দিরাইঃ বোরো চাষে কৃষকরা।। বাঁধ নিয়ে শঙ্কা কাটছেনা
দিরাই:দিরাইয়ে গত বোরো ধান হারানোর ক্ষত নিয়ে এবারো পুরোদমে চাষাবাদ শুরু করেছেন কৃষকরা। তবে বাঁধের কাজ এখনো শুরু হওয়ায় কৃষকদের মনে শঙ্কা কাটছে না। উপজেলার নয়টি ইউনিয়ন ও একটি পৌর সভায় হাওর রক্ষা বাঁধের কাজ নির্ধারিত সময়সীমার পনের দিন অতিবাহিত হলেও কোথাও কাজ শুরু হয়নি। কৃষির সাথে সংশ্লিষ্ট স্থানীয়রা জানান- নতুন নীতিমালা হলেও পুরনো আদলে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠন প্রক্রিয়ায় মধ্যস্বত্বভোগীরা মরিয়া হয়ে উঠার কারণে পিআইসি গঠনে বিলম্ব হচ্ছে। যার ফলে এবারও কাজ শুরু নিয়ে পুরনো শঙ্কায় ভোগছেন হাওর পাড়ের কৃষক। এদিকে হাওরে কৃষকরা পুরোদমে জমি চাষাবাদের কাজ শুরু করছেন, ধীরে ধীরে পানি নামায় তাদের সুবিধা হচ্ছে, তাই এবার কৃষকদের সেচ সংকটে পড়তে হবে না বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। বরাম হাওর পাড়ের কৃষক মুসলেহ উদ্দিন জানান- গতবারও সময়মত বাঁধে মাটি ফেলা হয়নি, এবারও দেখছি এখনো বাঁধে মাটি কাটা হচ্ছে না, সময়মত কাজ শুরু না হওয়ায় এবারও পুরনো শঙ্কায় রয়েছেন তারা। উপজেলার বরাম, চাপতি, টাংনি, কালিকোটা এই বৃহৎ চারটি হাওরের বাঁধ এলাকায় পানি নেমেছে অনেকে আগেই। তারপরও পানি নামছে না এর অজুহাত দেখানো হচ্ছে বলে জানান কৃষির সাথে সংশ্লিষ্টরা। এ বছর হাওরের ফসল রক্ষা বাধের নীতিমালা পরিবর্তন করে জমি যার তাদের দিয়ে পি আইসি গঠন করে হাওর রক্ষা বাঁধের কাজ করানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী ১৫ ডিসেম্বর কাজ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত কোথাও কাজ শুরু হয়নি।
তবে হাওর রক্ষা বাঁধের উপজেলা কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মঈন উদ্দিন ইকবাল জানান- পিআইসি গঠন হয়ে গেছে। দু’একদিনের মধ্যে ওয়েব সাইটে দেয়া হবে, ৪টি দল মাঠ পর্যায়ে পরিমাপের কাজ করছেন, ইতিমধ্যে ২৫ভাগ কাজের পরিমাপ করা হয়েছে বলে জানান তিনি। তিনি জানান- পিআইসি গঠনে স্থানীয় সংসদ সদস্যের পরামর্শ নেয়া হয়েছে, কৃষকদের উপেক্ষা করা সুযোগ কারো নেই। সঠিকভাবে কাজ সম্পাদনে সকলের সহযোগীতার আহবান জানান তিনি। অন্যদিকে, নবাগত পানি উন্নয়ন বোর্ড, পাউবো’র মাঠ প্রকৌশলী রিপন আলী বলছেন- প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) এখনো চুড়ান্ত হয়নি, যে সকল বাঁধে একাধিক পিআইসি জমা পড়েছে, সে সব বাঁধ এলাকায় সকলকে নিয়ে আলোচনা করে চুড়ান্ত করা হবে। এবার কাজ করতে হবে, দুর্নীতি করার কোন সুযোগ নেই। কিন্তু উপজেলা কমিটির কৃষক প্রতিনিধি ও উপজেলা কৃষকলীগের আহবায়ক তাজুল ইসলাম জানান- পিআইসি গঠন এমনকি হাওর রক্ষা বাঁধের ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন নি। স্থানীয়রা জানান- আগে চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্যগণ পিআইসির সভাপতি হতেন। ৫ সদস্যের পিআইসিতে স্থানীয় সংসদ সদস্য মনোনীত ৩ জন, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মনোনীত সদস্য ১ জন থাকতেন। অনেক ক্ষেত্রে সদস্য মনোনয়নে বিলম্বের কারণে পিআইসি গঠন ও বাঁধের কাজ শুরু হতে দেরি হতো। তখন অভিযোগ উঠে পিআইসি ও পাউবোর মাঠ কর্মকর্তাদের অনিয়ম দুর্নীতি ও গাফলতির কারণে অসময়ে বাঁধ ভেঙ্গে হাওরে পানি ডুকে। সরকার কৃষি ও কৃষকের স্বার্থে গুরুত্ব সহকারে দ্রুত কাজ সম্পাদনের লক্ষ্যে নতুন নীতিমালা অনুযায়ী এবার হাওরপাড়ের কৃষকদের দিয়েই পিআইসি গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু নতুন নীতিমালা হলেও পুরনো নিয়মেই পিআইসি গঠনের জোর প্রস্তুতি চলছে শুরু থেকেই। মধ্যস্বত্বভোগী ও অর্থলোভীরাই পিআইসিতে অন্তর্ভুক্ত হতে স্থানীয় সাংসদ, উপজেলা চেয়ারম্যান, মেয়র, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের শরনাপন্ন হচ্ছেন। এবং তাদের মনোনিত লোকজনই পিআইসিতে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছেন বলে মাঠপর্যায়ে জোর আলোচনা রয়েছে।
জানা গেছে- এবার পিআইসির সদস্য সংখ্যা হবে ৫ থেকে ৭ সদস্য বিশিষ্ট। কমিটিতে একজন সভাপতি, ১ জন সদস্য সচিব ও অন্যরা সদস্য হবেন। বাঁধের কাছের জমির প্রকৃত মালিকদের সমন্বয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার পিআইসি গঠন করবেন। প্রয়োজনে ভূমি অফিস, কৃষি অফিস ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের সাথে উপজেলা নির্বাহী অফিসার পরামর্শ করবেন। বিগত বোরো মৌসুমেও নির্ধারিত সময়ে সঠিকভাবে হাওর রক্ষা বাঁধে কাজ না হওয়ায় উপজেলার সবকটি হাওরের ফসল হানি ঘটে প্রায় ৫০ হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হন।