নারী ও মাদক নিয়ে বিরোধে মা-ছেলে খুন-আদালতে স্বীকার
সিলেট নগরীর মিরাবাজারের খারপাড়ায় মা-ছেলের হত্যাকাণ্ডটি নারী ও মাদক সংক্রান্ত বিরোধের জের থেকে করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তানিয়া-মামুন দম্পতি। এছাড়াও এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তারা সরাসরি জড়িত ছিলেন বলে আদালতে ১৬৪ ধারায় তানিয়া ও মামুন জবানবন্দি দেয় বলে মঙ্গলবার (১০ এপ্রিল) দুপুরে জানান সিলেট মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (প্রসিকিউশন) অমূল্য কুমার চৌধুরী। সোমবার (৯ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৮ টার দিকে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হরিদাস কুমারের আদালতে নিজেদের জড়িয়ে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয় জোড়া খুনের মামলার গ্রেপ্তার হওয়া তানিয়া-মামুন দম্পতি। এর আগে সোমবার সন্ধ্যায় পিবিআই থেকে আসামি বুঝে পান সিলেট কোতোয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গৌসুল হোসেন এরপর রাতেই ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি গ্রহণের জন্য আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তারা দীর্ঘক্ষণ জবানবন্দি দেয় বলে জানান ওসি। আদালতে তারা জানায়, রোকেয়া বেগম ও তার ছেলে রবিউল ইসলাম রোকনকে অচেতন করে হত্যা করে তানিয়া ও মামুন। এসময় তারা স্বামী-স্ত্রী মিলে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে মা ও ছেলেকে। তাদের হত্যার পরিকল্পনায় ছিলো রোকেয়ার পরিবারের সবাইকে মেরে ফেলা। ভাগ্যবশত বেঁচে যায় শিশু রাইসা।
পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ৩০ মার্চ বিকেলে ঝড়ের সময় তার স্বামী মামুনকে নিয়ে রোকেয়ার বাসায় যায় তানিয়া। রাতের খাবারের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন করে। রাত আনুমানিক ২টার দিকে মামুন ছোরা মারে রোকেয়ার গলায়। মৃত্যু নিশ্চিত করতে রোকেয়ার শরীরে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে। এরপর তারা রোকেয়ার ছেলে রোকনকে ছুরিকাঘাত করে। আসামিদের স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, তানিয়া আক্তার দুই বছর আগে সিলেটে হজরত শাহজালাল (র.)-এর মাজারে আসেন। এখানেই পরিচয় হয় রোকেয়া বেগমের সাথে। পাশাপাশি দেখা হয় মামুনের সাথেও। পরে রোকেয়া বেগম কুমিল্লা থেকে আসা তানিয়াকে বোন বানিয়ে সিলেটে রেখে দেন। এদিকে, মামুনের সাথেও তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। এর কয়েক দিন পরই মামুনের সাথে তানিয়ার বিয়ে হয়। বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রী আলাদা আলাদা বসবাস করতেন। এদিকে রোকেয়া তানিয়াকে নিষিদ্ধ পথে নামান। আর একথা স্বামী মামুনকে জানালে রোকেয়া বেগমকে হত্যার পরিকল্পনা করেন তারা। এর অংশ হিসেবে গত ৩০ এপ্রিল রাত ৮টার দিকে তানিয়া ও মামুন রোকেয়ার বাসায় যান। পরে রাতের খাবারের সাথে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে পরিবারের সবাইকে অচেতন করা হয়।
রাত ১টার দিকে স্বামী-স্ত্রী মিলে প্রথমে রোকেয়া বেগমের কক্ষে যান। ঘুমে অচেতন রোকেয়া বেগমের মুখে কম্বল দিয়ে শ্বাসরোধ করার জন্য চেপে ধরেন তানিয়া আর ছুরি দিয়ে গলা কেটে ও কুপিয়ে রোকেয়াকে হত্যা করেন মামুন। পরে পার্শ্ববর্তী রুমে ঘুমে অচেতন রোকেয়ার ছেলে রোকনকেও একই কায়দায় হত্যা করেন তারা। এদিকে জীবিত উদ্ধার হওয়া রোকেয়া বেগমের পাঁচ বছর বয়সী মেয়ে রাইসাকেও তারা হত্যার উদ্দেশে ঘুমের ঔষধ খাওয়ায় এবং গলা চেপে ধরে। রাইসাও মারা গেছে এমন ধারণায় তারা রাতেই এই বাসা ত্যাগ করে। পুলিশ আরও জানায়, রোকেয়ার ইয়াবা ব্যবসা ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার বিষয়টি জবানবন্দিতে তুলে ধরা ছাড়াও বিশদ বর্ণনা দেয় তারা। জবানবন্দি গ্রহণ শেষে বিচারক তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
উল্লেখ্য, গত ১ এপ্রিল নগরীর মিরাবাজারের খারপাড়া মিতালী আবাসিক এলাকার ১৫/জে নম্বর বাসায় রোকেয়া বেগম (৪০), তার ছেলে রবিউল ইসলাম রোকনের (১৭) গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ সময় রোকেয়ার সাড়ে ৩ বছর বয়সী মেয়ে রাইসাকে উদ্ধার করা হয়। গত এক বছর ধরে এ বাসায় ভাড়া থাকতেন তারা। এ ঘটনায় রোকেয়ার ভাই জাকির হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাত পরিচয় ৪-৫ জনকে আসামি করে কোতোয়ালী থানায় মামলা করেন। মামলার পর গত বুধবার শহরতলীর বটেশ্বর এলাকা থেকে নাজমুল হোসেন নামে একজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তাকে ৭ দিনের রিমান্ডে পাঠান আদালত।