সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলের কৃষকদের সাথে মিলছেনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের হিসাব নিকাশ। এলাকার কৃষকরা ভাবছেন এবার  ৩০ থেকে ৪০ ভাগ জমিতে তারা বিভিন্ন কারনে চাষাবাদ করতে পারবেন না। তবে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ মনে করছে এবার লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে। কৃষকরা এবার আবাদি জমির পানি নিস্কাশন সময়মতো না হওয়ায়  জমির আবাদ কমে যাবে বলে আশংকা করছেন।  কারোকারো মতে জেলার বিশ্বম্ভরপুর, জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা ও মধ্যনগর এলাকার বোরো জমি এবার বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হবে। সেখানকার জমি পতিত থাকবে বেশি।  ‘জামালগঞ্জ, দিরাই, নেত্রকোণার খালিয়াজুরি উপজেলা নিয়ে পাগনার হাওরের অবস্থান। এই হাওরে জমি রয়েছে ১৫ হাজার হেক্টর। শনিবার পর্যন্ত চাষাবাদ হয়েছে প্রায় এক হাজার হেক্টর। হাওরের অপেক্ষাকৃত উঁচু এলাকা ভীমখালি, নয়াহালট, মাতারগাঁও এলাকায় কিছু চাষাবাদ হয়েছে।’  হাওরের বেশিরভাগ অংশে কোমর থেকে গলা সমান পানি। ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে পানি নিস্কাশন হলে চাষাবাদ হবে, না হয় জমি পতিত থাকবে। গত কয়েক দিন ধরে ঢালিয়া স্লুইসগেট দিয়ে এবং পিয়াইন নদী দিয়ে পানি নামলেও নিস্কাশনের গতি একেবারে কম।কৃষকদের ধারনা ‘হাওরের ৭৫ ভাগ জমিই চাষাবাদ হবে না এবার।’ জামালগঞ্জের অপর বৃহৎ হালির হাওরপাড়ের কৃষকদের মতে ৪ ভাগের ১ ভাগ জমি এখন পর্যন্ত্য চাষ করা হয়নি। ৩ ভাগ জমিতে কোমর সমান পানি, চারায় ধান এসে যাচ্ছে, পরে রোপন করলেও দেখা যাবে ধান ভাল হচ্ছে না।’ বিশ্বম্ভরপুরের করচার হাওরের ৮ হাজার হেক্টর জমির মধ্যে ৩ হাজার হেক্টর এখনো পানির নীচে। বেশীর ভাগ কৃষক বলছেন,‘চারার মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে, আরও কয়েক দিন গেলে রোপন করলেও ধান হবে না।’ বিশ্বম্ভরপুরে ‘রক্তি নদী দিয়ে হাওরের পানি ধীরগতিতে নিস্কাশন হচ্ছে।’ দিরাই-শাল্লার বৃহৎ হাওর কালিকুটায় রফিনগর ইউনিয়নের পুরাতন কলকলিয়া খাল দিয়ে এখনো পানি ঢুকছে, দাউদপুর স্লুইসগেট দিয়ে ধীরগতিতে বের হচ্ছে। নিস্কাশন কম হওয়ায় হাওরের ৪০ ভাগ জমি এখনো পানির নীচে রয়েছে।  ,‘২৫ মাঘের মধ্যে পানি যদি নানা কমে তা হলে চারা বপন হবে না । সকল জমি পতিত থাকবে বলে কৃষকদের আশংকা। জগন্নাথপুরের বৃহৎ হাওর নলুয়ায় জমি রয়েছে ১০ হাজার হেক্টর। , ‘চাষাবাদ হয়েছে ৬ হাজার হেক্টরের মতো, হাওরের হলহলিয়া স্লুইসগেট ও বেতাউকা স্লুইস গেটের কপাট শুক্রবার খুলে দেবার পর পানি নিস্কাশন হচ্ছে। তবে নিস্কাশনের গতি কম। পানি নামলে আরো জমি চাষাবাদ ্করা যাবে বলে অনেকে আশা করছেন। ধর্মপাশার ‘টগার হাওরের ৩০ ভাগ জমিতে চাষাবাদ হয়েছে। পুরো মাঘ মাস চাষাবাদ হবে, তাতে আরো ৩০ ভাগ চাষাবাদ হতে পারে। ৪০ ভাগ জমি পতিত  থাকার সম্ভাবনা।  হাওরের পানি ফাল্গুন মাসের মধ্যে না কমলে সামান্য বৃষ্টিতেই আবার চাষাবাদ করা জমি জলাবদ্ধতা হতে পারে। ধর্মপাশা উপজেলার মধ্যনগরের একাধিক কৃষক মতে ৩০ ভাগ জমিতে এবার চাষাবাদ হবে না। জেলার সর্বত্র একই অবস্থা।  ধর্মপাশার উপজেলার দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তার মতে উপজেলার ৩১ হাজার হেক্টর জমির মধ্যে ৮ হাজার হেক্টর চাষাবাদ হয়েছে। পানি যেহেতু কমছে, আরো চাষাবাদ হবে।’ তাদের মতে, ১০ থেকে ২০ ভাগ জমিতে এবার জলাবদ্ধতার জন্য চাষাবাদ হবে না। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের কর্মকর্তার মতে,‘দুই লাখ ২২ হাজার হেক্টর জমিতে এবার চাষাবাদের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ হলেও এক লাখ ৩৩ হাজার হেক্টর জমিতে এই পর্যন্ত চাষাবাদ হয়েছে।’তারা  দাবি করেন দুই লাখ ২২ হাজার হেক্টর জমিতেই এবার চাষাবাদ হবে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn