উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখে উন্নত বাংলাদেশ গড়তে আবারও নৌকায় ভোট চাইলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রবিবার বিকেলে যশোর ঈদগাহ ময়দানে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশকে একটি উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই; সেটাই আমাদের লক্ষ্য। আর একমাত্র আওয়ামী লীগই তা পারে। কারণ আওয়ামী লীগই জাতির পিতার নেতৃত্বে দীর্ঘ ২৩ বছর সংগ্রাম করেছে। জাতির পিতার নির্দেশে বাঙালি জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে বিজয় অর্জন করেছে। বিজয়ী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে, সমৃদ্ধ হবে। বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়াবে। বাংলাদেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ হিসেবে ইনশাআল্লাহ আমরা গড়ে তুলবো। অতীতে যেমন নৌকায় ভোট দিয়েছেন, সেইভাবে নৌকায় ভোট দিয়ে নৌকাকে জয়যুক্ত করে আপনাদের সেবা করার সুযোগ দেবেন, এটাই চাই।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, মানুষ সামনের দিকে এগোয়। আর বিএনপি পেছন দিকে যায়। একটা কথা আছে ভূতের পা পেছন দিকে চলে। তো বিএনপি ক্ষমতায় আসলে দেশ পেছন দিকে চলে যায়। কারণ তারা অদ্ভূত হয়ে দেশে আসে, ভূতের মত দেশ চালায়। পাঁচ বছর পর যশোর ঈদগাহ ময়দানে জনসভায় ভাষণ দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে দেশের উন্নয়ন হয়। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে খুন, গুম জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। বাংলা ভাইয়ের রাজত্ব জয়ী হয়। যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলনের সভাপতিত্বে শহরের ঈদগাহ ময়দানে জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন ছিল সোনার বাংলা। কিন্তু ঘাতকরা সেই স্বপ্ন পূরণ করতে দেয়নি। পঁচাত্তর পরবর্তীতে জেনারেল জিয়া ক্ষমতা দখল করে। জিয়ার গণতন্ত্র ছিল যুদ্ধাপরাধীদের পুনর্বাসন আর প্রতি রাতে কারফিউ জারি করে দেশ শাসন। বিএনপি ক্ষমতায় আসলে সারাদেশে জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দেয়। ৬৩ জেলার ৫০০ স্থানে একসঙ্গে জঙ্গি হামলা হয়েছে। জনসভায় আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য পীযুষ কান্তি ভট্টাচার্যসহ নেতৃবৃন্দ। সঞ্চালনা করেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সদর উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীন চাকলাদার। এদিকে, প্রধানমন্ত্রীর এই আগমন ও জনসভা উপলক্ষে সাজসজ্জায় উৎসবের নগরীতে পরিণত হয় যশোর। গোটা শহর যেন জনসভার মাঠ।

জানা যায়, ২০১২ সালের ২০ ডিসেম্বর যশোর ঈদগাহ ময়দানে আওয়ামী লীগের জনসভায় ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ২০১৪ সালের ২৩ মার্চ নির্বাচনী সহিংসতার শিকার অভয়নগরের মালোপড়া পরিদর্শনে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নওয়াপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে ভাষণ দেন। সেটি ছিল উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভা। এর আগে ২০১০ সালে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস উদ্বোধনে আসেন প্রধানমন্ত্রী। জনসভা থেকে প্রধানমন্ত্রী আড়াই ডজন কাজের উদ্বোধন করেন। এর মধ্যে সম্পন্ন হওয়ায় দেড় ডজন এবং এক ডজন প্রকল্পে ভিত্তি প্রস্তর উন্নয়ন কর্মকাণ্ড রয়েছে। দেড় ডজন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হলো কপোতাক্ষ নদের জলাবদ্ধতা দূরীকরণ প্রকল্প (প্রথম পর্যায়), তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় শিক্ষার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে ‘নির্বাচিত বেসরকারি কলেজগুলোর উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় সদর উপজেলার আমদাবাদ কলেজ, শার্শা উপজেলার পাকশিয়া আইডিয়াল কলেজ ও বাঘারপাড়া ডিগ্রি কলেজে নির্মিত দোতলা ভবনের তৃতীয় ও চতুর্থ তলার সম্প্রসারণ কাজ, মনিরামপুর উপজেলায় ৫০০ আসনের শহীদ মশিয়ুর রহমান অডিটোরিয়াম-কাম মাল্টি পারপাস হল নির্মাণ, যশোর পাবলিক লাইব্রেরির উন্নয়ন প্রকল্প; যশোর মেডিকেল কলেজের অ্যাকাডেমিক ভবন, হৈবতপুর, নরেন্দ্রপুর, মহাকাল ও পাতিবিলা ইউনিয়ন ভূমি অফিস ভবন, যশোরের পুলিশ সুপার ভবন ও পুলিশ হাসপাতাল, শেখ রাসেল ভাস্কর্য, শহরের ১৩ কিলোমিটার সড়ক ও ২২ কিলোমিটার ড্রেন নির্মাণ কাজ, ঝিকরগাছা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন এবং অভয়নগরের মালোপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ কাজ। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে মালোপাড়ায় মালো সম্প্রদায়ের উপর হামলা হলে সেখানে তাদের দেখতে আসেন প্রধানমন্ত্রী। তাদের দাবির প্রেক্ষিতে সেখানে মালোপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী এক ডজন প্রকল্পের ভিত্তি প্রস্তর উদ্বোধন করবেন। এরমধ্যে রয়েছে ভৈরব রিভার বেসিন এলাকার জলাবদ্ধতা দূরীকরণ ও টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন প্রকল্প’র অধীনে ভৈরব নদ খনন, যশোর-বেনাপোল ও যশোর-খুলনা জাতীয় মহাসড়কের যশোর অংশ (পালবাড়ী হতে রাজঘাট অংশ) প্রশস্তকরণ প্রকল্প, কেশবপুর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ, যশোর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণ, শহরের ২৫ কিলোমিটার সড়ক ও ২৪ কিলোমিটার ড্রেন নির্মাণ কাজ, ঝুমঝুমপুর কম্পোস্ট প্ল্যান্ট, প্রি-ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট, বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট এবং কন্ট্রোল ল্যান্ডফিল সেল নির্মাণ, ঝিকরগছা উপজেলা পরিষদের সম্প্রসারিত প্রশাসনিক ভবন ও হলরুম নির্মাণ, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের ম্যুরাল স্থাপন এবং যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শেখ রাসেল জিমনেসিয়াম ভবন ও ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি)।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn