টেংরাটিলায় তীব্র জ্বালানি সংকট, বাড়ছে গ্যাসের ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবহার
দোয়ারাবাজার উপজেলার টেংরাটিলা গ্যাস ফিল্ড এলাকায় জ্বালানি সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। পরিত্যক্ত টেংরাটিলা গ্যাস ফিল্ড এলাকায় বিস্ফোরণের পর আগুনে অসংখ্য গাছপালা পুড়ে ভস্মিভূত হয়ে যায়। এর পর থেকে নতুন গাছ রোপণ করলেও গাছ মরে যাচ্ছে। টেংরাটিলা এলাকায় দেখা দিয়েছে জ্বালানির তীব্র সংকট। জ্বালানি সঙ্কটের কারণে গ্যাসক্ষেত্রের আশপাশ এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ ভাবে পাইপ দিয়ে গ্যাস ব্যবহার করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এসব লিকেজ গ্যাস নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই সরাসরি চুলায় সংযোগ করায় যে কোন সময় বড় দুর্ঘটনার আশংকা করছেন সংশ্লিষ্টরা। ২০০৫ সালের ৭ জানুয়ারি রাত ১০টায় টেংরাটিলা গ্যাস ফিল্ডে প্রথম দফা বিস্ফোরণ ঘটে। ২য় দফা বিস্ফোরণ ঘটে একই বছরের ২৪জুন রাত ২টায়। গ্যাস ফিল্ড এলাকায় দুর্ঘটনার ১৩বছর পেরিয়ে গেলেও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সরকারিভাবেও কোন পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়নি। সরজমিনে টেংরাটিলা গ্যাস ফিল্ড বিস্ফোরিত এলাকা ঘুরে দেখা যায়- গ্যাস ফিল্ডের পার্শ্ববর্তী গ্রামের বিভিন্ন পুকুর, জমি, রাস্তা ও বাড়ি-ঘরের ফাটল দিয়ে বুদবুদ আকারে গ্যাস বেরুচ্ছে। জ্বালানি সংকটের কারণে এলাকাবাসী নিজেদের উদ্যোগে ঝুঁকি নিয়েই মাটির নিচ থেকে কৌশলে পাইপ লাইন বসিয়ে গ্যাসের চুলা তৈরি করে রান্নার কাজ করছেন। টেংরাটিলা গ্রামের বাসিন্দা গৃহবধূ রেহানা বেগম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আগুন লাগনের ফর থাইক্কা কত টিভি আর ফেপারে রিপোর্ট হইছে, আমরা যে কত খষ্টে বাইচ্ছা আছি, কই সরকার তোর আমাদের খবর রাখে না। ” একই গ্রামের আনোয়ার হোসেন বলেন, এলাকার বেশীরভাগ ভাগ গাছপালা মরে যাওয়ার পর নতুন করে আর কোন গাছের জন্ম হচ্ছে না। আমরা বেশ কয়েক বছর ধরে মাটির নিচ থেকে পাইপ দিয়ে গ্যাস রান্নার কাজে ঝুঁকি নিয়েই ব্যবহার করছি। বর্তমানে গ্যাস ফিল্ডের আশপাশে ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় সব বাড়িতে বিভিন্ন ফাটল, ফসলি জমি ও রাস্তা দিয়ে গ্যাস উদগীরণের ফলে বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা শুকিয়ে মরে যাচ্ছে। সুরমা ইউনিয়নের খন্দকার মো. মামুনুর রশীদ বলেন, স্থানীয় লোকজন জ্বালানি সংকটের কারণে নিরুপায় হয়ে ঝুঁকি নিয়ে গ্যাস ব্যবহার করছে। ঝুঁকি নিয়ে গ্যাসলাইন ব্যবহার না করার পরামর্শ দেয়া হলেও জ্বালানি সংকটের কারণে অনেকেই বাধ্য হয়েই ব্যবহার করছেন। এছাড়াও গ্যাস ফিল্ডে বিস্ফোরণের পর টিউবওয়েলের পানিতে আর্সেনিক দূষণ, শ্বাসকষ্ট, শ্রবণশক্তি হ্রাস, চোখে কম দেখা, চর্মরোগসহ নানা সমস্যায় আক্রান্ত হয়েছেন এলাকাবাসী। দোয়ারাবাজার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইদ্রিস আলী বীর প্রতীক বলেন, স্থানীয়দের জ্বালানি সংকট নিরসন ও ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের তিনি সরকারের সুদৃষ্টি প্রয়োজন। এই বিষয়ে দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) প্রশান্ত কুমার বিশ্বাস বলেন, প্রায় দু’সপ্তাহ পূর্বে পেট্রোবাংলার একটি বিশেষজ্ঞ দল টেংরাটিলা এলাকা পরিদর্শন করে গেছেন এবং এলাকায় তাদের একজন প্রতিনিধি সার্বক্ষণিক অবস্থান করছেন।