এম এম মাসুদ- ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) ২৮ দেশের বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। গত কয়েক বছর ধরে রপ্তানি ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় এ প্রবৃদ্ধি এসেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসেও দেশের এই বড় বাজারে রপ্তানি বেড়েছে ১০.৯৫ শতাংশ। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) ও পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে ।  সংশ্লিষ্টরা বলেন, ইউরোপের অর্থনীতিতে আগের তুলনায় গতির পাশাপাশি চাহিদা বেড়েছে। আর ডলারের বিপরীতে ইউরো শক্তিশালী হয়েছে।ফলে বাংলাদেশের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। তবে বাংলাদেশের রপ্তানি আরো বেশি হওয়া দরকার ছিল বলে তারা মনে করেন।  বিজিএমইএ’র সহসভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেন, বর্তমান সময়টা অন্যদের চেয়ে আমাদের ভালো। এ ছাড়া নিরাপত্তা, ডিজিটালাইজেশনসহ পোশাক কারখানাগুলোর পরিবেশ উন্নয়নে আমরা নানা পদক্ষেপ নিয়েছি; প্রচুর বিনিয়োগ করেছি। এতে বায়ারদের আস্থা বেড়েছে। তারই ফল পাওয়া যাচ্ছে এখন। ফলে ইউরোপে চাহিদা বেড়েছে। সেপ্টেম্বরে রপ্তানি কমেছিল। আর অন্য মাসগুলোতে রপ্তানি আয়ে ভালো প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তিনি বলেন, দুই ক্রেতাজোট অ্যাকর্ড এবং অ্যালায়েন্সের সংস্কার কার্যক্রমের ফলে বিশ্বব্যাপী ক্রেতা প্রতিষ্ঠান এবং ভোক্তাদের কাছে বাংলাদেশের পোশাকের আস্থা বেড়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের ডেনিমের চাহিদা বেড়েছে অনেক বেশি। ইইউতে বাংলাদেশ এখন ডেনিমের প্রধান রপ্তানিকারক দেশ। 

ইপিবি ও বিজিএমইএ তথ্য অনুযায়ী, গত ছয় মাসে ইইউতে পোশাক রপ্তানি বেড়েছে আগের একই সময়ের তুলনায় ১০.৯৫ শতাংশ। গত বছরের একই সময়কালে বৃদ্ধির হার ছিল ১০.১২ শতাংশ। এর আগে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের একই সময়ে বৃদ্ধির হার ছিল ৭.৩৪ শতাংশ। মাঝখানে ২০১৪-১৫ অর্থবছরের প্রবৃদ্ধি আগের বছরের ২১ শতাংশ থেকে কমে মাত্র সাড়ে ৩ শতাংশে নেমে আসে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে ইইউ বাজারে পোশাক রপ্তানি সবচেয়ে বেশি ২৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) ‘ওয়ার্ল্ড ট্রেড স্ট্যাটেসটিকস রিভিউ ২০১৭’ প্রতিবেদন অনুযায়ী, একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পোশাক রপ্তানিকারক দেশ। তবে ইইউ জোট হিসাবে নিলে বাংলাদেশ তৃতীয়। ডব্লিউটিওর প্রতিবেদন অনুযায়ী, পোশাক রপ্তানিতে বরাবরের মতো শীর্ষ অবস্থানে আছে চীন। বিশ্বের মোট পোশাক রপ্তানির ৩৬.৪ শতাংশই চীনের দখলে। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ২৮ দেশের জোট ইইউর প্রবৃদ্ধি ৪ শতাংশ। তৃতীয় বাংলাদেশ। চতুর্থ শীর্ষ পোশাক রপ্তানিকারক দেশ ভিয়েতনামের প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশ। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের পোশাক রপ্তানির ৪ শতাংশ তাদের দখলে আছে।  জানা গেছে, ২০০১ সাল থেকে ইইউ জোটের ২৮ দেশে পণ্য রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা ভোগ করছে বাংলাদেশ। এরপরই ৫০ কোটি ক্রেতার বাজার ইইউতে পোশাক রপ্তানি গতি পায়।
ইপিবি ও বিজিএমইএ তথ্য মতে, গত জুলাই-ডিসেম্বরে ইউরোপে পোশাক রপ্তানির মোট পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৪৭৭ কোটি ডলার। এর মধ্যে ৯৫৮ কোটি ডলারই এসেছে ইইউ থেকে। আগের বছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ৮৬৩ কোটি ডলার। রপ্তানি বেড়েছে ৯৫ কোটি ডলার, যা স্থানীয় মুদ্রায় ৭ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। ইউরোপে বাংলাদেশের ওভেনের (শার্ট-প্যান্ট) তুলনায় নিটের (গেঞ্জি জাতীয় পোশাক) চাহিদা বেশি। এ সময়ে নিট পোশাকের রপ্তানি হয়েছে ৫৫৬ কোটি ডলার। ওভেনের হয়েছে ৪০২ কোটি ডলার। ওভেনের তুলনায় নিটের প্রবৃদ্ধিও ভালো। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ওভেনের রপ্তানি ৯ শতাংশেরও কম। নিটের বেড়েছে প্রায় ১৩ শতাংশ।  ইইউতে বড় বাজার জার্মানি। আলোচ্য সময়ে দেশটিতে রপ্তানি হয়েছে ২৬৭ কোটি ডলারের পোশাক। রপ্তানি বেড়েছে মাত্র ১.২৫ শতাংশ। দ্বিতীয় প্রধান বাজার যুক্তরাজ্যে রপ্তানি হয়েছে ১৮৫ কোটি ডলার। আগের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে ২১ শতাংশ। ২৬ শতাংশ বেড়ে স্পেনে রপ্তানি দাঁড়িয়েছে ১১৩ কোটি ডলার। পরিমাণে খুব বেশি না হলেও রেকর্ড ১৭৫ শতাংশ হারে রপ্তানি বেড়েছে লিথুয়ানিয়ায়। ইপিবি সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ১ হাজার ৪৭৭ কোটি ২৭ লাখ, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৭.৭৫ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে নিটওয়্যার খাতের পণ্য রপ্তানিতে ৭৫৯ কোটি ৫২ লাখ ডলার এবং ওভেন পোশাক রপ্তানিতে ৭১৭ কোটি ৭৫ লাখ ডলার আয় হয়েছে। তথ্যে দেখা যায়, চলতি বছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে মোট রপ্তানি আয়ের মধ্যে ৮২ শতাংশই এসেছে তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে। এ খাতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছে ২.৭৬ শতাংশ। এই ছয় মাসে নিট খাতে রপ্তানি বেড়েছে ১১.৪৭ শতাংশ। আর ওভেনে বেড়েছে ৪.০৪ শতাংশ।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn