আসামে বাংলাভাষী বিতাড়নের উদ্যোগে বিক্ষোভ
ভারতের আসাম রাজ্য থেকে বাংলাভাষী লোকজনকে বিতাড়নের উদ্যোগ নেওয়ার প্রতিবাদে কলকাতার আসাম ভবনের সামনে বিক্ষোভ করেছে ‘আমরা বাঙালি’ সংগঠন। গতকাল বৃহস্পতিবার সমাবেশে আসামের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনওয়ালের কুশপুত্তলিকা দাহ করে বিক্ষুব্ধ ‘আমরা বাঙালি’র সদস্য ও সমর্থকেরা। তারা স্লোগান তোলে ’হিন্দু-মুসলিম জানি না, বাঙালি ছাড়া বুঝি না’। ‘আমরা বাঙালি’র সর্বভারতীয় সম্পাদক বকুল চন্দ্র রায় বিক্ষোভ সমাবেশে বলেছেন, ‘আসাম থেকে বাঙালি বিতাড়নের একটা চক্রান্ত চলছে। আসামের বাঙালিদের কার্যত রাষ্ট্রহীন-দেশহীন করার ষড়যন্ত্র চলছে। এটা বাঙালিরা মেনে নেবে না। বলা হচ্ছে, ৩১ ডিসেম্বর প্রকাশিত নাগরিক পঞ্জিতে যাদের নাম ওঠেনি, তাদের নাম পরবর্তী সময়ে না উঠলে তারা দাবি জানাতে পারবে ট্রাইব্যুনালে। আর তারপর বাঙালিদের ঠাঁই হবে ডিটেনশন ক্যাম্পে। এটা মেনে নেওয়া যায় না। তাই এর বিরুদ্ধে আমাদের দেশব্যাপী আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। আমাদের দাবি, আসামের একজন বাঙালিকেও নাগরিকত্বহীন করা যাবে না।’ এর আগে সম্প্রতি আমরা বাঙালির কেন্দ্রীয় সহসম্পাদক তারাপদ বিশ্বাস বলেন, ‘আসামে বাঙালিরাই ভূমিপুত্র। কিন্তু প্রচার করা হচ্ছে বাঙালিরা বিদেশি।’ তিনি বলেন, ‘ব্রহ্মদেশ থেকে আসা অহোম জনগোষ্ঠী ১২২৮ খ্রিষ্টাব্দ থেকে আসামে বসবাস শুরু করে। তাদের আসার বহু যুগ আগেই বাঙালি জনগোষ্ঠী আসামে ছিল। আজকের আসামের সংস্কৃতির উৎসকেন্দ্র কামরূপী সংস্কৃতি, যা রাঢ় গাঙ্গেয় সভ্যতা-সংস্কৃতির সঙ্গে ব্রহ্মপুত্র সংস্কৃতির মিশ্রিত রূপ। তাই অসমীয়দের অস্তিত্ব বিপন্ন হওয়ার দাবিটি দুর্বোধ্য। সুদীর্ঘ ৮০০ বছর ধরে অসমিয়াদের অস্তিত্ব কোথায়, কখন, কোন ক্ষেত্রে, কীভাবে বিপন্ন হয়েছে, তা আদৌ স্পষ্ট নয়। তাই অসমিয়া অস্তিত্ব বিপন্ন হচ্ছে, এমন ধারণা পরিকল্পিতভাবে জাতি বিদ্বেষ প্রচার ছাড়া আর কিছু নয়।’
তারাপদ বিশ্বাস বলেন, ‘এত দিন বাঙালির ভোটে সরকার নির্বাচিত হয়েছে। আজ তারাই বিদেশি হতে চলেছে, এটা মেনে নেওয়া যায় না, যাবে না। তাই আমরা বাঙালি সংগঠন লাগাতার আন্দোলনের ডাক দিয়েছি।’ পশ্চিমবঙ্গের পাশের রাজ্য আসামে সম্প্রতি প্রকাশ করা হয় আসামের রাষ্ট্রীয় নাগরিক পঞ্জির খসড়া। এতে উঠে এসেছে ১ কোটি ৯০ লাখ মানুষের নাম। যদিও আসামে নাগরিক পঞ্জির রাজ্য সমন্বয়ক প্রতীক হাজেলা সুপ্রিম কোর্টে আগেই জানিয়েছিলেন, দুই কোটি নাগরিকের আবেদনপত্রের যাচাই-বাছাই সম্পন্ন করা হয়েছে। ৩৮ লাখ মানুষের নথিপত্রে সামান্য ত্রুটি থাকার কারণে পুনঃপরীক্ষার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এই নথি পেশের পর তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে ১ কোটি ৯০ লাখ মানুষের। তাই এই খসড়া প্রকাশের পর তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে নওগাঁসহ বরাক উপত্যকার বাঙালিদের মধ্যে। দেখা যায়, বহু বাঙালির নাম ওঠেনি। বাদ পড়ে যাওয়া ব্যক্তিরা অভিযোগ তুলেছেন, বাঙালিদের আসাম থেকে বিতাড়নের পাঁয়তারা চলছে।