ট্রাফিক আইন ভাঙায় তিন মাস পর দেশে প্রবাসীর মরদেহ
ট্রাফিক আইন ভাঙায় মৃত্যুর প্রায় তিন মাস পর দেশে ফিরেছে আমিরাত প্রবাসী গাড়িচালকের মরদেহ। তার নাম মোহাম্মদ বিল্লাল স্বপন (৩৮)। গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার পেরিয়া ইউনিয়নের উত্তর শাকতলি, পিতা আলী আহমদ। সোমবার রাতে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটে তার মরদেহ ঢাকায় পৌঁছেছে। গত ২৯ অক্টোবর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শারজাহ আল কাসেমি হাসপাতালে গাড়িচালক বিল্লাল মারা যান। কিন্তু দুবাই ও শারজাহ ট্রাফিক পুলিশ বিভাগে তার নামে থাকা ট্রাফিক আইন ভাঙার জরিমানা মেটাতে না পারায় ওই হাসপাতালের হিমঘরেই দুই মাস দশ দিন পড়ে ছিল বিল্লালের মরদেহ। জানা গেছে, মোহাম্মদ বিল্লাল স্বপনের নামে লাইসেন্সের বিপরীতে বিভিন্ন সময়ে ট্রাফিক আইন ভাঙার জন্য দুটি মামলা রয়েছে, দুবাইতে ৬০ হাজার দিরহামের প্রায় সাড়ে ১৩ লাখ টাকা ও শারজাহয় ১১ হাজার দিরহামের আড়াই লাখ টাকার জরিমানা। বিল্লালের এক প্রতিবেশী ও দুবাই ড্রাগন মার্টের বাংলাদেশি বিপণনকর্মী মোহাম্মদ শাকিল জানান, ‘এ অবস্থায় মরদেহ কীভাবে দেশে পাঠানো যায় ও জরিমানা মওকুফ করা যায় তা জানতে আমরা দুবাই বাংলাদেশ কনস্যুলেটে গিয়েছিলাম। কিন্তু কনস্যুলেট কোনো কথা আমলেই আনতে চাইলো না।’ শাকিল জানান, আমরা তাদের কাছে কোনো সাহায্যপ্রার্থী হয়ে যাইনি, কেবল পরামর্শের জন্য গিয়েছিলাম। তারা বললো, আরব স্পন্সর যখন আছে স্পন্সরই করবে সব, আমাদের কিছু করার নাই। পরে বিল্লালের গাড়ির মালিকের মাধ্যমে দুবাই পুলিশ ট্রাফিক বিভাগের জরিমানা মওকুফ করতে পারলেও শারজাহ ট্রাফিকের জরিমানা মওকুফ করা যায়নি।
বিল্লালের ছেলে-মেয়ে জানান, এ অবস্থায় মৃত বিল্লালের জরিমানা পরিশোধ করতে তিনিসহ মোহাম্মদ শাকিল, মোহাম্মদ শহীদ, খোরশেদ সেলিম উল্লাহ, আবদুর রাজ্জাক, মোহাম্মদ এনায়েত ও মোহাম্মদ ইমরান প্রবাসীদের কাছ থেকে সাহায্য নেয়া শুরু করেন। অবশেষে তারা তাদের চেনাশোনা প্রতিবেশী, সহকর্মী ও নিজেরা অংশ নিয়ে ১১ হাজার দিরহাম সংগ্রহ করে তা দিয়ে জরিমানা মেটালে আরব স্পন্সর বিল্লালের মরদেহ দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। আঠারো বছর আগে ভাগ্য বদলের আশায় সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজাহে প্রবাস জীবন শুরু করেছিলেন বিল্লাল। চাকরি নেন স্থানীয় এক আরবের আধীনে থেকে প্রাইভেট গাড়িচালকের। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম এ প্রবাসীর খরচেই চলতো দেশে থাকা তার স্ত্রী, দুই ছেলে, এক মেয়ে, বৃদ্ধ বাবা-মা আর ছোট ভাইয়ের জীবন।