প্রধানমন্ত্রীর সিলেট সফরে প্রত্যাশা অনেক
ওয়েছ খছরু-
সিলেটে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের উন্নয়ন চলমান। অনেক প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। ডিসেম্বরের মধ্যে বেশকিছু উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। কিন্তু কিছু মেগা প্রকল্প নিয়ে সিলেটবাসীর আশা ব্যাপক। ইতিমধ্যে এসব প্রকল্প নিয়ে সিলেটবাসীর সঙ্গে কয়েক দফা কথা হয়েছে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের। সিলেট উন্নয়ন নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছেন অর্থমন্ত্রীর অনুজ ড. একে আব্দুল মোমেনও। সবার সঙ্গে কথা বলে স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদী উন্নয়নের ছক সাজাচ্ছেন। ঢাকার সঙ্গে সিলেটের যাতায়াতের যে তিনটি পথ রয়েছে সেই তিনটি পথ ক্রমেই সিলেটবাসীর দুঃখে পরিণত হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক। প্রায় ৩৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়কের সর্বশেষ উন্নয়ন করেছিলেন সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম সাইফুর রহমান। এক লেন থেকে দুই লেনের সড়কে উন্নীত করা হলেও এখন সেটি গলার কাঁটা। ঢাকা-সিলেট রুটে চলাচলও ক্রমেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা। এ কারণে বর্তমান সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদের শুরু থেকেই ঢাকা-সিলেট ফোর লেন কাজ নিয়ে দাবি উঠেছে। সড়কপথে মৃত্যু ঝুঁকি বাড়ার কারণে সিলেট-ঢাকা রেলপথ হচ্ছে বিকল্প পথ। কিন্তু সেই বৃটিশ আমলের রেলপথ দিয়ে ঢাকা-সিলেট রুটে রেল যাতায়াত করছে। পুরাতন লাইন হওয়ার কারণে প্রায়শই ওই রুটে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে ট্রেন। সিডিউল লণ্ডভণ্ডের ঘটনা ঘটে নিয়মিত। এছাড়া ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা লেগে যায় ঢাকা যেতে। নতুন কোচও নামানো হচ্ছে না। আগের রেলগাড়ি দিয়ে যাত্রীসেবা দেয়া হচ্ছে। ঢাকা থেকে সিলেট পর্যন্ত রেল যোগাযোগের পথকে সুগম করতে ইতিমধ্যে ডাবল লাইনের দাবি উঠেছে। সিলেট-আখাউড়া পর্যন্ত ডাবল লাইনের পথ নির্মাণ করা হলে সিলেট থেকে ঢাকা পর্যন্ত রেল যোগাযোগের নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে। পাশাপাশি নতুন কোচ নামানোর দাবিও দীর্ঘদিনের। আকাশপথে সিলেট থেকে ঢাকায় যাওয়ার সুবিধা বেশি। দেশের বাইরে থেকে প্রায় প্রতিদিন বিমানের বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এগুলো ফের ঢাকায় চলে যায়। এতে সিলেটের যাত্রীরা স্বল্প খবচে স্বল্প সময়ে ঢাকায় যেতে পারেন। কিন্তু বিমানের ফিরতি কোনো ফ্লাইট নেই। জরুরি প্রয়োজনে সিলেট থেকে ঢাকায় গেলে ফিরতে ফ্লাইট না থাকায় বেশ অসুবিধা হচ্ছে। পাশাপাশি সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর আন্তর্জাতিক হলেও এখনো অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়নি। এ কারণে ২৪ ঘণ্টা সার্ভিস দেয়ার সময় সুবিধা এখানে বাড়েনি। লোকবল সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ে ছোট। এখানে ঝুঁকি নিয়ে নামতে হয় বোয়িং বিমানকে। ফলে বিমানবন্দরের রানওয়ে আরো সম্প্রাসারণের দাবি অনেক দিনের। ইতিমধ্যে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবনা বিমান মন্ত্রণালয়ে হলেও সেটি আলোর মুখ দেখেনি। ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কার্গো হাউস ও নতুন টার্মিনাল নির্মাণের দাবি দীর্ঘদিনের। পাশাপাশি বিমানবন্দর বাইপাস সড়ক নির্মাণ কাজও আলোর মুখ দেখেনি। সিলেটের আওয়ামী লীগ নেতারা জানিয়েছেন, সিলেটের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে স্বাভাবিক করতে ইতিমধ্যে বেশ কিছু প্রকল্প আলোচনায় রয়েছে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত নিজেই এসব বিষয়ে ওয়াকিবহাল। তারা জানান, প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে সিলেটে প্রস্তুতি সভা হয়েছে। এই সভায় ইতিমধ্যে বেশ কিছু প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়েছে। এই প্রস্তাবনা প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে বলে জানান তারা। