মন্তব্য প্রতিবেদনঃ জয়া সেনে’র স্বস্তি বিদ্রোহীদের হতাশা
সুজাত মনসুর-
সুনামগঞ্জ আওয়ামী লীগের নতুন মেরুকরনের ফলে মোটামুটি স্বস্তিই পেল দিরাই-শাল্লার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আগামী নির্বাচনে জয়া সেনগুপ্ত নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করলে দিরা্ই-শাল্লার আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী গ্রুপ নেতৃত্ব শুন্যতায় পড়বে। কেননা, বিদ্রোহী গ্রুপের নেতা, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমান সুনামগঞ্জ-৪ থেকে নির্বাচন করার ঘোষণা ও জেলা কমিটির সম্পাদকের সাথে সম্পর্কোন্নয়নের ফলে স্বাভাবিক কারনেই জয়া সেনগুপ্তের নেতৃত্বাধীন উপজেলাগুলোতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জন্য কিছুটা হলেও স্বস্তি বিষয় ও বিদ্রোহীদের জন্য হতাশার কারণ। যদিও দিরাই-শাল্লা আওয়ামী লীগের বর্তমান বিদ্রোহী গ্রুপের তেমন কোন প্রভাব-প্রতিপত্তি নেই। তাদের সর্বশেষ অবলম্বন ছিলেন মতিউর রহমান।
সর্বশষ বলছি একারনে যে, বাবু সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ১৯৯৪ সালে আওয়ামী লীগে যোগদানের আগে যারা মূলতঃ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ছিলেন তারা আজ কেউই নেতৃত্বে নেই। কেউ কেউ মারা গিয়েছেন, কেউবা দলত্যাগ করে অন্যদল হয়ে রাজনীতি থেকে বিদায় নিয়েছেন। কেউবা অন্যদলে ভিড়ে গিয়ে এখনো রাজনীতিতে সক্রিয় আছেন। এরফলে বাবু সেনগুপ্তের ইচ্ছের জয় হয়েছে। তিনি তাঁর মত করে দলকে সাজাতে পেরেছেন। যার উত্তরাধিকার এখন ভোগ করছেন তাঁর স্ত্রী জয়া সেনগুপ্ত। এককথা বলা যায় আজকে যারা দিরাই-শাল্লায় আওয়ামী লীগের কর্ণধার তারা সবাই বহিরাগত রোহিঙ্গা। দিরাই-শাল্লার আওয়ামী লীগের জন্মের ইতিহাসের সাথে এবং পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ পুনর্গঠনের সাথে তাদের কোন যোগসুত্র ছিল না। সর্বশেষ যাকে ঝেটিয়ে বিদায় করা হয়েছে তিনি হলেন আলতাফ উদ্দিন বিএ, সাবেক সভাপতি, দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগ। তিনি অবশ্য তার কর্মফল ভোগ করছেন। এই কর্মফল আরেকজন ভোগ করে এখন পরপারে, দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম সরদার। বিস্তারিত ব্যাখ্যায় পরে আসছি।
আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা দিরাই উপজেলায়। রাজনৈতিক জীবনের অধিকাংশ সময়ই কাটিয়েছি দিরাইতে। তাই দিরাই আওয়ামী লীগের জন্মের ইতিহাসের সাথে যারা জড়িত ছিলেন ও পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগকে পুনর্গঠিত করতে ভুমিকা রয়েছেন তাদের সান্নিধ্যে আসা ও কাজ করার সুযোগ হয়েছে। দিরাই-শাল্লায় আওয়ামী লীগের মূলতঃ গোড়াপত্তন ঘটে ষাটের দশকের শেষভাগ থেকে সত্তরের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে। যারা এই গঠন প্রক্রিয়ায় ভুমিকা রাখেন ও পরবর্তীতে নেতৃত্ব দেন তাঁদের মধ্যে হলেন চন্ডিপুরের নেজাবত উল্যা, আউয়াল মিয়া, আব্দুল কুদ্দুস, ইর্শাদ মিয়া সরদার, আব্দুল হাশিম, আব্দুর রউফ মিয়া, আলতাব উদ্দিন বিএ, জগদলের আব্দুল হক চেয়ারম্যান, মাহতাবুর রহমান, ডাঃ ইসহাক মিয়া, ফয়জুর রহমান মাস্টার, সাকিতপুরের ওয়াকিব মিয়া, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুন্নুর মাস্টার, দিরাই দুওজের ক্ষিতিশ চন্দ্র নাগ, রনদা প্রসাদ রায় চৌধুরী, চরনারচরের নিশি চৌধুরী, ভাটিপাড়ার বাসন মিয়া, শাল্লার মান্নান চৌধুরী, অলিউর রহমান এবং বর্তমান সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমান, সিরাজুল ইসলাম প্রমুখ। পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে যারা বেশি ভুমিকা রাখেন তারা হলেন ক্ষিতিশ চন্দ্র নাগ, আব্দুল কুদ্দুস, আলতাব উদ্দিন বিএ(৭৯ সালের পর নিষ্ক্রিয় ও পরে দলত্যাগ), মাহতাবুর রহমান, সিরাজুল ইসলাম সরদার. তুলসীদাশ রায়, শাল্লার মান্নান চৌধুরী, অলিউর রহমান প্রমুখ। কিন্তু ১৯৭৯ সালে আব্দুস সামাদ আজাদ দিরাই-শাল্লা থেকে নির্বাচন না করা, দিরাই আওয়ামী লীগের প্রাণপুরুষ বলে পরিচিত আব্দুল কুদ্দুসের জার্মানীতে পাড়ি জমানো এবং ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে কতিপয় নেতার কাংখিত পদ না পাবার কারনে প্রথমে নিষ্ক্রিয় ও পরে দলত্যাগ করায় দিরাই আওয়ামী লীগ মূলতঃ অনেকটাই নেতৃত্ব শুন্য হয়ে পড়ে। যদিও সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম দলকে শক্তিশালী কাঠামোর উপর দাঁড় করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। পরে জনাব আব্দুল কুদ্দুস জার্মান থেকে ফিরে এলে আবার দিরাইতে আওয়ামী লীগে প্রাণ সঞ্চার হয়। কিন্তু দুই কর্ণধার আব্দুল কুদ্দুস আর সিরাজুল ইসলামের মধ্যে নেতৃত্বের টানা-পোড়ন চলতেই থাকে। নেতৃত্বের এই দ্বন্ধকেই পরবর্তীতে কাজে লাগান বাবু সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত দিরাই-শাল্লার আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে নিজের লোকদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায়।