অস্ট্রেলিয়ার ওয়ার্ক পার্মিটের জন্য কীভাবে আবেদন করবেন
সাবক্লাস ৪৮২ কর্মভিসা
টেম্পোরারি স্কিলড শর্টেজ ভিসার অন্তর্গত একটি ভিসা সাবক্লাস ৪৮২। প্রকৃতপক্ষেই দক্ষ কর্মীর ঘাটতি পূরণে অস্ট্রেলিয়ার যেকোনো নিবন্ধিত ও বৈধ প্রতিষ্ঠান এ ভিসায় বিদেশি কর্মীর জন্য আবেদন করতে পারবে অভিবাসন বিভাগের কাছে। এ ভিসাধারীরা বৈধভাবেই মনোনীত পেশায় অনুমোদিত স্পনসর প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সুযোগ পাবেন একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। এ ভিসায় স্বল্পমেয়াদি দুই বছর, মধ্যম মেয়াদি ৪ বছর এবং শ্রম চুক্তিতে তিন ধরনের ভিসা স্ট্রিম রয়েছে।
আবশ্যিক শর্ত
সাবক্লাস ৪৮২ কর্মভিসার অন্যান্য শর্তের মধ্যে আবশ্যিক শর্তটি হলো, ভিসাপ্রার্থীকে অবশ্যই টিএসএস ভিসার পেশা তালিকার জন্য একটি অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান কর্তৃক মনোনীত হওয়ার দক্ষতা থাকতে হবে। সে পেশা সংশ্লিষ্ট শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকতে হবে। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর বয়সের কোনো বাধা নেই তবে আবশ্যিকভাবে থাকতে হবে সাধারণ ইংরেজি ভাষা দক্ষতা। পেশার ওপর ভিত্তি করে ইংরেজি ভাষা দক্ষতার স্কোর ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। তবে সর্বনিম্ন স্বল্পমেয়াদি স্ট্রিমে আইএএলটিএসে ৪.৫ বা সমমান এবং মধ্যম মেয়াদি স্ট্রিমে ৫ বা এর সমমানের ইংরেজি ভাষা দক্ষতা থাকতে হবে। এ ছাড়া দেখাতে হবে পুলিশ কর্তৃক প্রদত্ত অপরাধী নয় এমন চারিত্রিক সনদ।
ভিসা প্রক্রিয়া
সাবক্লাস ৪৮২ ভিসাটিতে আবেদন করতে হলে তিনটি ধাপে আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে।
ধাপ এক: স্পনসরশিপের জন্য আবেদন
আবেদনকারীকে যে প্রতিষ্ঠান স্পনসর করবে সে প্রতিষ্ঠানটি যদি অস্ট্রেলিয়ার কমনওয়েলথ সরকারের কোনো সংস্থা না হয় তবে প্রতিষ্ঠানটিকে আগে অবশ্যই স্পনসর করার জন্য অনুমতি নিতে হবে। অভিবাসন বিভাগের ওয়েবসাইটে ইমি অ্যাকাউন্টের (immiaccount) মাধ্যমেই এর জন্য আবেদন করতে হবে। প্রতিষ্ঠানের যোগ্যতা যাচাইয়ের জন্য প্রতিষ্ঠানটির অস্ট্রেলিয়ায় পরিচালিত হচ্ছে এমন কিছু কাগজপত্র দাখিল করতে হবে। আবেদন মঞ্জুর হয়ে গেলে পাঁচ বছর পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি স্পনসর করতে পারবে। সেই সঙ্গে একজন স্পনসর মেয়াদ থাকাকালে একাধিক প্রার্থীকেও চাকরি দেওয়ার অফার করে এ ভিসায় মনোনীত করতে পারবে।
এ ব্যাপারে জানা জরুরি
অস্ট্রেলিয়ার টিএসএস কর্মভিসায় স্পনসর একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও আবশ্যিক শর্ত। অস্ট্রেলিয়ার নিবন্ধিত ও বৈধ প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত পেশায় মনোনীত না করলে টিএসএস কর্মভিসার জন্য আবেদনই করা যাবে না। আর এ কাজটা ভিসাপ্রার্থীকেই করতে হবে। এ জন্য সবার আগে যেটা করতে হবে, পছন্দের কিংবা দক্ষতা রয়েছে এমন পেশার অস্ট্রেলীয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করা। অনলাইনের এ যুগে সেটা খুব কঠিন কিছু নয়। তবে এ ক্ষেত্রে খানিকটা সুবিধা পাবেন যাদের অস্ট্রেলিয়ায় পরিবার-পরিজন রয়েছে। তবে সেটা শুধু যোগাযোগের ক্ষেত্রেই। বাকিটা ভিসাপ্রার্থী নিজেই করতে হবে। তা ছাড়া বাংলাদেশে প্রায়শই বিভিন্ন বিদেশি প্রতিষ্ঠানের নানা সম্মেলন হয়ে থাকে। এমন অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়াও এ ক্ষেত্রে সুবিধা করে দিতে পারে। আর নিজের দক্ষতা প্রমাণ করতে পারলে অস্ট্রেলীয় প্রতিষ্ঠান কর্তৃক মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে। ইংরেজি ভাষা দক্ষতা আইইএলটিএসে স্কোর সর্বনিম্ন ৪.৫ বা সমমানের হলেও যত বেশি স্কোর থাকবে তা প্লাস পয়েন্ট হিসেবে কাজে দেবে। কারণ দিন শেষে দক্ষ যোগাযোগ পারদর্শিতা একটা ব্যাপার।
