অবশেষে পূরণ হতে যাচ্ছে পাবনাবাসীর দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন। সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ২০১৮ সালের জানুয়ারিতেই পাবনা-রাজশাহী ট্রেন চলবে। বৈরী আবহাওয়ার কারণে পাবনা রেলপথ নির্মাণে সময় ও অর্থ বেশি লাগলেও এখন শুধুই উদ্বোধনের পালা। রোমাঞ্চকর ট্রেন ভ্রমনের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন পাবনাবাসী। পাবনা রেল পথ নির্মাণ প্রকল্পের প্রকল্প কর্মকর্তা মুহাম্মদ সুবক্তগীন জানান, পাবনা রেল পথ নির্মাণ প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষে হয়েছে, এখন চলছে রেললাইনের সিগন্যাল বাতি লাগানো। রং করা হচ্ছে শেডে, লাইনে বসানো হচ্ছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সবমিলিয়ে শেষ সময়ের কাজ চলছে পুরোদমে। তিনি আরো জানান, বৈরী আবহাওয়ার কারণে একটু সময় বেশি লেগেছে। আশা করছি ২০১৮ সালের জানুয়ারিতেই পাবনা থেকে যাত্রী নিয়ে ট্রেন ছেড়ে যাবে। প্রথম পর্যায়ে একটি শাটল ট্রেন পাবনা-ঈশ্বরদী -রাজশাহী রুটে চলাচল করবে। রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, পাবনার মানুষের একশ’ বছররের দাবি ছিল এই রেলপথ। ১৯১৪ সালে পদ্মা নদীর উপর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ চালু হলে সেই সময়ে দাবি উঠে ঈশ্বরদী থেকে পাবনা পর্যন্ত একটি লিংক রোড রেললাইনের। সেই সময় ব্রিটিশরা এই দাবি পূরণে প্রতিশ্রুতিও দেন। তবে সেই প্রতিশ্রুতি আর পরে বাস্তবায়ন হয়নি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৪ সালে সরকার পাবনাবাসীর দীর্ঘদিনের এ দাবি বাস্তবায়নের লক্ষে ঈশ্বরদী-ঢালারচর রেলপথ প্রকল্প হাতে নেয়।

সে সময় পাবনায় নদী কেন্দ্রীক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে উঠেলে স্থলপথে যাতায়াত ব্যবস্থা আরো শক্তিশালী করতে ঈশ্বরদী থেকে পাবনা হয়ে নগরবাড়ী পর্যন্ত রেলপথের জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হয়। কিন্তু ১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান হত্যার পর প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে পাবনা শহরের টাউন হল মুক্তমঞ্চ মাঠে এক ভিডিও কনফারেন্সে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা পাবনার মানুষকে প্রতিশ্রুতি দেন আগামীতে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে এই রেলালাইন নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। তারই ধারাবাহিকতায় ২০১০ সালে আওয়ামী লীগ সরকার পাবনার বাসীর প্রাণের দাবি এ রেলপথ নির্মানের সিদ্ধান্ত নেয়। এ সময় নকশার কিছুটা পরিবর্তন এনে রেলপথটি ঈশ্বরদী থেকে পাবনা হয়ে বেড়া উপজেলার ঢালারচর পর্যন্ত নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সে অনুযায়ী ২০১০ সালের ৫ অক্টোবর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নিবার্হী কমিটির (একনেক) এর বৈঠকে এ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ৯৮২ কোটি ৮৬ লক্ষ ৫৬ হাজার টাকা বরাদ্ধ দেওয়া হয়। পরবর্তীতে তা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬২৯ কোটি টাকা। ২০১৩ সালে ২ ফেব্রুয়ারি পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ মাঠে এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প কাজের উদ্বোধন করেন।

পাবনা জেলার ১১টি থানার মধ্যে ৩টি থানার অল্প সংখ্যক মানুষ রেলপথ সুবিধা পেলেও জেলার মোট জনসংখ্যার বিরাট একটি অংশ এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিল। এই রেলপথ নির্মাণের দাবি ছিল পাবনাবাসীর দীর্ঘদিনের। সেই অপেক্ষার পালা শেষ হতে চলছে। এখন রোমাঞ্চকর ট্রেন ভ্রমণের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন শহরবাসী। দীর্ঘদিনের স্বপ্ন আজ বাস্তব হতে চলছে। এর জন্য গুনতে হবে আর মাত্র কয়েকটা দিন। নতুন বছরের শুরু থেকেই পাবনাবাসী পা রাখবে স্বপ্নের সেই ঝকঝক শব্দের প্রিয়বাহন ট্রেনভ্রমণে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn