সরকারের পায়ের নিচে মাটি নেই: মির্জা আলমগীর
ঢাকা : নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া অন্য কোনো উপায়ে নির্বাচন মেনে নেয়া হবে না মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে এতো ভয় পান কেনো? কারণ আপনারা জেনে গেছেন যে, আপনাদের পায়ের নিচে মাটি নেই, জনগণের সমর্থন নেই। ভোট যদি নিরপেক্ষ হয় তাহলে আপনাদের কোনো অস্তিত্ব থাকবে না। যতই অত্যাচার করবেন, যতই নির্যাতন করবেন ততই স্বাধীনতাকামী মানুষ আরো শক্তিশালী হবে। হাঙ্কি পাঙ্কি করে লাভ নেই।বুধবার বিকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) ‘সাগর-রুনি’ মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। নব্বইয়ের ডাকসু ও সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের উদ্যোগে ৬ ডিসেম্বর স্বৈরশাসক এইচএম এরশাদের পতন দিবস উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়। দিবসটিকে বিএনপি ‘স্বৈরাচারের পতন ও গণতন্ত্র মুক্তি দিবস’ হিসেবে পালন করে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এদেশের মানুষ নির্বাচন চায়, কিন্তু সেই নির্বাচন হবে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে, নিরপেক্ষ ইসির মাধ্যমে। এখানে অন্য কোনো হাঙ্কি-পাঙ্কি করে লাভ হবে না। এই দেশের মানুষ সেটাকে মেনে নেবে না, গ্রহণও করবে না। দেশে এবং দেশের বাইরে কোথায়ও তা গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। তাই এখনো সময় আছে কথা বলুন, আলোচনা করুন। আলোচনা ছাড়া, কথা বলা ছাড়া গণতন্ত্রকে কখনো সফল করা যায় না। আলোচনার মাধ্যমে আমরা নিশ্চয় একটা পথ বের করতে পারবো, যা জনগণের আকাঙ্খাকে পূরণ করবে। ক্ষমতাসীনদের উদ্দেশে তিনি বলেন, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। আপনারা যখন ‘৯৬-তে তত্ত্বাবধায়ক সরকার চেয়েছেন তখন কি তা সংবিধানে ছিলো? কিন্তু আমরা মেনে নিয়েছিলাম। এই সরকার ব্যবস্থার অধীনে নির্বাচনে আমরা দু’বার, আপনারা একবার সরকার গঠন করেছিলেন। তাহলে সমস্যাটা কোথায় ছিলো? আপনারা জেনে গেছেন যে, পায়ের নিচে মাটি নাই, জনসমর্থন নাই। যদি নিরেপক্ষ ভোট হয় তাহলে আপনাদের কোনো অস্তিত্ব থাকবে না। সেজন্যই নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে এতো ভয়। কিন্তু আমরা সংঘর্ষ সংঘাত চাই না। আমরা জনগণের মতামত প্রকাশের অধিকার চাই।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মির্জা আলমগীর বলেন, দেশের সামনে বিরাট সঙ্কট। এতো বড় সঙ্কট আর আসেনি। আমাদের স্বাধীনতা, স্বার্বভৌমত্ব বিপন্ন, গণতন্ত্র বিপন্ন। মানুষের নিরাপত্তা নাই। আজকে যদি সবাই ঐক্যবদ্ধ না হই, একজোট হয়ে অপশাসন-দু:শাসনকে পরাজিত করতে না পারি, আমাদের কোনো অস্তিত্ব থাকবে না। তাই অুনরোধ জানাতে চাই- আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়া, তারেক রহমানের দিকে তাকিয়ে, জনগণের দিকে তাকিয়ে সমস্ত দ্বিধা ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে অধিকার আদায়ের জন্য কাজ করা এবং সরকারকে বাধ্য করা নির্বাচন দিতে। সরকার বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে কোর্টে নিয়ে হেনস্তা করছেন অভিযোগ করে তিনি বলেন, কাকে ভয় দেখাচ্ছেন? খালেদা জিয়াকে? যিনি নয় বছর স্বৈরাচারের সাথে কোনো আপোস করেননি। ফখরুদ্দিন-মঈনুদ্দিনের সাথে কোনো আপোস করেননি। আপোস করলে এতোদিন প্রধানমন্ত্রী থাকতেন। যতই অত্যাচার নির্যাতন করবেন ততই জনগণের প্রতিরোধ আরো শক্তিশালী হবে।
