প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর স্বাধীনতাবিরোধীরা ক্ষমতায় এসে দেশের অগ্রযাত্রা বন্ধ করে দেয়। শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটউশন মিলনায়তনে ‘৭ই মার্চের ভাষণ এবং বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা’শীর্ষক এক সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট এ সেমিনারের আয়োজন করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ট্রাস্টের সভানেত্রী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণের আবেদন কখনোই মুছে যাবে না। স্বাধীনতা যুদ্ধে ব্যতিক্রম ছিল আলবদর, রাজাকার, স্বাধীনতাবিরোধি চক্র। তারা পাকিস্তান ভুলতে পারিনি। পচাত্তরের পর তারাই ক্ষমতায় এসেছে। ক্ষমতায় এসে আমাদের উন্নয়নের সকল গতি নষ্ট করে দিয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাস বিকৃতি করেছে। ওই সময় ৭ই মার্চের ভাষণ বাজানো যেত না। ৭ই মার্চের ভাষণ মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছিল। এ ভাষণ নিষিদ্ধ ছিল। আজ সেই ভাষণ বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভাষণ হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে। এজন্য আমরা আজ গর্বিত।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় ভাষণটি ছিল প্রেরণাদায়ক। কিন্তু এ নিয়ে প্রকৃত ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছিল। আমাদের একটি প্রজন্ম প্রকৃত ইতিহাস জানতে পারেনি।  একজন নেতা  (বঙ্গবন্ধু) তার জীবনের সবকিছু দিয়ে মানুষকে ভালোবেসে সংগ্রাম করে জেল অত্যাচার সহ্য করেও দেশের জন্য যা করেছেন এর তুলনা বোধ আর কিছুর সঙ্গে হয় না। সেমিনার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আয়োজকদের পক্ষ থেকে আমাকে ওই ভাষণের প্রেক্ষাপট বিস্তারিতভাবে বলার অনুরোধ জানানো হয়। আমি মনে করি, এদেশের মানুষের এসব জানার অধিকার রয়েছে। আমাদের পরিবারের তো দুজনই বেঁচে আছি। আর কেউ তো নেই। ওই সময়কার ঘটনার নীরব স্বাক্ষীও ছিলাম আমরা। তাই আমাদের থেকে আর কে ভালো বলতে পারবেন।  অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ৭ই মার্চের ভাষনের বিস্তারিত প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন, ৭ই মার্চের ভাষণ কোনও লিখিত ভাষণ না, কোনও রিহার্সেল দিয়ে তৈরি করা ভাষণও না। এই ভাষণ দীর্ঘ ২৩ বছরের লাঞ্ছনা-বঞ্চনা ও প্রতিবাদের কণ্ঠস্বর। এই ভাষণের আবেদন যুগ যুগ ধরে থাকবে। 
প্রধানমন্ত্র বলেন, পৃথিবীর যে কোনও ভাষণের চেয়েও এই ভাষণ সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমধর্মী। এর কোনও তুলনা হয় না। এটি অতুলনীয় ভাষণ। মুক্তিযুদ্ধে সম্পূর্ণ দিক নির্দেশনা ছিল এ ভাষণ। এ ভাষণটি মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রতিদিন বাজানো হতো। এ সময় ছয় দফাকে মুক্তির সনদ হিসেবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছয় দফার বিপরীতে একটি আট দফা দেয়া হয়েছিল। এর মাধ্যমে দলের মধ্যে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু পরে সিদ্ধান্ত হয় ছয় দফা থেকে আমরা বিচ্যুত হবো না। এর আগে আগরতলা মামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ১৫  ফেব্রুয়ারি আগরতলা মামলার আসামি সার্জেন্ট জহুরুল হককে হত্যা করা হয়। এ হত্যাই ছিল বঙ্গবন্ধুকে হত্যা-পরিকল্পনার একটা অংশ। এরপর উত্তাল হয়ে ওঠে বাংলাদেশ। ফলে বঙ্গবন্ধুকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় পাকিস্তান সরকার। এরপর তিনি লন্ডনে যান। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে মিটিং করেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ জিতবে কিন্তু পাকিস্তানিরা ক্ষমতা হস্তান্তর করবে না। তাই তিনি সেখানে বসেই সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগরতলা মামলায় বঙ্গবন্ধু জেল থেকে বের হয়ে আসার পর প্রায়ই বলতেন- আমার ছয় দফা মানে বলেই তিনি একটা আঙুল দেখাতেন। তখন এই কথা মুখ দিয়ে উচ্চারণ করা নিষেধ ছিল। আমরা এ কারণে ইশারাতেই সব বুঝে যেতাম।  তিনি আরও বলেন, ১৯৫৮ সালে পাকিস্তানে মার্শাল-ল  ওয়ের সময়েই তিনি স্বাধীনতার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। ছাত্রলীগকে দিয়ে ১৯৬২ সালের পর থেকেই একটা ‘নিউক্লিয়াস’তিনি ফর্ম করেছিলেন। প্রতিটি জেলায়-মহকুমায় তিন সদস্যের কমিটি ছিল। স্বাধীনতার প্রস্তুতি অনেক আগেই নেয়া হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধ শুরুর সময় তাদের নিয়েই মুজিব বাহিনী গঠন করা হয়। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট’র সদস্য সচিব শেখ হাফিজুর রহমান। মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও প্রফেসর ইমেরিটাস ড. আলমগীর মোহাম্মদ সিরাজুদ্দীন। আলোচনায় অন্যান্যের মধ্যে অংশ নেন দি এশিয়ান এজ এর সহযোগী সম্পাদক সৈয়দ বদরুল আহসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. আকসাদুল আলম। অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ট্রাস্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাশুরা হোসেন।
 
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn