রম্য-‘সব শেষ, আমি এখন পথের ভিখারি’
মাসকাওয়াথ আহসান- জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছেন, আমার যা ছিল শেষ হয়ে গেছে। আমি এখন পথের ভিখারি। সকালে রাজধানীর বনানীতে জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে এক যৌথসভায় তিনি একথা বলেন। এসময় একজন ভক্ত তাকে প্রশ্ন করে, এমন অলুক্ষণে কথা বলছেন কেন স্যার! আমরা কী কেউ আপনাকে আঘাত করেছি! তিনি অশ্রুসিক্ত নয়নে বলেন, সেদিন একটা অনুষ্ঠানে গিয়ে বেশ স্মার্টলি আমার ফিটনেস দেখাতে দাঁড়িয়ে ছবি তুলেছি; আর সেই ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে আমার ভক্তদের ক্ষুব্ধ করেছে। অবশ্য সম্মিলিত ভক্তদের মাঝে আমার সম্মানের ব্যাপারে এমন আকুলতা দেখে আমি কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ হয়েছি। আমার এতো ভক্ত আছে আমি নিজেও জানতাম না। ভক্ত কেঁদে বলে, আপনি আমাদের পার্টি চেয়ারম্যান; আপনি চেয়ার ছাড়া ছবি তুললে বড্ড বেমানান লাগে! এতে আমাদের আঁতে ঘা লাগে! তিনি বলেন, আমার ফিটনেস চোখে পড়লো না কেন! ঐ ছবিতে যে কজন পুরুষ মানুষ আছে তাদের মধ্যে আমারই ঘন-কালো চুল। এতে তো তোমাদের খুশী হবার কথা। বাংলাদেশের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু হবার সূচকের প্রমাণ দিয়ে দিলাম আমি আর অর্থমন্ত্রী সাহেব। আর কী চাই!
একজন নারীভক্ত দাঁড়িয়ে বলে, ওরা এই স্মার্টনেসটা বুঝবে না স্যার। এটা আমরা বুঝি। কিন্তু আপনি নিজেকে পথের ভিখিরি বলছেন কেন! তিনি বলেন, জাতীয় পার্টির সামনে আশার আলো এসেছে। মৃত্যুর আগে দেখে যেতে চাই জাতীয় পার্টি ক্ষমতায়। কিন্তু বিপুল সংখ্যক মানুষের “চেয়ারানুভূতি”তে আঘাত লাগায় আমার তো আর সম্মান বলতে কিছুই রইলো না। পুরুষ ভক্ত জিজ্ঞেস করে, স্যার ফটোশপ কইরা আপনারে চেয়ারে বসাইয়া দি নাকি! তিনি বলেন, তুমি বলদ নাকি! রাখো তোমার ফটোশপ। নারী ভক্ত বলে, এখন থেকে আমরা ফেসবুকে আপনার শুধু চেয়ারে বসা ছবি পোস্ট করবো। এতে মানুষের মনে আপনার চেয়ারম্যান ইমেজটা ফিরে আসবে। তিনি বলেন, বয়স হয়েছে; এমনি সবাই অন্তর্জলী যাত্রার বুড়ো বলে বাতিল করে দেয়; এখন যদি আবার শুধু চেয়ারে বসা ছবি দাও; লোকে ভাববে আমি দাঁড়াতেও পারি না। ভক্ত বলে, তা অবশ্য ঠিক; লাঙ্গল প্রতীকের প্রধানকে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। বসার সুযোগ নাই। এক সরল ভক্ত জিজ্ঞেস করে, আপনি যখন ঐদেশে গেছিলেন; তখন আপনারে কী চেয়ার দিছিলো! তিনি গর্ব করে বলেন, চেয়ারই চেয়ার; আমার জন্মশহর পরিদর্শনের সময় তো আমার জন্য বিশেষ চেয়ার বানিয়েছিল।
নারী ভক্ত বলে, তাইলে ঐ ছবিগুলি পোস্ট কইরা দিই। এক বিজ্ঞ ভক্ত বলে, স্যার এখন ঐদেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা “চেয়ার” আপনার নামে প্রতিষ্ঠার জন্য একটা চাপ দেয়া ঠিক হবে। তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রীর চেয়ার ছাড়া আর কোন চেয়ারের দাম নাই এইটা লোকে বোঝে না। আবার ক্ষমতার চেয়ারের যন্ত্রণাও আছে। ঘুম হয় না। জিকিরে ফিকিরে জেগে থাকতে হয়। আমি তো হিসেব করে রাতে আট ঘণ্টা আর দিনে দুই ঘণ্টা ঘুমাই; এইজন্য ফিটনেসটাও ধরে রেখেছি। ভক্ত বিস্মিত হয়, তাহলে স্যার আমার যা ছিল শেষ হয়ে গেছে বলছেন কেন! তিনি মূঢ় মুখে বলেন, ঐ যে ভক্তদের চেয়ারানুভূতিতে আঘাত। আর অনেকে আমাদের গৃহপালিত দল মনে করে। ঘটনা ঘটে গেছে। কিছু করা যাবে না। নারীভক্ত সান্ত্বনা দেয়, চেয়ারে গুটিসুটি হয়ে বসে থাকলে কেমন অথর্ব পোপের মতো লাগে; আপনি ঠিকই করেছেন; আপনার কিছুই হারায়নি। তার মুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে; দেয়ালের আয়নাটার দিকে তাকিয়ে বলেন, অনেক দিন পর মনের মধ্যে কবিতা দোলা দিচ্ছে; বড্ড অটোগ্রাফ দিতে ইচ্ছা করছে।
- [প্রতিবেদনে উল্লেখিত ব্যক্তি, স্থান, কাল সহ সামগ্রিক বিষয় কাল্পনিক। জীবিত অথবা মৃত কারও সঙ্গে মিল পাওয়া গেলে এসম্পর্কে সুনামগঞ্জ বার্তা অনলাইন কোন দায় নেবে না]