মো. মনজুরুর রহমান ক্রমবিবর্তনশীল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির নব নব আবিষ্কারের সহায়তায় এগিয়ে যায় মানব সভ্যতা। ঠিক তেমনিভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের আবিষ্কার আমাদের ব্যক্তিগত যোগাযোগের ক্ষেত্রে সাধন করছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। বর্তমানে বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের বৃহত্ একটি অংশ আজ ফেসবুক ছাড়া একটি মুহূর্তও কল্পনা করতে পারে না। ফেসবুক এমনই এক মাদকের মতো নেশায় পরিণত হয়ে গেছে যে, একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর ফেসবুকে প্রবেশ করতে না পারলে তারা অস্থির হয়ে পড়ে। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর থেকে শুরু করে গভীর রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত ফেসবুকে ঢু মারা বন্ধ নেই। বর্তমানে বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ৫ কোটির বেশি। তার মধ্যে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৭০ লাখের মতো। এর তিন ভাগের একভাগ অর্থাত্ ৫৬ লাখ ফেসবুক ব্যবহারকারী যদি প্রতিদিন এক ঘণ্টা করে ফেসবুক ব্যবহার করেন তাহলে দৈনিক ৫৬ লাখ ঘণ্টা তথা এক দিনেই ৬৪ হাজার ঘণ্টা অপচয় হচ্ছে। বাংলাদেশে ১৩-১৭ বছর বয়সী ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৭ শতাংশ এবং ১৮ থেকে ২২ বছর বয়সীদের হার ৪২ শতাংশ। (দ্যা ইন্টারনেট সোসাইটি বাংলাদেশ, ঢাকা)
একজন সুস্থ মানুষের মস্তিষ্কে ১০ হাজারেরও অধিক শক্তিশালী নিউরন আছে যা একটি কম্পিউটারের চেয়ে অনেক শক্তিশালীভাবে কাজ করতে সক্ষম। কিন্তু আমাদের তরুণদের মস্তিষ্কে আজ ফেসবুক এবং সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং নামক পরজীবী বাসা বেঁধেছে যা তরুণ প্রজন্মকে সম্মুখে অগ্রসর হওয়ার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করছে। স্কুলপড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রী থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের বৃহত্ একটি অংশ আজ ফেসবুকের নেশায় আক্রান্ত। তারা যতটুকু না পড়াশুনা করেন তার চেয়ে বেশি সময় ব্যয় করেন ফেসবুকে। জাতি যে তাদের কাছে কিছু আশা করে এটা তারা ভুলে যেতে শুরু করেছে। যে সময় চেতনা আর সৃষ্টিশীলতা দিয়ে জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, সে সময় গ্রাস করে নিচ্ছে ফেসবুক। বাংলাদেশ ফেসবুকের জন্য বিশাল একটি বাজার। তারা তাদের ব্যবসায়িক স্বার্থ হাসিল করছে আমাদের তরুণ এবং ছাত্র-ছাত্রীদের বিশাল একটি অংশের ক্ষতি সাধন করে। যেহেতু আমরা ফেসবুকের নেশায় আক্রান্ত হয়ে পড়েছি, কাজেই এখান থেকে রাতারাতি কিংবা একেবারে বের হওয়া হয়ত সম্ভব নয়। ফেসবুক বন্ধ করলেও আসক্তরা ঠিকই  প্রক্সি সার্ভার দিয়ে ফেসবুক ব্যবহার করবে। কাজেই সরকারকে এমন একটি সিদ্ধান্ত নিতে হবে যাতে এ আসক্তি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। রোধ করা যায় শিক্ষার্থীদের সময় ও মেধার অপচয়। এটা করা গেলে নিশ্চিতভাবে আমাদের তরুণ প্রজন্ম তাদের শ্রম ও মেধা দিয়ে বাংলাদেশকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হবে। 
লেখক:শিক্ষার্থী, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn