আওয়ামী লীগে সংঘর্ষ, গুলিবিদ্ধ ১৫
হাতিয়া: হাতিয়ায় আওয়ামী লীগের দু পক্ষের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ায় গুলিবিদ্ধ ১৫ এবং আহত ৩০ জন হয়েছে। নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলায় জাহাজমারা ইউনিয়ন পরিষদের সামনে শনিবার রাত ৯টার সময় এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে জাহাজমারা ইউনিয়নের স্থানীয় যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দের নেতাকর্মীরা ১৭ মার্চ আলোচনা সভা, র্যালি ও মিলাদ মাহফিলের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শেষ করে। ১৮ মার্চ উদ্দেশ্যমূলকভাবে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনকে কেন্দ্র করে স্থানীয় সংসদ সদস্যের স্বামী মোহাম্মদ আলীর সমর্থিত ইউপি চেয়ারম্যান অ্যাড. মাছুম বিল্ল্যাহর নেতাকর্মী রহমত, মনু মাঝি, লিমন, বেচু, জাফর, এমরান মাঝি, নেছার উদ্দিন, ফরিদ উদ্দিন ও শুক্কুরসহ শতাধিক লোকজন একত্রিত হয়। পরে রাত ৯টার সময় স্থানীয় জাহাজমারা বাজারের পূর্বপাশ থেকে মিছিলের র্যালী নিয়ে ইউপি পরিষদের সামনে গিয়ে সাবেক চেয়ারম্যান এটিএম সিরাজ উদ্দিন ও নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগ নেতা আমিরুল ইসলাম আমিরের নামে অশালীন বাক্যে স্লোগান দেয়। এ সময় স্থানীয় লোকজন এসে তাদের বাধা দেয়ার চেষ্টা করে। পরে তাদের সঙ্গে মিছিলকারীদের কথা কাটাকাটি হয়।
খবর পেয়ে সাবেক চেয়ারম্যান এটিএম সিরাজ উদ্দিন ও নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক আমিরুল ইসলাম আমিরের সমর্থিত স্থানীয় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা কর্মীরা মিছিলকারীদের চলে যেতে বলে। এতে মিছিলকারীরা ক্ষিপ্ত হয়ে স্থানীয় লোকজন, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের উপর হামলা চালায়। একপর্যায়ে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া শুরু হয়।
হাতিয়া পুলিশ প্রশাসন খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ করতে শতাধিক রাবার বুলেট, টিয়ারশেল ও ফাঁকা গুলি ছুড়ে। স্থানীয় প্রশাসনের গুলি ছোড়ার সুযোগে চেয়ারম্যান মাসুম বিল্লাহ সমর্থিত সন্ত্রাসীরাও স্থানীয় যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের উপর ছড়রা গুলি ছুড়ে। এতে ঘটনাস্থলে ১৫ জন গুলিবিদ্ধ হয় ও ৩০ জন আহত হয়।
গুলিবিদ্ধরা হলেন- ওমর ফারুক (৩০), আরিফ উদ্দিন (২০), স্বপন উদ্দিন (৩৫), রিয়াজ উদ্দিন (২৮), দিদার উদ্দীন (২৭), মিরাজ উদ্দিন (২৭), জহির উদ্দিন (২৮), কপি দালাল (৪৪), বাবুল উদ্দিন (২৩), শরিফ উদ্দিন (৪৫), নেছার উদ্দিন (৪৭), সৈকত হোসেন (২৮) সহ ১৫ জন গুলিবিদ্ধ হয়। আহত হয় আরও ৩০ জন। রোববার সকালে গুলিবিদ্ধ নেতাকর্মীদের উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে ভর্তি করানো হয়।
এ ব্যাপারে হাতিয়া থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল মজিদ জানান, আমি অফিসের কাজে নোয়াখালী সদরে আছি। ঘটনাস্থলে ওসি তদন্ত জাকির আছেন। তিনি পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে নেয়ার চেষ্টা করছেন। আমি স্টেশনে থাকলে আজকে কোনোমিছিল করার অনুমতি দিতাম না। কারণ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে সকল কর্মসূচি ১৭ তারিখে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ পালন করে ফেলেছে।
এদিকে নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক আমিরুল ইসলাম আমির জানান, শনিবারের ঘটনাটি স্থানীয় সংসদ সদস্যের স্বামী আয়েশা ফেরদৌসের স্বামী মোহাম্মদ আলীর সন্ত্রাসীরা উদ্দেশ্যমূলকভাবে ঘটিয়েছে। তারা সাংগঠনিক কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয়। শনিবার রাতে মোহাম্মদ আলীর সন্ত্রাসীদের হামলায় আমার ১৫ জন ছাত্রলীগ, যুবলীগের নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছে এবং ৩০ জনের মতো গুরুতর আহত হয়েছে। আমি বিষয়টি সাংগঠনিক ও প্রশাসনিক ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আমি এ হামলার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক ওয়ালিউল্যাহ জানান, বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষ্যে স্থানীয় আওয়ামী লীগের কর্মসূচি ১৭ তারিখ শেষ হয়ে গেছে। আজকে যারা গণ্ডগোল করেছে তারা সন্ত্রাসী, তারা আওয়ামী লীগের কোনো পদ পদবীতে নেই। প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন আহমেদ জানান, রাতে যারা জাহাজমারা ইউনিয়নে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করেছে তারা আওয়ামী লীগের কোনো অঙ্গসংগঠনে জড়িত নয়। তারা স্থানীয় সংসদ সদস্য আয়েশা ফেরদৌসের স্বামী মোহাম্মদ আলীর পালিত সন্ত্রাসী বাহিনী। তাদের গুলিতে স্থানীয় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের প্রায় ১৫ জন নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছে এবং ৩০ জনের মতো আহত হয়েছে।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে সব কর্মসূচি ১৭ মার্চ সম্পন্ন করেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে তারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে আমি মনে করি। স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ থাকবে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যেন আইনানুগ ব্যবস্থা নেবেন। এই রিপোর্টটি লেখা পর্যন্ত আহতদের পক্ষথেকে মামলা করার প্রস্তুতি চলছে বলে জানা যায়।