ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হল প্রশাসন ও ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কৃত প্রায় দেড় ডজন কর্মীকে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে পদ দিয়েছে ছাত্রলীগ। সদ্য ঘোষিত বিশ্ববিদ্যালয় হল কমিটি গুলোর শাখায় তাদের গুরুত্বপূর্ণ পদ দেয়া হয়েছে।  এসব কর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে হল প্রাধ্যক্ষের কক্ষ ভাঙচুর, দলের অন্যপক্ষের গ্রুপে হামলা করে আহত করা, সাধারণ শিক্ষার্থীর অস্ত্রপচারের জায়গায় লাথি দেয়া এবং সাংবাদিক পেটানোর সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে বহিষ্কার হয়েছিল। এ সব অপকর্ম করার পরও তাদের বহিষ্কারাদেশ তুলে নিয়ে দলের গুরুত্বপূর্ণ পদ দেয়া হয়েছে।  গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ ১৮টি হলের সভাপতি সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা দিয়ে অপূণার্ঙ্গ কমিটি ঘোষণা করে। আর সর্বশেষ গত ১৭ নভেম্বর স্যার এ এফ রহমান হল শাখা কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার মাধ্যমে সব হল কমিটিগুলো পূর্ণাঙ্গ হয়।  হল কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে এতো দীর্ঘ সময় কেনো এমন প্রশ্নের জবাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আবিদ আল হাসান বলেন, ‘যাচাই-বাছাইয়ের কাজে সময় লেগেছে।’ কিন্তু যাচাই-বাছাই করে বহিষ্কৃতদেরই কেনো বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে পদ দেয়া হলো সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।  চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদুল্লাহ হলে সিট দখলকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আটজন আহত হয়। এই ঘটনায় ছাত্রলীগ হতে পাঁচজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। কিন্তু গত ১১ নভেম্বর বহিষ্কৃত পাঁচজনের মধ্যে চারজনের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে তাদেরকে হলের গুরুত্বপূর্ণ পদ দেয়া হয়। তারা হলেন- যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদপ্রাপ্ত রসায়ন বিভাগের মো. শহীদুল ইসলাম, মৎস্য বিজ্ঞান বিভাগের নাঈম মাহমুদ এবং দুর্যোগ ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের সরকার মো. নকীবুল ইসলাম। এ ছাড়া বহিষ্কার হওয়া গণিত বিভাগের শরীফ আহমেদ মুনিম উপপ্রচার সম্পাদকের পদ পেয়েছেন।
১ ফেব্রুয়ারি জসীমউদদীন হলে গেস্টরুম (হলের অতিথি কক্ষে রাজনৈতিক নিয়ম-কানুন শেখানো) না করার অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের এক শিক্ষার্থীকে অস্ত্রপচারের জায়গা লাথি দিয়ে মারাত্মক আহত করা হয়। এই ঘটনায় হল প্রশাসন দুই ছাত্রকে হল থেকে আজীবন বহিষ্কার ও তিন শিক্ষার্থীকে দুই বছরের জন্য বহিষ্কার করে।  সেই বহিষ্কৃত দর্শন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. তুহিন মাহমুদকে শিক্ষা ও পাঠচক্র বিষয়ক সম্পাদক, সমাজ কল্যাণ বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের আবুল হোসেনকে পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক ও তথ্য বিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী সোহাগ দেওয়ানকে প্রচার সম্পাদকের পদ দেয়া হয়েছে।
বছরের ১৩ মার্চ দিবাগত রাতে বিজয় একাত্তর হল দখল করতে রাতভর তাণ্ডব চালায় হল শাখা ছাত্রলীগ। এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ তদন্ত করে হল প্রশাসন আট ছাত্রলীগ কর্মীকে হল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করে। ঘটনার অন্যতম হোতা ও হল থেকে বহিষ্কৃত কর্মী আবু ইঊনূসকে বিজয় একাত্তর হল শাখা ছাত্রলীগের এক নম্বর সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়েছে।  একই রাতে ইউএনবি এর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি ইমরান হোসাইনকে পিটিয়ে অজ্ঞান করে কয়েকজন ছাত্রলীগকর্মী। এই ঘটনায় বহিষ্কার হওয়া সালাউদ্দিনকে মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক ও মাহফুজকে হলের উপসম্পাদকের পদ দেয়া হয়েছে।  বছরের ৬ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের এফ রহমান হলে শ্রীলঙ্কা -বাংলাদেশের মধ্যকার টি-টোয়েন্টি খেলাকে কেন্দ্র করে  দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়ায় হল শাখা সভাপতি হাফিজুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক তুষার এর গ্রুপ।  এই ঘটনায় পাঁচজন জখম হয়। ছাত্রলীগ এই ঘটনায় ১১ জনকে বহিষ্কার করে। কিন্তু বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে রাজু আহমেদ, মনজুর আহমেদ রানা  ও সালাউদ্দিন আহমেদ সাজুকে সাংগঠনিক সম্পাদক, রাশেদ রাজন, সাদ্দাম হোসেন ও  আপেল মাহমুদকে  সহ সভাপতির পদ দেয়া হয়েছে।  বহিষ্কৃতদের পদ পাওয়া প্রসঙ্গে ছাত্রলীগের হাতে মারধরের স্বীকার হওয়া এক ভুক্তভোগী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, অপরাধ করার পরও যথাযথ শাস্তি না দিয়ে তাদের গুরুত্বপূর্ণ পদ দেয়া হলো। এতে তারা এই ধরনের কাজে উৎসাহী হবে।
এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষক বলেন, ‘অপরাধীরা উপযুক্ত শাস্তি পাওয়ার পরিবর্তে যদি পুরষ্কৃত হয় তাহলে তাদের সেই অপরাধকর্ম পুনরায় করার প্রবণতা থাকে।’ বহিষ্কৃতদের পদ দেয়ার বিষয়ে ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আবিদ আল হাসান বলেন, তাদেরকে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে পদ দেয়া হয়েছে। তা ছাড়া ভুলের জন্য জন্য আজীবন বহিষ্কার থাকাটাও কেমন হয়?  অনাকাঙ্খিত ঘটনায় জড়িতদের পদ দিলে তারা পুনরায় একই রকম কাজ করতে উৎসাহী হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জাকির হুসাইন বলেন, আমরা সংশোধনের জন্যই শাস্তি দেই। আমরা মনে করি- ভুল সংশোধনের জন্য মানুষের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়া উচিৎ।
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn