সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে আমেরিকায়। কিন্তু দুশ্চিন্তা সারা দুনিয়ায়। বিশেষ করে নিউ ইয়র্কের ওই হামলায় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত যুবক আকায়েদ উল্লাহ’র সম্পৃক্ততায় উদ্বিগ্ন বিশ্বের দেশে দেশে থাকা বাংলাদেশ কমিউনিটির লোকজন। তারা বলছেন, এ ঘটনায় কেবল নিউ ইয়র্ক বা আমেরিকায় থাকা বাংলাদেশিরাই ক্ষতির মুখে পড়বেন, তা নয়। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে এশিয়া, ইউরোপ, ল্যাটিন আমেরিকা অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে। নিউ ইয়র্কে বাবা-মায়ের সঙ্গে স্থায়ীভাবে বসবাসরত বাংলাদেশি আবদুল মুমিন চৌধুরীর প্রতিক্রিয়াটি ছিল এ রকম- কি বলবো, আমাদের কমিউনিটির লোকজনের মুখে একটাই কথা ‘কুলাঙ্গার’ আকায়েদের কারণে আজ বাংলাদেশিদের মুখ পুড়েছে। সে যেখানে হামলা করেছে সেটি হার্ট অব নিউ ইয়র্ক। সেখানে ২৪ ঘণ্টা ইমার্জেন্সি পুলিশ থাকে। গোটা এলাকা সিসি টিভির আওতায়। সে ইমিগ্রেন্ট (অভিবাসী), এখনো নাগরিকত্ব পায়নি। তার মতো অনেক ইমিগ্রেন্ট রয়েছেন গোটা আমেরিকায়। আরো অনেকের ইমিগ্রেন্ট হিসেবে আবেদন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। অনেকে নাগরিকত্ব পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন। এ ঘটনায় বাংলাদেশি ইমিগ্রেন্ট এবং নাগরিকত্ব পাওয়া বাঙালি পরিবারগুলো চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছে জানিয়ে মিস্টার চৌধুরী বলেন, এখন সবকিছু কড়াকড়ি হবে। বাংলাদেশি বলে স্পট লাইটে রাখার আশঙ্কা সবাইকে তাড়া করছে। জ্যামাইকা দারুস সালাম মসজিদের সানি ইমাম (এসিস্ট্যান্ট ইমাম) মৌলভীবাজারের আদি বাসিন্দা মাওলানা নজরুল ইসলামের প্রতিক্রিয়াও প্রায় অভিন্ন। লন্ডনে দীর্ঘ দিন কাটিয়ে এখন আমেরিকায় স্থায়ীভাবে বসবাসরত মিস্টার নজরুল মানবজমিনের সঙ্গে আলাপে বলেন, আকায়েদ বাংলাদেশি নামের কলঙ্ক। সে কেবল তার পরিবার বা আত্মীয়স্বজনের ক্ষতির কারণ হয়নি, গোটা বাঙালিদের জীবন-জীবিকা হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। কমিউনিটির লোকজনের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সবাই তাকে গালি দিচ্ছে, তার পরিবারকে গালি দিচ্ছে। যারা সারাদিন কাজকর্মে মজে থাকে। স্বামী-স্ত্রী দুজনই কাজ ছাড়া কিছু বুঝে না। পরিবারের সন্তান কখন কার সঙ্গে মিশছে তার কোনো খোঁজ রাখে না। এ ঘটনা এমন পরিবারগুলোর জন্য অশনি সংকেত বলে মনে করছেন কমিউনিটির সচেতন লোকজন। ঢাকার সাংবাদিক দীন ইসলাম এখন প্যারিসে রয়েছেন। সেখানে তিনি গতকাল বাংলাদেশি কমিউনিটির অনেকের সঙ্গে কথা বলেছেন। দীন ইসলামের ভাষ্য মতে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফর উপলক্ষে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে থাকা বাংলাদেশি কমিউনিটির নেতারা প্যারিসে রয়েছেন। নিউ ইয়র্কে সন্ত্রাসী হামলায় ইউরোপে বাংলাদেশিদের অবাধ বিচরণে কড়াকড়ি আরোপের আশঙ্কায় রয়েছেন তারা। আমেরিকার নিউ ইয়র্ক শহরে দীর্ঘদিন ধরে একটি তথ্য প্রযুক্তি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালাচ্ছেন এবং কমিউনিটিতে প্রভাবশালী ইঞ্জিনিয়ার আবু হানিফ বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, স্বাভাবিকভাবে পুরো কমিউনিটির মধ্যে ভীতি ছড়িয়ে পড়েছে। যেসব জায়গায় বাংলাদেশিদের বেশি আনাগোনা, বিস্ফোরণের পর সেটি একেবারেই কমে গেছে। এমনকি যাদের বৈধ কাগজপত্র আছে এবং নাগরিকত্বের প্রক্রিয়া শুরু করেছেন তারাও ভয় পাচ্ছেন। যারা অবৈধ আনডকুমেন্টেড কিন্তু কাগজপত্রের জন্য অ্যাপ্লাই করেছে, তারা সবাই দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছেন। সবার আশঙ্কা তাদের বৈধতার কাগজপত্র তৈরির পথে এ ঘটনার প্রভাব পড়তে পারে। মি. হানিফ জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসন বিরোধী নীতির মধ্যে এ ধরনের ঘটনা স্বাভাবিকভাবেই উদ্বেগ তৈরি করে। বাংলাদেশি কমিউনিটির সকলেই একবাক্যে বলছেন, হামলাকারী ‘বাংলাদেশি অভিবাসী’ হলেও সে কিছুতেই বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করে না। তার শাস্তি হওয়া উচিত বলে মনে করেন কমিউনিটির নেতৃবৃন্দ। মি. হানিফ বলেছেন, ২০১৩ সালে নিউ ইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভে হামলা চালিয়েছিল ২১ বছর বয়সী এক অভিবাসী বাংলাদেশি। তখনো সেখানকার বাংলাদেশিদের উদ্বেগে দিন পার করতে হয়েছে। নিউ ইয়র্ক থেকে সাংবাদিক লাভলু আনসারী জানান, আকায়েদ উল্লাহ ব্রুকলিনের ফ্ল্যাটল্যান্ডস এলাকায় থাকতো। তার বাড়িটি এখন ঘেরাও করে রাখা হয়েছে। আকায়েদ উল্লাহ একটি বৈদ্যুতিক সামগ্রীর দোকানে কাজ করতো এবং সেখানেই বোমাটি তৈরি করা হয় বলে জানা গেছে। মি. হানিফ মনে করেন, নিউ ইয়র্কে এখন অভিবাসী বাংলাদেশিদের বেশির ভাগই দ্বিতীয় প্রজন্মের যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী। ফলে অভিভাবকদের সন্তানদের বেশি করে সময় দেয়া প্রয়োজন, যাতে তারা কি করছে, সে সম্পর্কে তারা যথেষ্ট ওয়াকিবহাল থাকেন। সন্তানেরা কি করছে, কাদের সঙ্গে ওঠাবসা করছে, ড্রাগ নিচ্ছে কিনা, সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে কিনা- এগুলো খেয়াল রাখতে হবে মা-বাবাদের। তিনি বলছেন, সন্ত্রাসী হামলার মতো ঘটনায় সমপৃক্ত হয়ে পড়ার আগে দেখা যায় পাঁচ ছয় মাস ঐসব ছেলেদের কোনো খবর থাকে না। ঐ সময় হয়তো তাদের ‘মগজ ধোলাই’ হয়। ফলে এসব ব্যাপারে সচেতন হতে হবে অভিভাবকদের।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn