ছাতকের সামাদে’র জঙ্গি হবার কাহিনী
জানা যায়, সিলেট পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে পড়াকালীন ওই প্রতিষ্ঠানের তৎকালীন শিবির সভাপতি মাহবুব আহমদের সাথে প্রতিভা হলে থাকতো সামাদ। প্রায় দেড় বছরের মতো ছিল সেখানে। পরে সিলেট নগরীর মিরাবাজারে মৌসুমী ১২০নং বাসায় ছোট ভাই সুলেমান আহমদকে নিয়ে ভাড়া ওঠে সে। লিডিং ইউনিভার্সিটির সিএসই বিভাগের ছাত্র মামুনও থাকতো তাদের সাথে। মামুনের সাথে সখ্যতা ছিল সামাদের। আবদুস সামাদের ছোট ভাই সুলেমান আহমদ বলেন, ‘সামাদ ও মামুন বাসায় একইসাথে টিভি দেখতো, দুজনই ছিল মুক্তমনা। হঠাৎ করে পরিবর্তন আসে মামুনের মধ্যে। টিভি দেখা বন্ধ করে সে মনোযোগী হয় ধর্মকর্মে। কিছুদিন পরেই একই পরিবর্তন দেখা যায় সামাদের মধ্যেও।’ সুলেমানের দাবি, প্রথমদিকে এই পরিবর্তন তাদের কাছে খুব অস্বাভাবিক মনে হয়নি। কিন্তু চলতি বছরের শুরুর দিকে জঙ্গি তৎপরতার অভিযোগে মামুন আটক হওয়ার পর সামাদের পরিবর্তন নিয়ে তাদের মধ্যে শঙ্কা দেখা দেয়। কিন্তু সে সময় সামাদের সাথে তাদের যোগাযোগের কোন সুযোগও ছিল না। এর আগেই পরিবার থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছিল সামাদ। সুলেমানের আরো দাবি করেন, তার ভাইয়ের পরিবর্তন মামুনের হাত ধরেই হয়েছে। মামুনই সামাদকে বিপথে নিয়েছে।
সুলেমান জানান, চলতি বছরের শুরুর দিকে মামুনকে সিলেট শহরতলির মেজরটিলাস্থ একটি বাসা থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেফতার করে। কয়েক মাস পর সে জামিনে বেরিয়ে কাতার পালিয়ে যায়। সুলেমান আহমদ জানান, সর্বশেষ ২০১৫ সালে বাড়িতে এসেছিল সামাদ। বাড়ি থেকে যাওয়ার পর থেকে তার ফেসবুকের আইডিটিও ডিঅ্যাক্টিভেট করে রাখে সে। এরপর একবারই ফোনে মায়ের সাথে কথা বলেছিল সামাদ। আবদুস সামাদের মা আছিয়া বেগম বলেন, ‘প্রায় দুই বছর আগে একদিন ফোন করেছিল সামাদ। উচ্চশিক্ষার্থে সে বিদেশ যাচ্ছে এ কথা বলেই ফোন রেখে দেয় সে। এরপর ওই নাম্বারে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।’ আছিয়া বেগম বলেন, ‘বারো সন্তানের মধ্যে সামাদ ছিল সপ্তম। ছোটবেলা থেকেই সামাদ খুব মেধাবী ছিল। ইঞ্জিনিয়ার বানানো স্বপ্ন নিয়ে তাকে পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে পাঠানো হয়েছিল। বিপথগামী হয়ে সে শুধু নিজের নয়, পুরো পরিবারের স্বপ্ন ভেঙে দিয়েছে।’ কান্নাজড়িত কণ্ঠে আছিয়া বেগম বলেন, ‘ছেলে আমার চোখের সামনে ছিল না। আমার কাছে থাকলে হয়তো ওই পথে যেতো না।’ সুনামগঞ্জের সহকারি পুলিশ সুপার মো. হাবিবুল্লাহ বলেন, ‘কলকাতায় আটকের খবর পাওয়ার পর সামাদ সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। প্রাথমিক তদন্তে প্রমাণ পাওয়া গেছে, সুনামগঞ্জে থাকা অবস্থায় সে জঙ্গি তৎপরতার সাথে জড়িত ছিল না। সিলেটে অথবা ডুয়েটে পড়াশোনা করার সময়ই সে জঙ্গি নেটওয়ার্কে যুক্ত হয়।