নব্বইয়ের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের কথা তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ওই আন্দোলন আমাদের রাজনৈতিক জীবনে অনেক গভীর দাগ কেটেছিলো। দুর্ভাগ্য আমাদের, তখন যে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে মানুষ বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছে, সেই স্বৈরাচারের পতন হয়নি। স্বৈরাচার এরশাদ নিজে টিকে আছেন, সেইসাথে তাদের দোসর আওয়ামী লীগকে টিকে থাকতে সহায়তা করছে। এখানে স্বৈরাচার আর ফ্যাসিবাদী স্বৈরাচার এক হয়েছে। তারা এক হয়ে গণতন্ত্রেকে পায়ের তলায় পিষে মারার চেষ্টা করছে। আজকে নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানকে যদি সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করতে পারি তাহলে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ভবিষ্যত পথ নির্ধারণ করা অনেক সহজ হবে। এখনকার পরিপ্রেক্ষিতে নব্বইয়ের মূল বিষয়গুলোকে সামনে নিয়ে এগোতে পারলে সাফল্য অবশ্যম্ভাবী।
সরকারের সমালোচনা করে মির্জা আলমগীর বলেন, নব্বই সালে যে ছাত্র গণঅভ্যুত্থান হয়েছিলো, এই স্বৈরাচার এরশাদ এতো খারাপ ছিলো না। কমপক্ষে তাদের একটা মূল্যবোধ-সৌজন্যবোধ ছিলো যে আমি একটা জনসমাবেশের মধ্যে গুলি চালাবো না। এটার জন্যে পতনের দিনই সন্ধ্যায় তাদের লোকজন চলে গিয়েছিলো, পদত্যাগ করেছিলো। আপনারা এই কয়েক বছরের মধ্যে কতজন মানুষ মেরেছেন হিসাব করেন। কতজন মায়ের বুক খালি করেছে, কতজন স্ত্রীর বুক খালি করে দিয়েছেন, সন্তানকে এতিম করে দিয়েছেন। এটা হিসাব করলে আপনারা খুঁজে পাবেন না। কারাগারে কারাগারে রুদ্ধ আমার ভাইয়েরা। আজকে এমন একটা জেলা নেই, উপজেলা নেই যেখানে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা নেই। সদ্য নিখোঁজ হওয়া সাবেক রাষ্ট্রদূত এম মারুফ জামানের প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, পত্রিকায় এসেছে, একজন সাবেক রাষ্ট্রদূত কাল (মঙ্গলবার) থেকে নাই। এই গায়েব শুরু করেছেন আপনারা, এই গায়েব শুরু করেছেন গত ৬/৭ বছর ধরে। একে একে আমাদের সংসদ সদস্যদের গায়েব করেছেন, কমিশনারকে গায়েব করেছেন, বুদ্ধিজীবীকে গায়েব করেছেন, শিক্ষককে গায়েব করেছেন, ছাত্র নেতা-যুব নেতাদের গায়েব করেছেন। এদেশে এখন আর কেউ নিরাপদ নয়। এদেশের ইতিহাসকে আপনারা বিকৃত করছেন, ইতিহাসকে গায়েব করে দিয়েছেন। এখন বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারকে গায়েব করছেন। ডাকসুর সাবেক ভিপি বিএনপি নেতা আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন সাবেক ছাত্র নেতা ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, হাবিবুর রহমান হাবিব, খায়রুল কবির খোকন, কামরুজ্জামান রতন, রফিক সিকদার, খোন্দকার লুৎফর রহমার, আসাদুর রহমান আসাদ, সাইফুদ্দিন মনি প্রমুখ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সাবেক ছাত্রনেতা নাজিম উদ্দিন আলম।