মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, (১৬ ডিসেম্বর) বন্দিখানায় পাকিস্তানিদের সামনে বসে জয় বাংলা শ্লোগান দিয়েছি। কিন্তু আমরা সেদিন মুক্তি পাইনি। মুক্তি পেয়েছিলাম তার পরদিন ১৭ ডিসেম্বর। বিজয় দিবস উপলক্ষে শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে রাষ্ট্রীয়ভাবে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সে ভাষণদানকালে তিনি একথা জানান। খবর: বাসস। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেয়া এই ভাষণে শহীদদের ত্যাগের মহিমায় যোগ্য নাগরিক হিসেবে নিজেদেরকে গড়ে তুলতে আগামী প্রজন্মের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘যারা যুব সমাজ আছে তাদেরকে আমি এইটুকুই বলব- মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় লাখো শহীদের যে ত্যাগ, সেই ত্যাগের মহিমায় নিজেদেরকে উপযুক্ত নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। গড়ে তুলতে হবে বাংলাদেশকে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা বিজয়ী জাতি একথাটা সবসময় মনে রাখতে হবে। এক মুহূর্তের জন্য ভুললে চলবে না। আমরা কারো কাছে মাথা নত করি না। আমরা বিশ্বে মর্যাদার সাথে মাথা উঁচু করে চলবো। এটাই হোক আজকের দিনে আমাদের প্রতিজ্ঞা।’ প্রধানমন্ত্রী মুক্তিযুদ্ধের মহান শহীদ এবং সম্ভ্রমহারা মা-বোনদের এবং দেশের অভ্যন্তরে যারা মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করেছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এসময় ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে গেলেও তারা তখনও ধানমন্ডির ১৮ নম্বরের একটি বাড়িতে বন্দি ছিলেন। তার বাবা বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যায় এবং তার মা, ছোট বোন, ভাইসহ সবাইকে ওই বাড়িতে বন্দি করে রাখে। শেখ হাসিনা বলেন, শেখ কামাল আগেই মুক্তিযুদ্ধে চলে গিয়েছিলেন। আর শেখ জামাল তাদের সঙ্গের বন্দিদশা থেকে গেরিলা কায়দায় পালিয়ে সেও মুক্তিযুদ্ধে চলে যায়। তিনি বলেন, বিজয় উৎসবের সঙ্গে গলা মিলিয়ে তারা বন্দি অবস্থাতেই জয়বাংলা শ্লোগান ধরেছিলেন। পরে ১৭ ডিসেম্বর তারা ওই বন্দিদশা থেকে মুক্তি পান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সমগ্র ঢাকা শহর তখন জয় বাংলা শ্লোগানে মুখরিত। আমরা ধানমন্ডি ১৮ নম্বর রোডের বাড়িতে বন্দি কয়েকটি মানুষ, রাসেল, রেহানা, আমি ও আমার মা ওই বন্দিখানায়। চারিদিকে জয়বাংলা শ্লোগান, বাংলাদেশ মুক্ত।’ তিনি বলেন, ‘আমরা কয়েকজন রুদ্ধ দ্বার মুক্ত প্রাণ। বাইরে থেকে জয়বাংলা শ্লোগান আসে আমরা ভেতরে বসে ও শ্লোগানের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে জয় বাংলা শ্লোগান দিয়েছি বন্দিখানায় পাকিস্তানিদের সামনে বসে। কিন্তু আমরা সেদিন মুক্তি পাইনি। মুক্তি পেয়েছিলাম তার পরদিন ১৭ ডিসেম্বর।’ এসময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতাকে ’৭৫ এর ১৫ আগস্ট হত্যার পর এদেশে ইতিহাস বিকৃতির ষড়যন্ত্র হয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ তা মেনে নেয়নি। তাই বাংলার মানুষকে আমি অভিনন্দন জানাই, সালাম জানাই। এ সময় বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণকে ইউনেস্কো তাদের ওয়ার্ল্ড মেমোরি রেজিস্ট্রারে বিশ্বের অনন্য দলিল হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে স্বীকৃতি দেয়ায় সমগ্র বিশ্বে জাতি হিসেবে বাঙালি সম্মানিত হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী পরে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সোহরাওয়ার্দী উপস্থিত জনতার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও উপভোগ করেন। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়য়ের উদ্যোগে এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সহযোগিতায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে লাখো জনতা অংশগ্রহণ করে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn