প্রশ্নফাঁস বন্ধে শিক্ষামন্ত্রীর ‘তুঘলকি কাণ্ড’
এদিকে শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য গণমাধ্যমে আসার পর সংশ্লিষ্টরা ফেসবুক বন্ধের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। অনেকের প্রশ্ন— ফেসবুক বন্ধ করলেই যে প্রশ্নফাঁস হবে না, সেই নিশ্চয়তা কি শিক্ষামন্ত্রী দিতে পারবেন? তারা মনে করেন, প্রযুক্তির অনেক ধরনের চোরাগলি রয়েছে। সেসব দিয়েও প্রশ্নফাঁস হতে পারে। তাদের পরামর্শ, সমস্যার গোড়ায় গিয়ে প্রশ্নফাঁসের ক্ষত চিহ্নিত করে তা নিরাময় করতে পারেন শিক্ষামন্ত্রী। এদিকে বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে রীতিমতো বিতর্কের ঝড় উঠেছে। কেউ কেউ ফেসবুক বন্ধের বিষয়টিকে তুঘলকি কাণ্ড বলেও অভিহিত করেছেন। তাদেরই একজন দেশে ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইএসপিএবির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদুল হক। তিনি বললেন, ‘শিক্ষামন্ত্রী হয়তো নিজের অজ্ঞতার কারণে ফেসবুক বন্ধ করে প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে চাইছেন। শিক্ষামন্ত্রীর এই উদ্যোগ তুঘলকি কাণ্ড ছাড়া আর কিছুই নয়। পৃথিবীতে এ ধরনের কোনও নজির নেই। শিক্ষামন্ত্রী কি নিশ্চিত যে, তিনি ফেসবুক বন্ধ করে প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে পারবেন? ফেসবুক ছাড়াও অনেক প্রযুক্তি আছে যেসব মাধ্যমে প্রশ্নফাঁস হতে পারে। সুতরাং সেসবে না গিয়ে বরং শিক্ষামন্ত্রীর উচিত কোথায় কোথায় সমস্যা আছে তা চিহ্নিত করে এর মূলোৎপাটন করা।’
আইএসপিএবির সাধারণ সম্পাদকের আশঙ্কা, ফেসবুক বন্ধ করলে দেশের ই-কমার্স খাত ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তখন অনেক উদ্যোক্তার পথে বসে যাওয়া ছাড়া পথ থাকবে না। তিনি জানান, যারা আউটসোর্সিং করেন তাদের অনেকেই ফেসবুক লাইভে দেশের বাইরে পণ্য বা সেবার ‘ডেমো’ দেন। এগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ফেসবুক ব্লক করলে বিকল্প পথে এতে প্রবেশের চেষ্টাহতে পারে বলে মনে করেন ইমদাদুল হক। তার প্রশ্ন, ‘তখন নিয়ন্ত্রণ করা যাবে কীভাবে?’ ২০১৫ সালের ১৮ নভেম্বর ফেসবুকসহ কয়েকটি যোগাযোগভিত্তিক অ্যাপ বন্ধ করে দেয় সরকার। টানা ২২ দিন বন্ধ থাকার পর ১০ ডিসেম্বর ফেসবুক খুলে দেওয়া হয়। এ কারণে ওই কয়েক দিনে মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর ব্যান্ডউইথের বিক্রি কমতে থাকে। একপর্যায়ে ব্যান্ডউইথ বিক্রি ৫০ ভাগের নিচে চলে আসে। কারণ অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারী এ সময় ইন্টারনেট ব্যবহার থেকে বিরত থাকেন। তবে অনেকেই আবার বিকল্প পথে ফেসবুকে প্রবেশ করতে সক্ষম হন। সেই সময় মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েন ফেসবুকভিত্তিক কমার্সের (এফ-কমার্স) সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। ফেসবুককে কেন্দ্র করে যেসব ই-কমার্স উদ্যোক্তা আত্মপ্রকাশ করেছিলেন তাদের প্রতিদিন প্রায় ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা লেনদেন কম হতে থাকে। ই-কমার্স অ্যালায়েন্সের সূত্রমতে, ফেসবুক বন্ধ থাকায় ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৩ থেকে ৫ কোটি টাকায়। এখন আবারও ফেসবুক বন্ধ করলে ক্ষতির পরিমাণ ওই অঙ্কের দ্বিগুণের বেশি হবে বলে সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা। ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সাবেক সভাপতি ও বর্তমান পরিচালক রাজিব আহমেদ বলেন, ‘দেশে বর্তমানে ২০ থেকে ২২ জন ফেসবুককেন্দ্রিক উদ্যোক্তা রয়েছেন। এই মাধ্যম বন্ধ হলে ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন তারা। তারা বুস্ট করে (ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দিয়ে) গ্রাহক নিয়ে আসেন। তাদের বিনিয়োগ গচ্চা যাবে।’
রাজিব আহমেদ জানান— আইটি খাত, অনেক প্রতিষ্ঠানের নেটওয়ার্কিং, পণ্যের প্রচার ইত্যাদি বর্তমানে ফেসবুকের ওপর নির্ভর করে। তাই এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ করলে উপকারের চেয়ে ক্ষতি বেশি হবে বলে মনে করেন তিনি। তার প্রশ্ন, ‘সামনে এসএসসি পরীক্ষা। এরপরে রয়েছে এইচএসসি, বিসিএস, ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষা। তাহলে সব পরীক্ষার সময়ই কি সরকারকে ফেসবুক বন্ধ করতে হবে?’ ফেসবুক বন্ধ করে দিয়ে নয়, সরকারের উচিত হবে ফেসবুকের সঙ্গে বৈঠক করে সহায়তা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ই-ক্যাব পরিচালক। যেসব পেজ থেকে প্রশ্নফাঁস হয় সেগুলো লিংক বন্ধ করে দেওয়ার অনুরোধ করা যেতে পারে। এজন্য দরকার কোথা থেকে এগুলো আপলোড হয় তা চিহ্নিত করা।