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০০৯ সালে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ার পরপরই সিলেটের উন্নয়ন নিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েন। এর আগের সরকার বেশ কিছু উন্নয়ন প্রকল্পের কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে গেলেও টাকা ছাড় দিয়ে যায়নি। অর্থমন্ত্রী চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে সিলেটের কাজিরবাজার সেতু, সুনামগঞ্জে সুরমার ওপর সেতু, গোলাপগঞ্জে কুশিয়ারা নদীর ওপর সেতু খুব স্বল্প সময়ে নির্মাণ করেন। সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রিফুয়েলিং সিস্টেমও চালু করেন। শতকোটি টাকার ওই প্রকল্প প্রায় তিন বছর আগেই সমাপ্ত করা হয়। সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়কে পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় করা হয়, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজকে পূর্ণাঙ্গ করা হয়। এসব কাজের বাইরে অর্থমন্ত্রী নিজ উদ্যোগে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার স্থাপন, সিলেট সদর উপজেলায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম নির্মাণ করেন। ছাতকে সুরমার ওপর ব্রিজ নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। সিলেট-ভোলাগঞ্জ সড়কের সাড়ে ৪শ’ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করে টাকা ছাড় দেয়া হয়। এই প্রকল্প এখন চলমান। সিলেট সিটি করপোরেশনের নতুন ভবন নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। সিলেটে চারটি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নির্মাণের কাজ শুরুর কথা রয়েছে। এর বাইরে সিলেটের মেগা প্রকল্প শাহজালাল ফার্টিলাইজার কোম্পানির নির্মাণ কাজ শেষ করা হয়েছে। প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ প্রকল্প এখন উৎপাদনে রয়েছে। সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য বদরউদ্দিন আহমদ কামরান জানিয়েছেন, সিলেট উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তরিক। প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়ন প্রকল্প এখন সিলেটে দৃশ্যমান। এবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিলেট সফরকালে বেশ কিছু উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। এখন সেগুলো যাচাই-বাছাই পর্যায়ে রয়েছে। সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, ঢাকা-সিলেট মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীত, রেলের ডাবল লাইন, ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণ ও নতুন টার্মিনাল নির্মাণ কাজ আমরা প্রস্তাবে রেখেছি। প্রধানমন্ত্রী সিলেটের উন্নয়নে সব সময় হাত খুলে দিয়েছেন। এবারো তিনি সিলেটে এসে সিলেটবাসীকে অনেক কিছুই উপহার দেবেন বলে জানান।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কমিটি: সিটি করপোরেশন ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সারা দেশে সফর শুরু করছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। আগামী ২৬শে জানুয়ারি থেকে ১৫টি দলে বিভক্ত হয়ে শুরু হবে সাংগঠনিক সফর। টিমগুলোর নেতৃত্বে থাকবেন দলের উপদেষ্টা পরিষদ ও সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যরা। সিটি করপোরেশন ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল সিলেটেও আসছেন। সিলেট মহানগরী ও উপজেলা পর্যায়েও এই প্রতিনিধি দলের সদস্যরা যাওয়ার কথা রয়েছে। এ ছাড়া প্রতিনিধি দলটি সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলাও সফর করবেন। এ সময় তারা বিভিন্ন স্থানে সভা-সমাবেশ ও দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। দলীয় সূত্র জানায়, সিলেটে সাংগঠনিক প্রতিনিধি দলে থাকবেন আবুল মাল আবদুল মুহিত, তোফায়েল আহমেদ, নুরুল ইসলাম নাহিদ, মাহবুব-উল-আলম হানিফ, আহমদ হোসেন, অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, বদরউদ্দিন আহমদ কামরান, অধ্যাপক রফিকুর রহমান ও মো. গোলাম কবীর রাব্বানী চিনু। তবে কবে নাগাদ এই প্রতিনিধি দল সিলেট আসছেন তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।