ঢাকা: শিক্ষকদের টানা দুদিনের আমরণ অনশনে ৩৩ শিক্ষক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তার মধ্যে ৮ জন শিক্ষকের অবস্থা গুরুতর। বর্তমানে তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে বলে আন্দোলনরত শিক্ষকরা জানিয়েছেন। অসুস্থ শিক্ষকরা হলেন- ময়মনসিংহ ঈশ্বরগঞ্জের মো. জাহাঙ্গীর আলম ও একই স্কুলের সহকারী শিক্ষক আজমল হোসেন, নোয়াখালীর ছাটখিলের সহকারী শিক্ষক আব্দুল মান্নান, নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের দক্ষিণ মুছাপুরের শিক্ষক মো. হক মিয়া, একই উপজেলার আল মোবারক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. নজরুল ইসলাম, বরগুনার মো. সানাউল্লাহ হক, মাগুরার শিক্ষক মো. আবু আজিম, ময়মনসিংহের সিরাজ-উদ-দৌলা, মানিকগঞ্জের শিক্ষক রফিকুল ইসলাম, নোয়াখালীর এইচএম আলাউদ্দিন, সাতক্ষীরার আব্দুল হামিদ, সিরাজগঞ্জের শিক্ষক এস এম সানাউল্লাহসহ ৩৩ জন শিক্ষক অনশন চালাকালে গুরুত্ব অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ অন্যান্য চিকিৎসাকেন্দ্রে পাঠানো হয়। সেখানে শিক্ষকদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এছাড়াও টানা দুদিন অনশন করায় অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়লে পার্শবর্তী হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে শরীরে স্যালাইন লাগানো অবস্থায় আবারও অনশনে যোগ দিচ্ছেন। আন্দোলনকারী শিক্ষকরা বলেন, নিজেদের অধিকার আদায় করতে এসে এখন শিক্ষকরা মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। কি অন্যায় করেছি আমরা? স্যারেরা আমাদের দিকে মুখ ফিরে দেখছেন না। দাবি আদায় করতে এসে অনেক শিক্ষক মৃত্যুর সঙ্গে এখন পাঞ্জা লড়ছেন। তাদের মধ্যে কয়েকজন শিক্ষকের অবস্থা অনেক বেশি আশঙ্কাজনক।তারা আরও বলেন, নিজেদের অধিকার আদায়ে আজ রাস্তায় নেমেছি। বাড়ি ও পরিবার ছেড়ে আমরা দুদিন ধরে আন্দোলন করছি। অধিকার আদায় ছাড়া আমরা বাড়ি ফিরে যাব না এমন শপথ করেই ঘর থেকে বেরিয়েছি। আন্দোলনে যদি কোনো শিক্ষক প্রাণ হারায় তবে তার দায়ভার সরকারকে নিতে হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন শিক্ষকরা। উল্লেখ্য, প্রধান শিক্ষকদের বেতন স্কেল ১০ম গ্রেডে উন্নীত হলে আমরা (প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষক) চার ধাপ নিচে নেমে যাব। তাই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকদের পরের গ্রেডে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষকদের বেতন স্কেল ও মর্যাদা নির্ধারণে আন্দোলনে নেমেছেন সরকারি প্রাথমিক স্কুলের সহকারী শিক্ষকরা। গতকাল শনিবার থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেত হন আন্দোলনরত শিক্ষকরা। এ দাবিতে আজও আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে।

শিক্ষকদের অনশন: মন্ত্রণালয়ে জরুরি সভা আহ্বান

 সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের আন্দোলন প্রত্যাহার করে ক্লাসে ফেরাতে চায় সরকার। এ বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে জরুরি বৈঠক ডেকেছে  প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। আজই এই বৈঠক হবে। সচিব, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের (ডিপিই) মহাপরিচালককে এই বৈঠকে ডাকা হয়েছে। আজ রবিবার দুপুরে এ সভা হয়। এ বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এফ এম মঞ্জুর কাদির বলেন, ‘শিক্ষকদের আন্দোলন ছেড়ে ক্লাসে ফেরাতে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তারা তো আমাদেরই লোক। শিক্ষকরা রাস্তায় নেমে আন্দোলন করবে আর আমরা চুপচাপ থাকব তা তো হতে পারে না।’ শিক্ষকরা আন্দোলনে নেমেছেন প্রধান শিক্ষকের বেতন কাঠামোর সঙ্গে তাদের বেতন কাঠামোর মধ্যে বৈষম্যের অভিযোগ এনে। তারা এই বৈষম্য বিলোপের দাবি জানাচ্ছেন। সহকারী শিক্ষকদের দাবি, নতুন বেতন কাঠামোতে প্রধান শিক্ষকদের বেতন ১০ম গ্রেডে হচ্ছে। কিন্তু সহকারী শিক্ষকদের বেতন হচ্ছে ১৪তম গ্রেডে। এই বেতন পার্থক্যকে অযৌক্তির দাবি করে তা যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনার দাবি জানাচ্ছেন তারা। দাবি পূরণে শনিবার থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জড়ো হয়ে অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন সহকারী শিক্ষকরা। আর কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনে বেশ কয়েকজন অসুস্থ হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ভর্তি হয়েছেন।

দাবি পূরণ না হলে ১ জানুয়ারি নতুন বই উৎসব বর্জনের হুমকিও দিচ্ছেন শিক্ষকরা। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘শিক্ষকদের দাবি পূরণের বিষয়টি অনেক উপর পর্যায়ের বিষয়। তবে তাদের দাবির যৌক্তিকতা রয়েছে। এ কারণে বিষয়টি আমলে নিয়ে আমরা আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। শিক্ষকদের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হচ্ছে। যে কোনোভাবেই এই পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে আমরা আজ বৈঠকে বসব। সেখানে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে।’

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn