হবিগঞ্জে তিন মাসপর কবর থেকে কলেজ ছাত্রীর লাশ উত্তোলন
হবিগঞ্জ সদর উপজেলার জালালাবাদে দাফনের ১০৮ দিন পর পারভিন আক্তার ইতি (১৮) নামে এক কলেজ ছাত্রীর লাশ কবর থেকে উত্তোলন করা হয়ছে। রবিবার দুপুরে চীফ এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে লাশ উত্তোলন করা হয়। ইতি ওই গ্রামের মো. আয়ূব আলীর মেয়ে ও শচীন্দ্র কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী। পুলিশ জানায়, গত বছরের ২৯ নভেম্বর বিষপানে ইতির মৃত্যু হয়। কিন্তু প্রথমে কোন অভিযোগ না থাকায় ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফন করা হয়। পরে চলতি বছরের ২৩ ফেব্র“য়ারী নিহতের মা রীনা আক্তার হবিগঞ্জ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমল-১ আদালতে ইতিকে বিষ পান করিয়ে হত্যার অভিযোগ এনে ইতির পিতা ও সৎ মায়ের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। আদালতের নির্দেশে সদর থানা মামলাটি রেকর্ড করলে মামলাটির তদন্তভার পান এসআই সাহিদ মিয়া। পরে সাহিদ কবর থেকে কলেজছাত্রীর লাশ উত্তোলনের জন্য জেলা প্রশাসক বরাবরে আবেদন করেন। তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক দুইজন ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করেন। গতকাল রবিবার চীফ এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট চাই থোহাইহোলা চৌধুরী ও বেলায়েত হোসেনের উপস্থিতিতে কবর থেকে লাশ উত্তোলন করে ময়নাতদন্তের জন্য হবিগঞ্জ মর্গে প্রেরণ করা হয়।
উল্লেখ্য, সদর উপজেলার জালালাবাদ গ্রামের মৃত মরতুজ মিয়ার ছেলে মো. আয়ূব আলী প্রায় ২১ বছর আগে তার প্রথম স্ত্রী রীনা আক্তারকে (নিহত ইতির মা) বিয়ে করেন। বিয়ের পর তাদের ঘরে ৪টি মেয়ে ও একটি ছেলে জন্ম নেয়। তাদের বড় মেয়ে পারভিন আক্তার ইতি (১৮) শচীন্দ্র কলেজে দ্বাদশ শ্রেণিতে অধ্যায়নরত ছিল। এরপরও আয়ূব আলী তার প্রথম স্ত্রী বা স্থানীয় চেয়ারম্যানের অনুমতি ছাড়া আরও চারটি বিয়ে করেন। বিয়ের পর থেকে প্রথম স্ত্রী ও সন্তানদের কোন ধরণের খোঁজ খবর রাখেনি সে। অবশেষে আয়ূব আলী তার ৫ম স্ত্রী সানজিদা আক্তার সুইটিকে নিয়ে শহরের কামড়াপুর এলাকায় সংসার শুরু করেন। এতে প্রথম স্ত্রী রীনা আক্তার ও তার কলেজ পড়–য়া মেয়ে ইতি বাধাঁ দিলে আয়ূব নিয়মিত তাদের শারীরিকভাবে নির্যাতন করে। এরই ধারাবাহিকতায় গত বছরের ২৯ নভেম্বর আয়ূব আলী তার প্রথম স্ত্রী রীনাকে মারধর করে বাড়ি থেকে বেড় করে দেয়। কোন উপায় না পেয়ে রীনা আক্তার তার ছেলে মেয়েদের নিয়ে সিলেটে বোনের বাড়িতে চলে যান। ওই সময় ইতি কলেজে ছিলেন। কলেজ থেকে এসে সে প্রতিবাদ করলে পিতা আয়ূব আলী ও তার সৎ মা সুইটি তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে। এক পর্যায়ে জোর পূর্বক ইতির মূখে বিষ ঢেলে তাকে হত্যার চেষ্টা করে। স্থানীয়রা এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই দিন রাত ১০টার দিকে ইতি মারা যায়। এ ব্যপারে ইতির মা রীনা আক্তার আদালতে মামলা করতে চাইলে তার অন্যান্য সন্তানদেরও মেরে ফেলবে বলে হুমকি দেয় আয়ূব আলী ও তার ৫ম স্ত্রী সুইটি। অবশেষে স্থানীয় কয়েকজনের সহযোগিতার তিনি গত ২৩ ফেব্র“য়ারী আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলায় পিতা মো. আইয়ূব আলী ছাড়াও নিহতের সৎ মা সানজিদা আক্তার সুইটিসহ ৪ জনকে আসামী করা হয়েছে। অন্যান্য আসামীরা হলেন-ওই গ্রামের মৃত শের আলীর ছেলে ও আইয়ূব আলীর চাচা মনির মিয়া (৫৫) এবং মৃত শমসু মিয়ার ছেলে ও আইয়ূব আলীর চাচাতো ভাই সিদ্দিক আলী (৪৪)। মামলার পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল রবিবার কবর থেকে তার লাশ উত্তোলন করা হয়।