৩শ’ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী সাড়ে ৩ হাজার
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনশ আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী সাড়ে তিন হাজারেরও বেশী প্রার্থী। এ বিপুল সংখ্যক প্রার্থী সারাদেশের প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় যে যার মত করে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। নতুন মুখের পদচারণায় দলের তৃণমূলে নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করেছে। দেশের প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় প্রার্থীদের নানা রঙের পোস্টার-ব্যানার ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে। দলের হাইকমান্ডের নানারকম দিকনির্দেশনার কথাবার্তা প্রচারণায় ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রার্থীতার প্রচার-প্রচারণায় পিছিয়ে নেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রতিটি অঙ্গ-সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতারা। কোনো কোনো এলাকায় প্রার্থীর সংখ্যা বেশী হওয়ায় অভ্যন্তরীণ বিরোধও মাথা চাড়া দিচ্ছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সারাদেশে বিপুর সংখ্যাক প্রার্থী থাকায় দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিয়ে চিন্তায় রয়েছে আওয়ামী লীগ। শতাধিক আসনে আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ এখন আওয়ামী লীগ। কোন্দলের বিষয়গুলো আঁচ করতে পেরে গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে তা দূর করার চেষ্টা চলছে। কিন্তু এখনও সুফল মিলছে না। প্রত্যেক পক্ষই তাদের পাল্লা ভারী করার চেষ্টা করছেন। আবার অনেক স্থানে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীরা বর্তমান সংসদ সদস্যের রোষানলের শিকার হচ্ছেন।
সংবিধান অনুযায়ী আগামী বছরের শেষ দিকে হবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে, এ অবস্থায় দলের হাইকমান্ডের দিক নির্দেশনার অপেক্ষায় সংশ্লিষ্ট জেলার দায়িত্বে থাকা নেতৃবৃন্দ। ঢাকা, বরিশাল, খুলনা, ময়মনসিংহ ও রাজশাহী বিভাগের নির্বাচনী এলাকাগুলোতে দায়িত্বে নিয়োজিত দলের সংশ্লিষ্ট সাংগঠনিক নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে এসব তথ্য জানা গেছে। দলের বিভাগীয় সাংগঠনিক দায়িত্ব প্রাপ্ত একাধিক সাংগঠনিক সম্পাদক জানান, হ্যাট্রিক জয় প্রত্যাশা করছে আওয়ামী লীগ। জয় নিশ্চিত করতে কমপক্ষে ৬০ ভাগ আসনের পরিবর্তন আনার কথা চাউর করা হলেও কার্যত খুব একটা পরিবর্তন হবে না। অতীত নির্বাচন নিয়ে হিসাব করলে দেখা যায় ৮ম, ৯ম ও ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৫ থেকে ৩০ ভাগ আসনে প্রার্থী বদল হয়েছে। আগামী একাদশ নির্বাচনেও এর বেশী হবে না। দলের হাইকমান্ডের সঙ্গে মনোনয়ন সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে দু-চার কথা হয় এমন একটি সূত্রের দাবি, বর্তমান সংসদে দলের যেসব সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে নানা রকম দুর্নাম-বদনামসহ নানা অপকর্মের অভিযোগ আছে বা পাওয়া যাচ্ছে তাদেরকে নিয়ে উত্থাপিত অভিযোগ দলের হাইকমান্ড নানাভাবে তদন্ত করছে।
দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আওয়ামী লীগের শত্রু যেন আওয়ামী লীগ না হয়। নিজ ঘরে শত্রু থাকলে শত্রুতা করার জন্য বাইরের লোকের দরকার হয় না। দলের অভ্যন্তরীণ বিরোধ দেখে রাজধানীর আজিমপুরের ঘটনা নিয়ে তিনি বলেন, এ বছর আমরা অনৈক্য অ্যাফোর্ড করতে পারব না। কিন্তু দলের ভেতর কিছু সমস্যা আছে। সেগুলো সমাধান করার জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। দলের বিভেদ মেটানোর পরামর্শ দিয়ে এমন সতর্ক বার্তা দেন তিনি। অপর একটি অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ জানান, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন এলাকায় ছোটখাটো যেসব বিরোধ রয়েছে তা আমরা উদ্যোগ নিয়েই দ্রুত সমাধান করব। আওয়ামী লীগের একাধিক প্রেসিডিয়াম সদস্য জানান, শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তার সুবিধা পাবে এমপি প্রার্থীরা। তারা মনে করেন, দল ক্ষমতায় থাকলে নেতাকর্মীদের প্রত্যাশাও বাড়ে। নেতৃত্ব পাওয়া না পাওয়া নিয়ে কেন্দ্র থেকে তৃণমূলে ক্ষোভ-কোন্দল-দ্বন্দ্ব কমবেশি থাকে। এসব দূর করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের তৃণমূলেও কমিটি গঠনে ভোটাভুটি হয়। দলে ছোটখাটো সমস্যা থাকে। অনেকের প্রত্যাশা থাকে। আবার নির্বাচন শুরু হলে নৌকা দেখলে বৃহত্তর স্বার্থে সবাই এক হয়ে যায়। এটাই এ দলের ঐতিহ্য।
একাদশ সংসদ নির্বাচন ও দলের আগামী দিনের করণীয়সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সচিবালয়ে একাধিক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে তারা আগামী একাদশ জাতীয় নির্বাচনে হ্যাট্রিক জয়ের প্রত্যাশা নিয়ে এগুচ্ছে। বিরোধীদের কোনো ছাড় নয়। হার্ডলাইনেই থাকবে সরকার ও দল। সর্বশেষ গত সোমবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে কার্যনির্বাহী কমিটির সকল নেতা ও সহযোগী সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও আওযামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার পুত্র ও তার তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজিব ওয়াজেদ জয় এক বৈঠকে বলেছেন, নবমের চেয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বেশি ভোট পাবে। আগামী নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের জয় আসবে। তিনি বলেন, আমার জরিপে আগামী নির্বাচনে ভালো রেজাল্ট আমরা পাব। ২০০৮ সালের চেয়ে বিপুল ও বেশি ভোট পাবে আওয়ামী লীগ।