দিরাইয়ে মুন্নি হত্যা: এখনো গ্রেফতার হয়নি মূল আসামী
স্থানীয় সূত্রে জানাযায়,দিরাই বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের মেধাবী ছাত্রী ছিল মুন্নি আক্তার (১৬)। ভাগ্যের পরিক্রমায় এসএসসি পরীক্ষায় আর অংশ গ্রহণ হল না। প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখান করায় বখাটে এহিয়ার হাতে জীবন দিতে হল। নির্বাচনী পরীক্ষার মেধা তালিকায় উত্তীর্ণ হয়ে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করার জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছিল। আর মাত্র ক’দিন পর ছিল এসএসসি পরীক্ষা। প্রতিদিনের মত শনিবারেও দিরাই পৌরসভার আনোয়ারপুর গ্রামে নিজ বাসার পড়ার টেবিলে মনযোগ সহকারে অধ্যয়নরত ছিলো হুমায়রা আক্তার মুন্নি। রাত সাড়ে ৮টায় বাসায় ঢুকে নিজ হাতে ছুরিকাঘাতে খুন করে বখাটে এহিয়া সরদার (২২) ও তার সহযোগীরা। মুন্নির চিৎকার শুনে পাশের কক্ষ থেকে তার মা রাহেলা খাতুন মেয়েকে বাঁচাতে এগিয়ে আসলে তাকে ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে যায় ইয়াহিয়া সহ তার সহযোগী ঘাতকরা। বখাটে মুল ঘাতক উপজেলার সাকিতপুর গ্রামের জামাল সরদারের ছেলে। ঘটনার সময় ঘাতকের সাথে থাকা ৪সহযোগী দুই মটর সাইকেল নিয়ে নিচতলায় অবস্থান করছিল। আশপাশের লোকজন খবর পেয়ে এগিয়ে আসলে ঘাতক ও তার সহযোগীরা পলিয়ে যায়।
আরো জানা যায়,এহিয়া দিরাইয়ে মিছিল মিটিংয়ের অগ্রভাগে থেকে সক্রিয়ভাবে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত রয়েছে বলে জানা গেছে। ঘাতক এহিয়ার ছাত্রলীগের রাজনীতির সম্পৃক্ততা বিষয়ে জানতে চাইলে সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক সোহেল মিয়া জানান,সে মাঝে মধ্যে আমাদের সাথে মিছিল মিটিংয়ে আসতো,কিন্তু ছাত্রলীগের কোন পদধারী নেতা ও সক্রিয় কর্মী নয়। প্রায় একই ধরনের বক্তব্য দিয়ে উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক উজ্জল মিয়া বলেন,আমার জানা মতে ইয়াহিয়া উপজেলা বা কলেজ ছাত্রলীগের কোন কমিটির সদস্য নয়,তবে মাঝে মাঝে মিছিলে দেখা যেতো।
স্থানীয় এলাকাবাসীরা জানান,ইতালী প্রবাসী হিফজুর রহমানের স্ত্রী রাহেলা বেগম স্কুল পড়ুয়া মেয়ে মুন্নী ও তার ছোট ছেলেকে নিয়ে পৌর শহরের আনোয়ারপুর মাদানী মহল্লায় পিতার বাসার ২য়’তলায় দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছেন। সাকিতপুর গ্রামের বখাটে ছাত্রলীগ কর্মী ইয়াহিয়া অনেক দিন ধরে মেধাবী ছাত্রী মুন্নিকে বিদ্যালয়ে যাওয়া আসার পথে উত্যক্ত করতো। এ নিয়ে মুন্নির মা রাহেলা বেগম সুনামগঞ্জ র্যাব-৯ ও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বরাবরে একটি লিখিত আবেদন করেন। এর প্রেক্ষিতে গত ২৬-১০-১৭ইং তারিখে দিরাই উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাফর ইকবাল ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভপাতি আব্দুল হক ও পৌর এলাকার সুজানগর গ্রামের তোফাজ্জুল হোসেন চৌধুরীর মাধ্যমে একটি আপোষ মিমাংসায় লিখিত মুচলেকা দেয় বখাটে এহিয়া। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে প্রতিশোধ নেয়ার জন্য প্রকাশে খুন করার হুমকি করে এহিয়া। নিহত মুন্নির ফুফোতো ভাই সৌরভ মিয়া জানান,প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখান করায় বখাটে এহিয়া মুন্নির ইতালি প্রবাসী পিতাকে ইমু নাম্বারে বিভিন্ন ধরনের অপ্রীতিকর ছবি পাঠিয়ে বিভ্রান্ত ছড়িয়েছে।
শনিবার রাত সাড়ে ৮টায় তার সহযোগীদের নিয়ে বাসায় গিয়ে মুন্নিকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। রক্তাক্ত অবস্থায় মুন্নীকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে আশংকাজনক অবস্থায় কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাক্তার পিয়াস দেব তাকে সিলেট ওসমানি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। সিলেট যাওয়ার পথেই মুন্নির মৃত্যু হয়। দিরাই বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাফর ইকবাল জানান,গত অক্টোবর মাসে নির্বাচনী পরীক্ষার আগে মুন্নীকে উত্যক্ত করার অভিযোগ করেন তার মা রাহেলা বেগম। বিষয়টি নিয়ে আমি বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ও কমিটির সভাপতিকে নিয়ে শালিশ বৈঠকে তফাজ্জল হোসেনের মধ্যস্থতায় উত্তক্ত করার জন্য মুছলেকা নিয়ে ছেড়ে দেই। মুন্নির এই ঘটনায় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ঘাতক এহিয়ার দৃষ্ঠান্তমুলক শাস্তি দাবী করেন। র্যাব-৯ সুনামগঞ্জ অধিনায়ক লেঃ কমান্ডার ফয়সাল আহমেদ জানায়,ইয়াহিয়াকে গ্রেফতার করতে আমাদের পক্ষ থেকে অভিযান চলছে। আমাদের পক্ষ থেকে মুল আসামী ইয়াহিয়াকে গ্রেফতারের সর্বতœক চেষ্টা করা হচ্ছে। এব্যপারে সুনামগঞ্জ পুলিশ সুপার মোঃ বরকত উল্লাহ খান জানান,মুন্নি হত্যার ঘটনায় তার মা বোনসহ ছয়জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। তবে এহিয়া পলাতক রয়েছে তাকে গ্রেফতারে চেষ্ঠা চলছে। মেধাবী ছাত্রী মুন্নির হত্যাকারি যেই হোক ছাড় দেয়া হবে না। ইতোমধ্যে সব জায়গায় বার্তা পাঠানো হয়েছে।