়ের জন্য ২৬ নভেম্বর দিন ধার্য করেন।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn