কী ঘটতে যাচ্ছে দেশে?
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে অন্যতম আসামি করে বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণা করতে যাচ্ছে আদালত। এই একটি মাত্র রায়কে ঘিরে গত কদিন ধরে রাজনৈতিক সংকটের পাশাপাশি জনমানসে দেখা দিয়েছে শঙ্কা, উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা। কী রায় আসতে পারে এ নিয়েও কৌতুহলি হয়ে উঠেছে গোটা দেশ। বিএনপির পক্ষ থেকে বারবারই দাবি করা হচ্ছে- সরকার আদালতকে প্রভাবিত করছে। এমনও বলা হচ্ছে- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে এই রায় লিখে দিয়েছেন। রায় ঘোষণার আগের দিন বুধবার গুলশানে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দাবি করেছেন- তাঁকে নির্বাচন ও রাজনীতির ময়দান থেকে দূরে রাখতেই সরকার আদালতকে ব্যবহার করার চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে তাতেও যে বেগম জিয়াকে দমানো যাবে না, তিনি যে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পথে আপসহীন সেটিও তাঁর বক্তব্যে উঠে এসেছে। ওই সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, ‘আমি যেকোনও পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত আছি। আমাকে জেল বা সাজার ভয় দেখিয়ে লাভ হবে না। যেকোনও ধরনের চাপের মুখে আমি মাথা নত করবো না। জনগণের অধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবি থেকে পিছু হটবো না। জনগণকে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। কিন্তু তাতেই একদলীয় শাসন কায়েম ও খালি মাঠে গোল দেয়ার খায়েশ পূরণ হবে বলে আমি মনে করি না।’
বিপরীতে আওয়ামী লীগ বলছে, আইনের চোখে সবাই সমান। এই রায়ের সঙ্গে তাদের দলের কিংবা রাজনীতির কোনও সম্পৃক্ততা নেই। খালেদা জিয়ার উচিৎ আদালতের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা এবং অপরাধ প্রমাণ হলে আদালতের রায় মেনে নেয়া। একইসঙ্গে ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেয়া হয়েছে- যদি এই রায়কে ঘিরে বিএনপি কোনও ধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির তৈরি করে তবে তা কঠোর হাতে দমন করা হবে। এরই ধারাবাহিকতায় আওয়ামী নেতাকর্মীরা ৮ ফেব্রুয়ারি রাজধানীসহ সারা দেশে জোর অবস্থান নেবে বলে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের একাধিক বক্তব্যে বলেছেন। খালেদা জিয়ার রায় ঘিরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও গোটা দেশে নিরাপত্তা জোরদার করছে। এরইমধ্যে ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে রাজধানীতে অনির্দিষ্টকালের জন্য মিছিল নিষিদ্ধ করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। বুধবার সন্ধ্যা থেকে ঢাকা শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে জননিরাপত্তায় ২০ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। রাজধানী ছাড়াও বেশ কিছু জেলা ও সিটিতে বিজিবি নেমেছে।এমন অবস্থায় একটি রায়কে কেন্দ্র করে একটি দেশ উৎকণ্ঠার মুখে পড়েছে। জনগণের মধ্যে নানা শঙ্কা তৈরি হয়েছে। তবে কি আবারও উত্তাল হয়ে উঠছে দেশ? তবে কি ৮ ফেব্রুয়ারির রায়কে কেন্দ্র করে আবারও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার বলি হবে জনগণ? রায় খালেদা জিয়ার বিপক্ষে গেলে বিএনপি কি সহিংসতার পথ বেছে নেবে? এমন বহু প্রশ্নই উঁকি দিচ্ছে জনমানসে। তবে সবকিছুর পরে জনগণ এটুকু বুঝতে পারছে- খালেদা জিয়ার দুর্নীতি মামলার রায় নিয়ে যদি দেশে বড় ধরনের কোনও বিশৃঙ্খলা কিংবা সহিংস পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় শেষ পর্যন্ত তার মাশুল কিন্তু জনগণকে গুণতে হবে। অতীতেও তো এমন চিত্র দেখা গেছে। কিন্তু দুই দলের ‘ক্ষমতার রাজনীতির’ বলি জনগণ কেন হবে? আর সেটি যেন না হয়- কায়মনোবাক্যে আপাতত এটুকুই প্রত্যাশা শান্তিপ্রিয় সংখ্যাগরিষ্ঠ জনতার।