ধাপ দুই. আমন্ত্রিত বা মনোনীত হওয়া
৪৮২ কর্মভিসা ভিসাটি পেতে আবেদনকারীকে অবশ্যই অস্ট্রেলিয়ার কোনো অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান কর্তৃক মনোনীত হতে হবে। মনোনয়ন ছাড়া এ ভিসায় আবেদন করা যায় না। কোনো প্রার্থীকে মনোনয়ন করতে অস্ট্রেলিয়ার অভিবাসন বিভাগের ইমি অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ‘নমিনেশন’ আবেদনপত্র জমা দিতে হবে। আর এ প্রক্রিয়ার শুরুতেই স্পনসরের আবেদনপত্রের কিছু তথ্য দিতে হবে। আবেদনপত্রে স্পনসরের ও প্রার্থীর বর্ণনা, কোন পেশার জন্য মনোনয়ন করা হচ্ছে তার বিস্তারিত এবং কোনো অতিরিক্ত শর্ত রয়েছে কিনা তার উল্লেখ করতে হবে। তবে পেশার ভিত্তিতে নমিনেশন আবেদনপত্র ভিন্ন হতে পারে। যেমন চিকিৎসক, নার্স বা রসায়নবিদদের অস্ট্রেলিয়ায় এ ধরনের কাজ করার লাইসেন্স কিংবা সদস্যপদের সনদ প্রাপ্তির কাগজপত্র লাগবে।ধাপতিন. ৪৮২ ভিসায় আবেদন
সাবক্লাস ৪৮২ কর্মভিসায় যে প্রতিষ্ঠান স্পনসর করার অনুমতি পেয়েছে সেই প্রতিষ্ঠান যে প্রার্থীকে মনোনয়ন করবে, সেই প্রার্থী মূল ভিসায় আবেদন করবেন। যথারীতি সেই একইভাবে ইমি অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে আবেদনপত্র পূরণ করে জমা দিতে হবে। আবেদনকারীর সকল তথ্য ও প্রমাণপত্র জমা দিয়ে ভিসা ফি (বর্তমানে ১ হাজার ১৫০ অস্ট্রেলীয় ডলার) জমা দিয়ে আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে।
আবেদন করা হয়ে গেলে অস্ট্রেলিয়ার অভিবাসন বিভাগ ভিসাপ্রার্থীর স্পনসর, মনোনয়নপত্র ও আবেদনকারীর সকল তথ্য যাচাই করে দেখবে। সাধারণত সকল কাগজপত্র ও প্রমাণাদি সঠিক থাকলে দুই–তিন মাসে ভিসা মঞ্জুর হয়ে যায়। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১১ মাস বা তারও বেশি লেগে যেতে পারে।
ভিসাপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে কয়েকটা বিষয় জেনে রাখা ভালো
অস্ট্রেলিয়া পৃথিবীর অন্যতম একটি অভিবাসন দেশ। তাই আইনের জটিলতাও দেশটিতে ব্যাপক। আর অভিবাসন আইনের রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে খুবই সতর্ক দেশটির সরকার। যেকোনো ভিসার আবেদনপত্র বেশ সুচারুভাবেই খতিয়ে দেখে অস্ট্রেলিয়ার অভিবাসন বিভাগ। বলা যায়, কঠোর ও সদা পরিবর্তিত আইনের কারণে অস্ট্রেলিয়ার ভিসাপ্রাপ্তি খুব সহজসাধ্য কোনো বিষয়ও নয়। তা ছাড়া ঘনঘন অভিবাসন আইনে নানা পরিবর্তন আনে দেশটির সরকার। ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া, যোগ্যতা, প্রমাণপত্র ও আসনসংখ্যা কিংবা সময়সীমায় এ ধরনের পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়। তাই অস্ট্রেলিয়ার অভিবাসন বিভাগের ওয়েবসাইটে ৪৮২ কর্মভিসাটির বিস্তারিত তথ্য রয়েছে। ভিসা আবেদনের আগে এগুলো মনোযোগ নিয়ে পড়তে হবে। এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য হালনাগাদ হলো কিনা তাও নিয়মিত লক্ষ্য রাখতে হবে।
ভিসা লিংক: <www.homeaffairs.gov.au/trav/visa-1/482-#tab-content-0>