মিয়ানমারকে মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার আহ্বান পোপের
মিয়ানমারে ন্যায়বিচার ও মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর আহবান জানিয়েছেন পোপ ফ্রান্সিস। আজ তিনি বহুল প্রতীক্ষিত বৈঠকে বসেন মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সুচির সঙ্গে। এর পর বৈঠক সম্পর্কে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন তিনি। তবে বিশ্ববাসী যে বিষয়টিতে গভীর আগ্রহের সঙ্গে লক্ষ্য রাখছিলেন সেই ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি তিনি বৈঠকে উল্লেখ করেন নি। কিন্তু প্রতিটি জাতিগোষ্ঠী এবং তাদের পরিচয়কে সম্মান জানানোর আহবান জানিয়েছেন। তিনি আরো বলেছেন, মিয়ানমারে গৃহযুদ্ধ এবং পারস্পরিক শত্রুতা দীর্ঘদিনের।এর ফলে সৃষ্টি হয়েছে গভীর বিভক্তির। পোপ বলেন, ধর্মীয় মতপার্থক্যই হলো বিভক্তি এবং অবিশ্বাসের মূল। ধর্ম হওয়া উচিত ঐক্য, ক্ষমাশীলতা, সহনশীলতা ও বিচক্ষণতার মাধ্যমে। উল্লেখ্য, ২৫শে আগস্ট সহিংসতা শুরুর পর কমপক্ষে ৬ লাখ ২৪ হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম জীবন বাঁচাতে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। তাদের ওপর চালানো নৃশংসতাকে জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো জাতি নিধন হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। এই নিন্দার সঙ্গে একাত্ম হয়েছিলেন পোপ ফ্রান্সিস। এর আগে তিনি বিভিন্ন সময়ে রোহিঙ্গা শব্দটি উল্লেখ করেছেন। ধারণা করা হচ্ছিল সুচির সঙ্গে বৈঠকে তিনি রোহিঙ্গা ইস্যুটি উত্থাপন করবেন। তবে বৈঠকের আগে রোহিঙ্গা শব্দটি ব্যবহার না করার জন্য তাকে পরামর্শ দিয়েছিলেন উপদেষ্টারা। বলা হয়েছিল, যদি তিনি রোহিঙ্গা শব্দটি উচ্চারণ করেন তাহলে ক্ষুব্ধ হতে পারে মিয়ানমারের সেনা কর্তৃপক্ষ ও অং সমান সুচির সরকার। আর যদি তা-ই হয়, তাহলে মিয়ানমারে বসবাসকারী সংখ্যালঘু খ্রিষ্টান সম্প্রদায় ঝুঁকিতে পড়বে। দৃশ্যত উপদেষ্টাদের সেই কথা রেখেছেন পোপ ফ্রান্সিস। তিনি সুচির সঙ্গে বৈঠকে একবারের জন্যেও রোহিঙ্গা শব্দ মুখে আনেন নি। এর আগে রোহিঙ্গা সঙ্কটকে অং সান সুচি ‘একটি চ্যালেঞ্জ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, এই চ্যালেঞ্জটি বিশ্ববাসীর মনোযোগ আকৃষ্ট করেছে। এবার তিনি বললেন, তার লক্ষ্য হলো বহুত্বদের সৌন্দর্যকে বের করে আনা। আর তা হবে অধিকার সুরক্ষিত করে, সহনশীলতাকে বিকশিত করে ও সবার জন্যে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মাধ্যমে। তিনি আরো বলেন, যখন আমরা দীর্ঘদিনের ইস্যু নিয়ে কথা বলছি, তার মধ্যে রয়েছে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ইস্যু। এসব ইস্যু আমাদের পারস্পরিক বিশ্বাস, বোঝাপড়া, সম্প্রীতি ও সহযোগিতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। আর এসব জিনিস বিদ্যমান রাখাইনে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে। যেসব মানুষ আমাদের সফলতা দেখতে চান, তাদের সমর্থন আমাদের কাছে অমূল্য। এর আগে মঙ্গলবার পোপ ফ্রান্সিস বৌদ্ধ প্রধান দেশটির বিভিন্ন ধর্মের নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় তিনি বৈচিত্র্যময় একতার আহবান জানান। এই বৈঠকেও তিনি রাখাইন সহিংসতায় বাংলাদেশে পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গাদের বিষয়টি উল্লেখ করেন নি। মিয়ানমার সফর শেষে রোমান ক্যাথলিক চার্চের এই পোপ বাংলাদেশে আসবেন। বৌদ্ধ, ইসলাম, হিন্দু, ইহুদি ও খ্রিস্টান ধর্মীয় নেতাদের উদ্দেশ্যে পোপ বলেন, বৈচিত্র থেকেই সবসময় একতার সৃষ্টি হয়। ভ্যাটিকানের দাপ্তরিক সূত্রে জানা গেছে, ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে এই বৈঠক ৪০ মিনিট স্থায়ী হয়। পোপ বলেন, সকলেরই স্বতন্ত্র মূল্যবোধ রয়েছে। সব ধর্মেরই নিজস্ব ঐতিহ্য রয়েছে। মতপার্থক্য থাকলেও সব ধর্মই সমৃদ্ধ। শান্তিতে থাকলেই শুধু আমরা এই বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারি। পোপের সঙ্গে বৈঠকে অংশগ্রহণকারী মুসলিম নেতা আয়ে লিউয়িন বলেন, মিয়ানমারের রাজনৈতিক নেতাদের প্রতি ইসলাম রক্ষা করার আহবান জানানোর জন্য পোপকে অনুরোধ করেছেন তিনি। মিয়ানমারের ৫১ মিলিয়ন জনসংখ্যার মধ্যে মাত্র ৭ লাখ মানুষ রোমান ক্যাথলিক ধর্মের অনুসারী।