পৃথিবী বদলে দেবে যে ছয় উদ্ভাবন
মুদ্রণযন্ত্র আবিষ্কারের মাধ্যমে ইতিহাসের পথ বদলে দিয়েছিলেন জোহান গুটেনবার্গ। থমাস আলভা এডিসনের বৈদ্যুতিক বাতি, জোনাস সল্কের পোলিও ভ্যাকসিন এবং গ্রেস হপারের কম্পাইলার সম্পর্কেও একই কথা বলা যেতে পারে। ইতিহাস বদলে দেওয়া পরবর্তী উদ্ভাবন কী হবে? এমনই কিছু উদ্ভাবনের কথা থাকছে এখানে, যা আমি মনে করি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা উচিত।
বিশ্বজুড়ে হাজারো জীবন রক্ষা করেছে ভ্যাকসিন। তবে সঠিক তাপমাত্রায় না রাখলে তা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলভিত্তিক প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল গুডের একদল উদ্ভাবক ‘মেটাফ্রিজ’ নামের উদ্ভাবনী এক রেফ্রিজারেটর আবিষ্কার করেছেন। দীর্ঘক্ষণ বিদ্যুৎ না থাকলেও এটি নিরাপদে ভ্যাকসিন সংরক্ষণ করার মতো ঠান্ডা থাকে। তাঁরা সহজে বহনযোগ্য কুলার তৈরিতেও কাজ করছেন। ভ্যাকসিন প্রয়োগকারীদের দূরবর্তী অঞ্চলে শিশুদের কাছে পৌঁছাতে সাহায্য করবে এটি।
মনে করুন আমরা এমন এক দুনিয়ায় বাস করি, যেখানে ডিএনএ সম্পাদনার মাধ্যমে অসুস্থ মানুষকে সুস্থ করে তোলা কিংবা মশার ম্যালেরিয়া বাহক জিন মুছে ফেলা সম্ভব। আমরা এখনো জিনোম সম্পাদনার প্রাথমিক পর্যায়ে আছি এবং আমি জানি কীভাবে এই প্রযুক্তি দায়িত্বের সঙ্গে প্রয়োগ করা হবে, তা নিয়ে অনেক প্রশ্ন আছে। তবে এই সম্ভাবনা নিয়ে আমি আশাবাদী।
আমরা যদি জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরশীলতা বন্ধ করতে এবং জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকাতে চাই, তবে আমাদের অনেক ধরনের সমাধান দরকার। আমি সম্প্রতি ক্যালটেকে (যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি) এক গবেষণাগারে গিয়েছিলাম, যেখানে গবেষকেরা সূর্যের শক্তি জ্বালানিতে রূপান্তরের বিভিন্ন পথ উদ্ভাবনের চেষ্টা করে যাচ্ছেন। সৌরশক্তির ওপর পূর্ণ নির্ভরশীল হয়ে গাড়ি চালানো এখনো সম্ভব হয়নি। তবে ক্যালটেকের সৃজনশীল সমাধানে আমি আশাবাদী যে নিকট ভবিষ্যতে আমরা জ্বালানি সমস্যার চমকপ্রদ কোনো সমাধান পাব।
বেশির ভাগ ভ্যাকসিন ভাইরাসের দুর্বল বা নিষ্ক্রিয় রূপ কাজে লাগিয়ে মানবদেহে প্রতিষেধক তৈরি এবং রোগ প্রতিরোধ করে। বিজ্ঞানীরা বরং জেনেটিক উপাদান কাজে লাগিয়ে কম সময় ও খরচে নতুন ভ্যাকসিন তৈরির উপায় খুঁজে দেখছেন। আমরা যদি নিজস্ব প্রাকৃতিক প্রতিরোধ তৈরিতে আমাদের শরীরকে প্রশিক্ষণ দিতে পারি, তবে হয়তো রোগপ্রতিরোধের পদ্ধতিতে আমূল পরিবর্তন আনতে পারব।
প্রতিদিন যদি একই সময়ে ওষুধ নিতে হয়, তাহলে আপনার নিশ্চয় জানা আছে ওষুধ খাওয়ার কথা ভুলে যাওয়া কত সহজ! ইন্টারসিয়া নামের একটি প্রতিষ্ঠান সে সমস্যার সমাধান দিতে চায়। তারা ছোট্ট একটি যন্ত্র তৈরি করেছে, যা আপনার চামড়ার নিচে প্রতিস্থাপন করা সম্ভব। যন্ত্রটি ধীরে ধীরে সময় অনুযায়ী শরীরে ওষুধ সরবরাহ করে। বেশ কিছু উপায়ে এই প্রযুক্তি রোগ নিরাময় এবং প্রতিরোধ করতে পারে। তবে আমি এইচআইভি প্রতিষেধক নিয়ে সবচেয়ে বেশি আগ্রহী। একবার প্রতিস্থাপন করলে একজন মানুষের এইডসের ঝুঁকি এক বছর পর্যন্ত কমিয়ে ফেলা সম্ভব।
এই তালিকার অন্যান্য উদ্ভাবনের মধ্যে এটি আমাদের জীবন বদলে দিতে নিশ্চিত ভূমিকা রাখবে বলে মনে হয়। যদিও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আমাদের নতুন সমস্যার মুখে ফেলে দেবে, যার সমাধান আমাদের বের করতে হবে। এর মধ্যে অটোমেশনের প্রভাবে কাজ যারা হারিয়েছে, তাদের অন্য কাজে প্রশিক্ষিত করে তুলতে হবে। তবে আমি মনে করি, এটি আমাদের জীবন আরও প্রোডাক্টিভ, আরও কার্যকর ও সর্বোপরি সহজ করে তুলবে। অনুবাদ: মেহেদী হাসান