নেপালে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়ে নিহতদের মধ্যে দুজনের মৃতদেহ অদল-বদল হয়ে যাওয়ায় আদালতে একটি আবেদনের প্রেক্ষিতে দুইজনের মৃতদেহ কবর থেকে তুলে তাঁদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করতে নির্দেশনা দিয়েছে আদালত। বুধবার (৪ এপ্রিল) ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত ঢাকার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে নির্দেশনা দিয়েছে যতদ্রুত সম্ভব ব্যবস্থা নিতে। যাদের মৃতদেহ ওলট-পালট হওয়ার কথা বলা হচ্ছে, তাদের মধ্যে একজন একটি বেসরকারি টেলিভিশনের সাংবাদিক আহমেদ ফয়সাল। আরেকজন হলেন নাজিয়া আফরিন চৌধুরী। এ বিষয়ে জানান নিহত আহমেদ ফয়সালের পরিবারের পক্ষে থাকা আইনজীবী আশরাফ উল আলম।

যেভাবে অদল-বদল হল মৃতদেহ?

গত ১২ মার্চ নেপালে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত বাংলাদেশিদের মধ্যে ছিলেন সাংবাদিক আহমেদ ফয়সাল। নেপাল থেকে তার মরদেহ দেশে আসার পর রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়ামে তাদের কাছে তা হস্তান্তর করা হয়। সেদিনই মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় তাদের গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরের ডামুড্যায়। পরদিন ২০ মার্চ সকালে মৃতদেহ কবর দেয়ার সমস্ত আয়োজন চূড়ান্ত। কফিন থেকে তার শরীর কবরে নামানোর শেষ মুহূর্তে দেখা গেল সাদা কাপড়ে মোড়ানো মরদেহের ওপরে স্টিকারে যে নাম লেখা রয়েছে তা একজন নারীর নাম ‘নাজিয়া আফরিন চৌধুরী’। নিহত আহমেদ ফয়সালের বড় ভাই সাইফুল ইসলাম যে আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতের তার পরিবারের পক্ষে আবেদন করেন সেই আইনজীবী আশরাফ-উল আলম এমনটাই জানান। আইনজীবী আশরাফ জানান, আহমেদ ফয়সালের পরিবারের পক্ষে তার ভাই সাইফুল ইসলাম এবং নাজিয়া আফরিন চৌধুরীর পরিবারের পক্ষে নাজিয়ার ভাই আলী আহাদ চৌধুরী আদালতে হলফ-নামা জমা দেন। তারা বুঝতে পারে যে এটা আহমেদ ফয়সালের লাশ নয়। হাজার হাজার মানুষের সামনে অনাকাঙ্ক্ষিত, বিরূপ পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কায় সেই মুহূর্তে মৃতদেহ দাফন করা হয়। তবে ফয়সালের পরিবারের কয়েকজনের মধ্যে সন্দেহ তৈরি হয়েছিল আরও একটি বিষয়ে। কারণ আহমেদ ফয়সাল লম্বা আকৃতির ছিলেন কিন্তু কফিনের ভেতর যে মৃতদেহ ছিল তা দেখে তাদের কাছে খাটো প্রকৃতির মনে হয়েছে। এরপর থেকে প্রতিদিন সকালে নিহত ফয়সালের বাবা কবর জিয়ারত করেন ছেলের মঙ্গল কামনা করে। যিনি এখনো জানেন না ছেলের মরদেহ অদল-বদল বিষয়ে। জানতেন কেবল পরিবারের অল্প কয়েকজন। পরবর্তীতে তারা নাজিয়া চৌধুরীর পরিবারের সাথে যোগাযোগের সিদ্ধান্ত নেন।

দুই পরিবার কি বলছে?

আহমেদ ফয়সালের পরিবারের পক্ষের আইনজীবী আশরাফ উল-আলম বলেন, উভয়ের পরিবার মেনে নিয়েছে যে, ভুলক্রমে এ ঘটনা ঘটেছে। আহমেদ ফয়সালের বাড়ি শরিয়তপুরের ডামুড্যা গ্রামে। নাজিয়া আফরিন চৌধুরীর বাসা রাজধানীর সূত্রাপুরের টিপু সুলতান রোডে। তাকে দাফন করা হয়েছিল বনানী কবরস্থানে। ফয়সালের পরিবারের সদস্যরা নাজিয়া আফরিনের পরিবারের সদস্যদের সাথে যোগাযোগ করেন। সে সময় পর্যন্ত নাজিয়া আফরিনের পরিবার বিষয়টি জানতো না, বলছেন আইনজীবী আলম। তবে যেহেতু ফয়সালের কফিনে নাজিয়ার নাম লেখা স্টিকার পাওয়া গেছে তাই তারাও বিষয়টিতে একমত হন এবং দুই পরিবার আদালতে আবেদন করেন। আইনজীবী আলম জানান, আহমেদ ফয়সালের কফিনে পাওয়া নাজিয়া আফরিন চৌধুরী লেখা স্টিকারও আদালতে দেখানো হয়।

আদালত কি বলেছে?

এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত দুজনের মরদেহ কবর থেকে উত্তোলনের নির্দেশ দিয়েছেন এবং পরস্পরের কাছে হস্তান্তর ও যার যার কবরে নতুন করে কবর দেওয়ার আদেশ দিয়েছেন।। আদেশে আরও বলা হয়েছে, ফয়সালের মরদেহ বনানী কবরস্থান থেকে তুলে তাঁর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করার জন্য ঢাকা জেলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে বলা হল। তবে এ বিষয়ে কোনও সময়সীমা দেয়া হয়নি। সেই সময় দেবেন ম্যাজিস্ট্রেট এবং সেটা বৃহস্পতিবারও হতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন। গত ১২ মার্চ নেপালে উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় নিহত হন ২৬ জন বাংলাদেশি। এর কয়েকদিন পর নেপালে বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে তাঁদের মরদেহ বাংলাদেশে আনা হলে আহমেদ ফয়সালের মরদেহ গ্রহণ করেন তাঁর মামা কায়কোবাদ। তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি স্পর্শকাতর পলে তিনি এ নিয়ে এখনই গণমাধ্যমে কথা বলতে চাইছেন না। এদিকে এ বিষয়ে প্রথমে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দরখাস্ত করা হয়েছিলো আহমেদ ফয়সালের পরিবারের পক্ষ থেকে এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়টি নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যেতে বলে। এরপর দীর্ঘ সময় লেগে যেতে পারে এই আশঙ্কায় তারা আদালতের দারস্থ হন বলেও জানান আইনজীবী আলম। বিবিসি

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn