চ্যালেঞ্জের মুখে বিএনপি!
আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচনকালীন সরকারের দাবি আদায়ে চ্যালেঞ্জের মুখে মাঠের বিরোধী দল বিএনপি। নির্বাচনকালীন ‘সহায়ক সরকার’র অধীনে নির্বাচনের দাবিতে ঘরোয়া সভা-সমাবেশে সরব থাকলেও সক্রিয় কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নামতে পারছেন না দলটি। সাংগঠনিক ‘দুর্বলতা’ এবং মামলার চাপে অনেকটাই ব্যাকফুটে দশম জাতীয় সংসদ বর্জনকারী এই দলটি। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে একাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকারের চার বছরপূর্তিতে শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে তিনি বলেন, ‘সংবিধান অনুযায়ী ২০১৮ সালের শেষ দিকে একাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কিভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে তা আমাদের সংবিধানে স্পষ্টভাবে বলা আছে।’ বিএনপি নেতারা মনে করেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিএনপি শুধু চ্যালেঞ্জের মুখে নয়, গোটা দেশের মানুষের জন্য চ্যালেঞ্জ, গণতন্ত্রের জন্য চ্যালেঞ্জ, মৌলিক অধিকার রক্ষার চ্যালেঞ্জ। তাই সকল দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনের জন্য ‘উপযুক্ত’ সময় সহায়ক সরকারের রূপরেখা ঘোষণা করতে চায় বিএনপি। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর যে সংবিধানের কথা বলছেন, সেখানেও নির্বাচনকালীন সরকার সম্পর্কে স্পষ্ট কোনো বিধান নেই। তাই তার আলোচনার মাধ্যমে সমাধান চায়।
শনিবার দলের পক্ষে আনুষ্ঠানিক এক প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সংবিধানে নির্বাচনকালীন সরকার সম্পর্কে স্পষ্ট কোনো বিধান নেই। বিদ্যমান সংবিধান অনুযায়ী যদি সংসদ বহাল রেখে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তাহলে সেই নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। কারণ সংসদ বহাল থাকা অবস্থায় নির্বাচনকালীন সরকারও হবে বিদ্যমান সরকারের অনুরুপ। নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে একটি প্রস্তাবনা দেয়ার ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা কেমন হতে পারে তা নিয়ে আমাদের দলের একটি চিন্তা-ভাবনা আছে। কেননা একটি সুন্দর পরিবেশে সংলাপ অনুষ্ঠিত হলে জাতির মনে যে অনিশ্চিয়তা বিরাজ করছে তা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে বলে আমরা আস্থা রাখতে চাই। তবে কবে নাগাদ বিএনপি নির্বাচনকালীন সরকারের প্রস্তাবনা দিবে তা তিনি স্পষ্ট করেননি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, আমরা সহায়ক সরকারের রূপরেখা দেবো। তবে এর রূপরেখা কেমন হবে তা অনেক সময় বক্তব্যের মধ্যেই বলছি। নির্বাচনী হাওয়া আরেকটু জোরেশোরে শুরু হউক তারপর আমরা সহায়ক সরকারের রূপরেখা ঘোষণা করবো।
তিনি বলেন, যে সংবিধানের কথা বলা হচ্ছে। এটা থেকে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া আরও নতুন নতুন কিছু আইন সংযোজন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে শুধুমাত্র ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার জন্য। আর কিছু নয়। তিনি আরও বলেন, সহায়ক সরকার, সর্বদলীয় সরকারের কথা বলা হচ্ছে। সরকার তাতে সাড়া না দিয়ে বাকশালী রাজনীতির দিকে যাচ্ছে। কিন্তু আমরা চাই, সংবিধান বাতিল করে আলোচনার মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন। দলের যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, সংবিধান মানুষের ইচ্ছার কারণেই অতীতে লণ্ডভণ্ড হয়েছে। ১৯৯৬ সালে সংবিধান লংঘন করে আওয়ামী লীগ যেভাবে আন্দোলন করেছিল, তখন তো সংবিধানের পরিবর্তন বেগম খালেদা জিয়া এনে দিয়েছিলেন। যে সব স্পষ্ট করে কথা বলার সৎ সাহস প্রধানমন্ত্রীর নাই, গণতন্ত্রের পক্ষে কথা বলার সৎ সাহস নাই। বরং একটা উচ্ছ্বাস আছে একতরফাভাবে ক্ষমতাকে প্রলম্বিত করে আওয়ামী লীগে আরও কিছুদিন বাঁচিয়ে রাখা। এখানে মানুষের থাকুক আর না থাকুক এটা বিষয় নয়।
তিনি বলেন, আমরা আলোচনা- সংলাপের কথা বলছি, কিন্তু কোনো কিছু শুনছেন না তিনি (প্রধানমন্ত্রী)। তিনি তাৎক্ষণিকভাবে উড়িয়ে দিচ্ছেন, চূড়ান্ত অবস্থানে চলে যাচ্ছেন। আমরাও ওই রকম চূড়ান্ত মুহূর্তেই সহায়ক সরকারের রূপরেখা ঘোষণা করবো। এদিকে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নামে দায়ের করা চলমান ১৪টি মামলা রাজধানীর পুরান ঢাকার বকশীবাজার আলিয়া মাদ্রাসায় স্থাপিত বিশেষ আদালত-৫ এ স্থানান্তর করাটা বিএনপিতে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত ৮ জানুয়ারি আইন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে যে ১৪টি মামলা স্থানান্তরের কথা জানানো হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে ঢাকা মহানগর দায়রা আদালতে ৯টি, বিশেষ জজ আদালতে ৩টি ও ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে ২টি মামলা বিচারাধীন। এসব মামলার মধ্যে ১১টিই বর্তমান সরকারের আমলেই দায়ের করা। মামলাগুলো হচ্ছে— দারুস সালাম থানায় করা নাশকতার আট মামলা, গ্যাটকো দুর্নীতি মামলা, নাইকো দুর্নীতি মামলা, বড় পুকুরিয়া কয়লা খনি দুর্নীতি মামলা, যাত্রাবাড়ী থানায় করা বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা ও মানহানির অভিযোগে দায়ের করা দুই মামলা। এছাড়া এক এগারোর সময় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষের দিকে। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার কার্যক্রমও শেষ পর্যায়ে রয়েছে। পুরান ঢাকার বকশীবাজার আলিয়া মাদ্রাসায় স্থাপিত বিশেষ আদালত-৫ এর বিচারক ড. আখতারুজ্জামান এর আদালতে মামলা দুই কার্যক্রম চলছে। আগামী ১৬, ১৭ ও ১৮ জানুয়ারি এ মামলা দুটির কার্যক্রমের দিন ধার্য রয়েছে। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে চলামান মামলাগুলো প্রসঙ্গে আলাল বলেন, মামলাগুলো আইনী প্রতিক্রিয়া মধ্যদিয়ে সম্পূ্র্ণ হবে। আর সরকার যদি মনে করে বিএনপির ৩০০ সম্ভাব্য প্রার্থীকেই কারাগারে রেখে নির্বাচন করবে….। সেই একটা আভাস প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে অবশ্য পাওয়া গেছে।