টোকিওর বিশ্ববিদ্যালে জাপানি শিক্ষার্থীর বাংলা ভাষা নিয়ে রচনা
বাংলাদেশ থেকে আসা জাপানি ভাষা শিক্ষার্থীর একজন হলেন ‘ক’ নামের পুরুষ। তিনি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের জেএলসিতে জাপানি ভাষার পড়াশোনা শেষ করে এখন অন্য এক বিশ্ববিদ্যালয়ে ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ওপর গবেষণা করছেন। তিনি তাঁর বড় ভাইকে অনুসরণ করে জাপানে এসেছেন। জাপানে আসার আগে নিজের দেশে জাপানি ভাষা নিয়ে লেখাপড়া তিনি একেবারেই করতে পারেননি। ফলে জেএলসিতে অনেক দুর্ভোগে তাঁকে পড়তে হয়েছিল। জাপানি ভাষা এখন তিনি পছন্দ করছেন এবং চীনা লিপি (কানজি) পর্যন্ত শিখে নিয়ে খুব ভালো জাপানি তিনি বলতে পারেন। তিনি এখানে লেখাপড়া শেষ করে গবেষণার জন্য অন্য দেশে যেতে চাইছেন। আরেকজনের নাম ‘ন’, তিনি নারী। তাঁর বাবা দেশে তাঁকে অনেক দিন জাপানি ভাষা পড়িয়েছেন বলে জাপানে আসার আগে থেকেই তিনি ভালো করে জাপানি ভাষা বলতে পারেন। তিনিও জেএলসিতে পড়াশোনা করেছেন। এখন অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে আছেন। জেএলসিতে পড়ার সময় কারিগরি শব্দ বুঝতে তাঁর খুব কষ্ট হয়েছিল এবং হাল ছেড়ে না দিয়ে চেষ্টা করা তিনি অব্যাহত রেখেছেন। তিনি আমাকে বলেছেন, জাপানে তিনি থেকে যেতে চান। এবারে কেবল দুজনের কথা শুনেছি তবে তাদের প্রত্যেকের অবস্থা যে ভিন্ন ছিল আমি বুঝতে পেয়েছি।
এরপর আমি গবেষণাপত্র নিয়ে আলোচনা করব। প্রথম কাজটি হচ্ছে বাংলা অঞ্চলে জাপানি ভাষা শিক্ষার অবস্থা নিয়ে গবেষণা। তাকেই (২০১৬), ইসেদা (২০১৫) ও নাগাই (২০০২) কাজ করেছেন ভারত নিয়ে; এবং মাৎসুমতো (২০০০) ও কাওয়ানো (২০০০) কাজ করেছেন বাংলাদেশ নিয়ে। ভারতের গবেষণার বড় অংশ জুড়ে আছে বাংলা অঞ্চলের ছড়ার কথা। তবে কলকাতা হচ্ছে জাপানি ভাষা শিক্ষার জন্য ভারতের ভেতরে গুরুত্বপূর্ণ একটি জায়গা। যেমন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় ও আরএমআইসির ভাষা স্কুল—এসব কলকাতার আশপাশেই আছে। এমন কথাও সেই গবেষণাপত্রে লেখা আছে যে, ইংরেজি ভাষা ব্যবহার না করে বাংলা থেকে জাপানি ভাষায় সরাসরি পড়াশোনা করা ও সংলাপের মধ্যে দিয়ে ক্লাস করা ভালো।
বাংলাদেশের বেলায় গবেষণাপত্রটি কিছুটা পুরোনো। বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও জাপান থেকে ফিরে যাওয়া শিক্ষার্থীরাও যে সেখানে বড় প্রভাব রাখছেন, সে কথা ‘ক’ আমাদের বলেছেন। আর শিক্ষার্থীদের প্রেরণা কোথা থেকে আসে তা জানার জন্য শানতে বুআসাসেংথাম ও ইয়োসিনাগাও (২৯১৬) পড়েছি। এই গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে যে শিক্ষার্থীদের প্রেরণার উল্লেখ করতে তাদের নিজের মনের অবস্থা (ভেতর ও বাইর থেকে দুটোই) ছাড়াও তাদের আশপাশের পরিবেশ, যেমন-শিক্ষক, বন্ধু, ক্লাসের অবস্থা, অভিজ্ঞতা আর লেখাপড়া নিয়ে সমাজের মনোভাবও বিবেচনা করে দেখা দরকার। আর এই শিক্ষার্থীদের ওপর সামাজিক প্রভাব ক্লাসের সময়ের বাইরেও হয়ে থাকে। তাই এ রকম চিন্তাভাবনার আলোকে বলা যায় যে ক্লাসের বাইরে শিক্ষার্থীদের অবস্থা নিয়ে গবেষণা করাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমি ওপরের সব কথা ব্যবহার করে বাংলাভাষী জাপানি ভাষা শিক্ষার্থীদের ভাষা শেখার প্রেরণা নিয়ে গবেষণা করতে চাই। তারা কেন জাপানের ভাষা নিয়ে পড়াশোনা করছেন? তাদের পড়াশোনা কেমন করে আরও ভালো হবে? আমরা জাপানিরা কীভাবে সাহায্য করতে পারি? আরও অনেক বই ও গবেষণাপত্র আমার পড়া দরকার। এ ছাড়া যে দুজনের সাক্ষাৎকার আমি নিয়েছি তাঁদের বক্তব্য আরও গভীরভাবে বিশ্লেষণ করতে হবে। এরপর বাংলাভাষী জাপানি ভাষা শিক্ষার্থীদের আরও কয়েকজনের কথা আমি শুনে চাই। বাংলাদেশ ও ভারতে থাকা শিক্ষার্থীদের কথা শোনার জন্য বাংলা ভাষা আরও ভালোভাবে শেখার চেষ্টা আমি করব। এসব কিছুর পরেই আমার নিজের গবেষণাপত্র আমাকে লিখতে হবে।
হিতোহা ফুকুদা: টোকিওর বিদেশ বিদ্যা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী