দেশের মাদক ব্যবসায় জড়াচ্ছে রোহিঙ্গারা
কে বি আনিস –
স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর ইয়াবা নিয়ে গত বছরের শেষ দিকে পুলিশের হাতে ধরা পড়েন রোহিঙ্গা মুসলিম শরণার্থী আলী আহসান। পুলিশ যখন তাকে গ্রেফতার করে তখন অন্তত ৫ হাজার ইয়াবা বড়ি তার সঙ্গে ছিল। গ্রেফতারের পর থেকেই আলী আহসান বন্দিদশা থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। এজন্যে বাইরে থাকা তার ছেলের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টাও করেছিলেন তিনি। কিন্তু কিছুদিন না যেতে তার বড় ছেলে ইজ্জত আলীরও ঠাঁই হয় তার সঙ্গে।
পুলিশ ইজ্জতের কাছ থেকে ২শ’ পিস ইয়াবা পাওয়ায় তাকে গ্রেফতার করে এবং জেলহাজতে প্রেরণ করে। বাংলাদেশ সরকার দীর্ঘদিন থেকেই বলে আসছে, পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ক্রমেই বাংলাদেশের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে।
বিনাশ্রমে ভালো আয়ের উদ্দেশ্যে তারা এসব অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে নিজেদের জড়াচ্ছে। আর এর ফলে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলায় চরম অবনতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। দেশের তরুণ সমাজ ভয়াবহ ইয়াবার নেশায় ক্রমেই আসক্ত হয়ে পড়ছে। আর এই মারাত্মক নেশার প্রবেশ ঘটছে দেশের দক্ষিণ সীমান্তে অবস্থিত বিভিন্ন শরণার্থী শিবির থেকে। যেখানে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বসবাস।
তবে সাফাই হিসেবে রোহিঙ্গারা বলছেন, তারা বাংলাদেশে প্রবেশের পর কোনো বৈধ কাজ পাচ্ছেন না। উল্টো তরুণ রোহিঙ্গারা বৈধ কাজ খুঁজলে তাদের নিরূৎসাহিত করা হচ্ছে। পাশাপাশি ইয়াবা চোরাচালানের মতো অবৈধ কাজে তাদের বাধ্য করা হচ্ছে। এজন্যে কখনও কখনও তাদের ভয়ভীতিও দেখানো হচ্ছে।
পেট বাঁচাতে শরণার্থী শিবিরগুলোতে পর্যাপ্ত ত্রাণও মিলছে না। ফলে একদিকে ত্রাণের অভাব, অন্যদিকে পেটের তাগিদে তারা বাধ্য হচ্ছেন জেনেশুনে এমন অবৈধ পথে নামতে।
সংখ্যালঘু মুসলিম এই জনগোষ্ঠীকে বরাবরই নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করে আসছে মিয়ানমার সরকার। ১৯৯০ সালের আগে থেকেই বিভিন্ন সময়ে এসব জনগোষ্ঠীর উপর নির্যাতন চালিয়ে আসছে দেশটির সেনাবাহিনী। লুট, হত্যা, ধর্ষণের মত মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে বারবার। ফলে জীবন বাঁচাতে পার্শ্ববর্তী দেশ বাংলাদেশে এপর্যন্ত পালিয়ে এসেছে ৫ লাখেরো বেশি রোহিঙ্গা।
এত বিশাল সংখ্যক মানুষের ভার কঠিন হলেও বাংলাদেশ সরকার মানবিক কারণে তাদের আশ্রয় দিতে কখনও কুণ্ঠাবোধ করেনি। আর সেই দুর্বলতাকে পুঁজি করে বারবার মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের এদেশে ঠেলে দিতে বাধ্য করেছে। সর্বশেষ গেল বছরের অক্টোবরে মিয়ানমার সেনাবাহিনী রাখাইনে তাণ্ডব চালানোয় এদেশে পাড়ি জমায় লক্ষাধিক রোহিঙ্গা।
এদিকে, আশ্রয় প্রত্যাশী রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বাংলাদেশে প্রবেশের পরই নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে নিজেদের জড়িয়ে ফেলে। ফলে এদের দমন করতে গিয়ে হিমশিম পরিস্থিতিতে পড়ে দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, অপরাধে জড়িত রোহিঙ্গাদের কোনো পরিচয় তাদের কাছে না থাকায় এদের দমন করা একপ্রকার অসম্ভব হয়ে পড়ে। তার উপর স্থানীয় নেতারা অর্থ উপার্জনের স্বার্থে এদের ব্যবহার করায় দমন কার্যক্রমেও ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়।
রুকিনা বেগম নামের এক রোহিঙ্গা নারী সম্প্রতি শতাধিক ইয়াবাসহ নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে আটক হওয়ার পর নতুন তথ্য দেন। তিনি জানান, এক স্থানীয় নেতা তাকে এই মাদক বহনে তাকে প্ররোচিত করে। রুকিনা বেগমকে শর্ত দেয়, যদি সে নিয়মিত ইয়াবা পরিবহনে রাজি থাকে তবে তার ১১ বছরের সন্তানকে একটি ভালো চাকরির ব্যবস্থা সে করে দেবে। ফলে সুন্দর ভবিষ্যতের লোভে রুকিনা বাধ্য হয়ে সেই প্রস্তাবে সাড়া দেন।
বাংলাদেশ সরকারও অবশ্য রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সামাজিক কর্মকাণ্ডে জড়িত করতে ইচ্ছুক নয়। এরফলে স্থানীয়দের উপর যেমন বিরূপ প্রভাব পড়বে, পাশাপাশি সাধারণ নাগরিকদের সঙ্গে এদের মিশে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আর একারণেই শরণার্থী শিবিরগুলোতে নিয়মিত ত্রাণ সরবরাহের ব্যবস্থা রেখেছে বাংলাদেশ সরকার। এজন্যে স্থানীয় সরকার বেশকিছু কমিটির মাধ্যমে সেসব ত্রাণ নিয়মিত প্রদান করছে।
দীর্ঘদিন এসব রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে ফেরত পাঠাতে মিয়ানমার সরকারকে অনুরোধ জানিয়ে আসছে বাংলাদেশ। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মহলও মিয়ানমার সরকারকে রোহিঙ্গাদের স্বীকৃতি দিতে চাপ দিয়ে আসছে। কিন্তু তাতে কখনই সাড়া দেয়নি মিয়ানমার। বরং এই জনগোষ্ঠীকে বাংলাদেশের নাগরিক বলেই তারা দাবি করে আসছে।
এরপরও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নিয়মিত ত্রাণ সুবিধা দিচ্ছে বাংলাদেশ। মিয়ানমার সরকারের ষরযন্ত্রের শিকার হওয়া এসব রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে বিভিন্ন সময় এদেশে আশ্রয় দেয়া হচ্ছে। ফলে ক্রমেই এদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে গোদের উপর বিষফোড়া হয়ে যেটি দেখা দিয়েছে তা হচ্ছে সীমান্ত অঞ্চলে এদের দ্বারাই অপরাধের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার বিরূপ প্রভাব পড়ছে পুরো বাংলাদেশেই।
সুত্র: দি ন্যাশন