সিলেট :: সিলেটের বিয়ানীবাজার এলাকার বাসিন্দা শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সারা দেশে শিক্ষার আলো ছড়াতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। কিন্তু তার নিজ এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নেই। কথায় আছে ‘বাতির নিচ অন্ধকার’ এ কথার বাস্থবায়ন ঘটলো সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলায়। প্রধান শিক্ষক ও সহকারি শিক্ষক মিলে ছয়টি পদ থাকলেও পাঁচটি শূন্য রয়েছে। একজন প্রি-প্রাইমারি শিক্ষক দিয়ে দীর্ঘদিন থেকে চলছে দিঘলবাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় তিশ শিক্ষার্থীর পাঠদান। সম্প্রতি প্রি-প্রাইমারি শিক্ষক মনোয়ার বেগম বিবাহজনিত কারণে  ছুটি নেয়ায় বি দ্যালয়টি শিক্ষকহীন হয়ে পড়ে। বাধ্য হয়ে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি লুৎফুর রহমান রাজু শিক্ষার্থীদের পাঠদান দেন বিদ্যালয়ের নৈশ্য প্রহরী নবাব আলীকে সঙ্গে নিয়ে। শিক্ষকহীন হয়ে পড়া এ বিদ্যালয়টি সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার উপজেলার শেওলা ইউনিয়নে অবস্থিত।বিদ্যালয়ের নার্সারি থেকে পঞ্চশ শ্রেণি পর্যন্ত ২৫৬ শিক্ষার্থীর শনিবার থেকে ক্লাস নিয়েছেন বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি লুৎফুর রহমান রাজু। তাকে এ সময় সহযোগিতা করেন নৈশ্য প্রহরী নবাব আলী। সোমবার বিদ্যালয়ে অভিভাবক ও এলাকাবাসী জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন। তারা বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতিকে ক্লাস নিতে বাধা দেন। এ সময় উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে ডেপোটেশনে দুইজন শিক্ষক পাঠালে তাদেরও বিদ্যালয়ে ঢুকতে বাধা দেন এলাকাবাসী। এ সময় ‘অস্থায়ী নয় স্থায়ী শিক্ষক চাই’ স্লোগান তোলেন বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে জড়ো হওয়া অর্ধশতাধিক অভিভাবক।

দিঘলবাগ এলাকার অধিবাসী ইউপি সদস্য মাহমুদুল হাসান এরশাদ বলেন, গত ছয় বছর থেকে একজন শিক্ষক দিয়ে প্রায় তিনশত শিক্ষার্থীদের পাঠদান দেওয়া হচ্ছে। শূন্য পাঁচটি পদ পুরণ হচ্ছে না। আমরা লিখিতভাবে বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও উপজেলা প্রশাসনের দায়িত্বশীলদের জানিয়ে আসছি। কিন্তু তারা আমাদের শুধু আশ^াস দিয়ে আসছেন। গত শনিবার থেকে বিদ্যালয় শিক্ষকহীন। এ অবস্থায় আমরা নিরুপায়। ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী শান্ত করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছি।বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি লৎফুর রহমান রাজু বলেন, দীর্ঘদিন থেকে শিক্ষকদের পা ঁচটি শূন্যপদ পুরণ করার জন্য সংশ্লিষ্টদের বরাবর একাধিক আবেদন করেছি। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষাকর্মকর্তাদের সাথে এ নিয়ে নিয়মিত যোগাযোগ করছি। কিন্তু কোনভাবে শূন্যপদ পুরণ হচ্ছে না। তিনি বলেন, শনিবার থেকে একমাত্র শিক্ষক মনোয়ার বেগম তিনি দশ দিনের ছুটিতে আছেন। এ অবস্থায় নৈশ্য প্রহরিকে সঙ্গে করে আমি ক্লাস নিয়েছি। ক্লাস নেয়ার সময় (সোমবার) অভিভাবকরা বিদ্যালয়ে এসে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। ডেপোটেশনে আসা শিক্ষকদেরও বিদ্যালয়ে প্রবেশে বাধা দেন।এলাকার মুরব্বি জয়নাল আবেদীন বলেন, ছয় বছর থেকে একজন শিক্ষক দিয়ে বিদ্যালয়ের পাঠদান পরিচালিত হচ্ছে। অথচ কাছের বিদ্যালয়ে ছয়টি পদই পূর্ণ। এ অবস্থায় অভিভাবকরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখালে আমরা তাদের শান্ত হওয়ার আবহান জানিয়েছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে শিক্ষক স্বল্পতা দূর করতে শিক্ষামন্ত্রীসহ প্রশাসনের দায়িত্বশীলদের কাছে আমরা দাবি জানাচ্ছি।
শেওলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ডেপোটেশনে আসা শিক্ষক জামাল হোসেন বলেন, সকাল সাড়ে ৯টায় বিদ্যালয়ে আসলেও ক্লাস নিতে পারিনী। বিষয়টি সহকারি শিক্ষাকর্মকর্তা আশিকুর রহমানকে জানিয়েছি। দুপুরের দিকে স্থানীয় মুরব্বিরা অভিভাবকদের বুঝিয়ে শান্ত করলে আমরা অফিসে গিয়ে বসি।বিয়ানীবাজার উপজেলা সহকারি প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাসুম মিয়া বলে ন, এ বিদ্যালয়ের শিক্ষক সংকটের বিষয়টি আমরা অবহিত। একজনমাত্র শিক্ষক ব্যক্তিগত কারণে ছুটিতে আছেন। পাঠদান কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে আমরা দুই শিক্ষককে ডেপোটেশনে নিয়োগ দিয়েছি। তিনি বলেন, নতুন শিক্ষক নিয়োগ হলে বিদ্যালয়ে শূন্যপদগুলো পুরণ করার জন্য আমার স্বচেষ্ট থাকবো।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn