হাওর দুর্নীতির মামলা স্থগিত
হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতির মামলায় স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে আপিলে যাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত ১২ ডিসেম্বর হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতির মামলায় তিন মাসের জন্য স্থগিতাদেশ দেন হাইকোর্ট। এর বিপরীতে দুদক থেকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। চলতি বছরের ২ জুলাই সুনামগঞ্জ জেলার পাউবো’র ১৫ কর্মকর্তা এবং ৪৬ ঠিকাদার ও প্রতিষ্ঠানসহ ৬১ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছিল দুদক। বিষয়টি নিশ্চিত করে দুদকের আইনজীবী অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা মহামান্য হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে যাচ্ছি। বৃহ¯পতিবার আবেদন করার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু কাজ শেষ করতে পারিনি। আশা করছি আগামী ১৭ ডিসেম্বর আপিল বিভাগে এ বিষয়ে আবেদন করতে পারব। আপিলের শুনানি শেষে এ বিষয়ে আরো বিস্তারিত বলতে পারব। ১২ ডিসেম্বর বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের বেঞ্চে এক রিট আবেদনের শুনানি শেষে হাইকোর্ট মামলার বিষয়ে তিন মাসের স্থগিতাদেশ দেন। এর পাশাপাশি রুল জারি করেন।
মামলার আসামি ঠিকাদার বাচ্চু মিয়ার রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত ওই আদেশ দেন। আবেদনে তিনি দুদকের দায়ের করা মামলাকে অবৈধ বলে দাবি করেছেন।
রিট আবেদনের পক্ষের আইনজীবী ছিলেন ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ। অন্যদিকে দুদকের পক্ষে হিসেবে দায়িত্ব পালন অ্যাডভোকেট আহমেদ সোহেল। এ বিষয়ে অ্যাডভোকেট সোহেল বলেন, মহামান্য হাইকোর্ট তিন মাসের স্থগিতাদেশ দিয়েছেন। আমাদের পক্ষ থেকে আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি। কিন্তু আদালত স্থগিতাদেশ দিয়েছেন। এখন ওই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করা হবে। বিষয়টি এখন অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান দেখবেন। গত ২ জুলাই হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগে সুনামগঞ্জ জেলা পাউবোর ১৫ কর্মকর্তা এবং ৪৬ ঠিকাদার ও প্রতিষ্ঠানসহ ৬১ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করে দুদক। দুদকের সহকারি পরিচালক মো. ফারুক আহমেদ বাদী হয়ে সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানায় এ মামলা দায়ের করেন। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, সুনামগঞ্জের হাওরে প্রতিবছরের মতো এবারো বন্যা আসার সার্বিক তথ্য জানার পরও তা রোধে কার্যকর ব্যবস্থা না নিয়ে অপরাধজনিত বিশ্বাসভঙ্গ করেছেন আসামিরা। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৮৪টি প্যাকেজের অসমাপ্ত কাজের জন্য নতুনভাবে টেন্ডার আহ্বান না করে ২০১৬-১৭ অর্থবছরেও আগের ঠিকাদারদের কাজের অনুমতি দেওয়া হয়। মোট ১৬০টি প্যাকেজের মধ্যে নয়টির কাজ শুরুই হয়নি। বাকি ১৫১টি প্রকল্পের কাজ আংশিক শেষ হয়েছে। এর মাধ্যমে অসৎ উদ্দেশ্যে বাঁধ নির্মাণে বরাদ্দকৃত অর্থ আত্মসাতের সুযোগ সৃষ্টি করে হাওরের কৃষক ও স্থানীয় জনসাধারণের আর্থিক ক্ষতিসাধন করে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন আসামিরা। পাউবোর ১৪ আসামি হলেন- সুনামগঞ্জ জেলা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী (বরখাস্ত) মো. আফছার উদ্দিন, সিলেট বিভাগের প্রাক্তন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী নূরুল ইসলাম সরকার, প্রাক্তন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আবদুল হাই, সুনামগঞ্জের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাস, খলিলুর রহমান, সেকশন কর্মকর্তা মো. শহিদুল্যা, ইব্রাহিম খলিল উল্লাহ খান, খন্দকার আলী রেজা, মো. রফিকুল ইসলাম, মো. শাহ আলম, মো. বরকত উল্লাহ ভূঁইয়া, মো. মাহমুদুল করিম, মো. মোছাদ্দেক, সজীব পাল ও মো. জাহাঙ্গীর হোসেন। এ ছাড়া ৪৬ জন ঠিকাদার ও প্রতিষ্ঠান মালিকদের আসামি করা হয়েছে। মামলার পরপরই রাজধানীর মতিঝিল এলাকা থেকে প্রধান আসামি সুনামগঞ্জ জেলা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী (বরখাস্ত) মো. আফছার উদ্দিন ও ঠিকাদার বাচ্চু মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। যদিও পরবর্তীকালে তারা আদালত থেকে জামিন নেন।
এ ছাড়া অনুসন্ধানে বাঁধ নির্মাণে দায়িত্ব পালনে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের অবহেলার তথ্য পাওয়ায় পানিস¤পদ সচিবসহ ঊর্ধ্বতন ১৩ কর্মকর্তার নাম আসামির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত না করে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে চিঠি পাঠায় দুদক। কর্মকর্তারা হলেন- পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. জাফর আহমেদ খান, অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) ড. মোহাম্মদ আলী খান, যুগ্ম সচিব (উন্নয়ন-১, হাওর) নুজহাত ইয়াসমিন, যুগ্ম প্রধান (পরিকল্পনা অনু বিভাগ) মন্টু কুমার বিশ্বাস, পাউবো’র মহাপরিচালক প্রকৌশলী মো. জাহাঙ্গীর কবির, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পূর্ব রিজিওন) এ কে এম মমতাজ উদ্দিন। এ ছাড়া মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং ও এনফোর্সমেন্ট কমিটির সাতজন হলেন- যুগ্ম সচিব কাজী ওবায়দুর রহমান, শামিম আরা খাতুন, মো. খলিলুর রহমান, উপসচিব নন্দিতা সরকার, মুহম্মদ হিরুজ্জামান, সহকারী প্রধান আবু ইউসুফ মোহাম্মদ রাসেল ও মো. সিদ্দিকুর রহমান। ২০১৭ সালের ২০ এপ্রিল দুদক পরিচালক এনামুল বাছিরের নেতৃত্বে টিম কাজ শুরু করে। এই টিমের সদস্যরা হলেন- উপপরিচালক আবদুর রহিম, সহকারী পরিচালক সেলিনা আক্তার মনি, সহকারী পরিচালক মো. ফারুক আহমেদ এবং উপসহকারী পরিচালক নেয়ামুল কাজী। – রাইজিংবিডি ডট কম