কমনওয়েলথ গেমসের পর্দা উঠল
‘স্বপ্নকে ছড়িয়ে দাও’- স্লোগান তুলে পর্দা উঠল ২১তম কমনওয়েলথ গেমসের। বুধবার উৎসবের নগরীতে পরিণত হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার গোল্ডকোস্ট। হাজারও মানুষের ঢল নামে কারারা স্টেডিয়ামে। আতশবাজির বর্ণিল আয়োজন মুগ্ধ করেছে দর্শকদের। স্টেডিয়ামের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিশ্বের প্রায় দেড়শ’ কোটি দর্শক বিমোহিত হয়েছে টেলিভিশনের কল্যাণে। পারফরমাররা ইন্দ্রজাল বিস্তার করেছিলেন অনুষ্ঠানজুড়ে। আলোক রোশনাইয়ে অপরূপ হয়ে ওঠে কারারা স্টেডিয়াম।বাংলাদেশ সময় বুধবার বিকাল ৪টায় শুরু হয় গোল্ডকোস্টের নয়নাভিরাম উপস্থাপনা। যদিও তার এক ঘণ্টা আগে থেকে মাঠে উপস্থাপন করা হয় গেমসের ইতিহাস। এর এক ঘণ্টার মাথায় স্থানীয় সময় রাত ৮টায় কারারা স্টেডিয়াম কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। প্রশান্ত মহাসাগর শেষ পর্যন্ত শান্তই থাকে। ক’দিন ধরে সৃষ্ট নিুচাপের ধাক্কা আয়োজকদের বেশ দুশ্চিন্তায় ফেলেছিল। সফল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে উ ৎকণ্ঠার অবসান হল। আবহাওয়াবিদরা আগেই জানিয়েছিলেন বৃষ্টির আশঙ্কার কথা। বৃষ্টিও হয়েছে। কিন্তু অনুষ্ঠান শুরুর আগ মুহূর্তে বৃষ্টি থেমে যায়। একের পর এক চোখধাঁধানো উপস্থাপনা মুগ্ধ হয়েই অবগাহন করে দর্শকরা। অনুষ্ঠানের শুরুতেই প্রিন্স চার্লসকে বরণ করা হয়। সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী ক্যামিলা পারকার। এ সময় মঞ্চে ছিলেন কমনওয়েলথ গেমস ফেডারেশনের সভাপতি লুইস মার্টিন ও গোল্ডকোস্ট কমনওলেয়থ গেমসের চেয়ারম্যান পিটার বিওয়েটে।
অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন ও পতাকা উত্তোলনের পর আতশবাজি পুড়িয়ে শুরু হয় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী ববি অ্যালুর কণ্ঠে ধ্বনিত হয় ‘উকুলেলে’ গান। এ সময় পারফরমাররা গোল্ডকোস্টের সমুদ্র তলের বিনোদন ও সার্ফিংয়ের দৃশ্য ফুটিয়ে তোলেন চমৎকারভাবে। লাইফ গার্ডদের সুমদ্র øানে এসে ডুবন্ত পর্যটকদের উদ্ধারের দৃশ্যও ছিল মনোমুগ্ধকর। তার সঙ্গে মিশেল ছিল স্থানীয় আদিবাসীদের সংস্কৃতি। এর পরেই শুরু হয় অ্যাথলেটদের মার্চ পাস্ট। প্রথমেই আসে গত আসরের আয়োজক স্কটল্যান্ড। মার্চপাস্টেও প্রাধান্য দেয়া হয় সার্ফিংকে। সার্ফিংময় ওই মার্চ পাস্টে পতাকা বাহকের সঙ্গে দেশের নাম সংবলিত প্লাকার্ডের পরিবর্তে ব্যবহার করা হয় সার্ফিং বোট। বাংলাদেশ এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে মাঠে প্রবেশ করে। তারকা শুটার আবদুল্লাহেল বাকির বহন করা লাল-সবুজের পতাকার মিছিলে ছিলেন অন্য অ্যাথলেট ও কর্মকর্তারা। সবশেষে মাঠে আসে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিশাল বহর। প্যারা কমনওয়েলথ গেমসের প্রতিযোগীদের মার্চপাস্টের পরই ব্রিটেনের রানী এলিজাবেথের পক্ষে চার্লস ঘোষণা করেন গেমসের উদ্বোধন। তিনি বলেন, ‘আসুন আমরা এক হয়ে উপভোগ করি ক্রীড়ার এই মহাযজ্ঞ।’ এরপরই আকর্ষণীয় নাচ ও গানে আহ্বান জাননো হয় ১২ দিনব্যাপী এই গেমসে ডুবে যাওয়ার। কমনওয়েলথভুক্ত ৭১টি দেশের প্রায় সাড়ে ৪ হাজার ক্রীড়াবিদ এবারের আসরে অংশ নিচ্ছেন। আসরের মূল আয়োজক গোল্ডকোস্ট হলেও ব্রিসবেন, কেয়ার্নস ও টাউন্সভিলেতেও অনুষ্ঠিত হবে কয়েকটি ডিসিপ্লিন। গেমসের ইতিহাসে সর্বাধিক ডিসিপ্লিনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবারের প্রতিযোগিতা। ২৩টি ডিসিপ্লিনের পাশাপাশি থাকছে ৭টি প্যারা স্পোর্টস। ২৭৫টি স্বর্ণপদক জয়ের জন্য লড়বেন ক্রীড়াবিদরা। গেমসে সমানসংখ্যক পদক রাখা হয়েছে নারী ও পুরুষ অ্যাথলেটদের জন্য। আসরে প্রথমবার হচ্ছে বিচ ভলিবল, প্যারা ট্রাইথলন ও মহিলাদের সেভেন-এ-সাইড রাগবি।