ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ভবনে হামলাকারীর পরিচয় প্রকাশ করেছে দেশটির পুলিশ। পুলিশ বলছে, হামলাকারীর নাম খালিদ মাসুদ। ধর্মান্তরিত এই মুসলিমকে নিয়ে আলোচনা-সমলোচনার ঝড় বইছে। ৫২ বছর বয়সী কে এই খালিদ? খালিদ মাসুদ সম্পর্কে জানেন এমন ব্যক্তিদের বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বিভিন্ন ধরণের নতুন নতুন তথ্য দিচ্ছে। এতে বিতর্ক আরো ঘনিভূত হচ্ছে। বলা হচ্ছে, খালিদকে একসময় ‘ভালো মানুষ’ হিসেবে চিনতেন তার সাবেক প্রতিবেশীরা। তিনিই হামলাকারী জেনে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন তারা। প্রতিবেশিরা জানান, খালিদের ছোট ছোট বাচ্চা রয়েছে। তবে তার সন্তান সংখ্যা নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য আছে। পরিচিতজনদের কেউ কেউ বলেছেন, মাসুদের তিনটি সন্তান, আবার কেউ বলেছেন মাসুদের সন্তান সংখ্যা ৪। খালিদ মাসুদের পরিচিত এবং প্রতিবেশীদের সাক্ষাৎকার নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ পত্রিকা ইন্ডিপেনডেন্ট।

এতে বলা হয়, খালিদ মাসুদের জন্ম কেন্টের ডার্টফোর্ডে। আড্রিয়ান ইলমস নামে বেড়ে ওঠা খালিদ মাসুদ সম্প্রতি ওয়েস্ট মিডল্যান্ডস-এ বসবাস করছিলেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, সহিংস অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে কারাগারে যেতে হয়েছে খালিদকে। সেখানে থাকাকালে তিনি ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হন। আড্রিয়ান ইলমস নাম পাল্টে খালিদ মাসুদ করা হয়। কারাগারে থাকার সময়ই তিনি ইসলামী উগ্রপন্থায় আগ্রহী হন বলে মনে করা হচ্ছে।

স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড জানিয়েছে, মাসুদ একবার এক ব্যক্তির মুখে ছুরিকাঘাত করেছিলেন। তা এতটাই মারাত্মক ছিল যে ওই ব্যক্তিকে কসমেটিক সার্জারি করাতে হয়েছে। প্রথমবার ১৯৮৩ সালের নভেম্বরে দোষী সাব্যস্ত হন মাসুদ। আর ২০০৩ সালের ডিসেম্বরে ছুরি বহনের অভিযোগে সর্বশেষ দোষী সাব্যস্ত হন তিনি। তবে সন্ত্রাসী কোনও হামলার অভিযোগে মাসুদ কখনও দোষী সাব্যস্ত হননি।

এদিকে মেট্রোপলিটন পুলিশ জানিয়েছে, খালিদ মাসুদের অনেকগুলো ছদ্মনাম রয়েছে। তবে মেট্রোপলিটন পুলিম কিংবা সাসেক্স পুলিশের কেউই মাসুদের বিরুদ্ধে থাকা অভিযোগ এবং তার কারাদণ্ড নিয়ে বিস্তারিত জানায়নি। তবে নিরাপত্তদা বাহিনীর এই বক্তব্যে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন খালিদ মাসুদের সাবেক প্রতিবেশীরা। তারা ইন্ডিপেনডেন্টকে জানিয়েছেন, তিনি খুব ভালো মানুষ ছিলেন, যার স্বাভাবিক একটি পরিবার ছিল।

বৃহস্পতিবার হাউস অব কমন্সে দেওয়া বক্তব্যে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে বলেন, হামলাকারী ব্যক্তি একজন ব্রিটিশ নাগরিক। পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগ তাকে চিনতো এবং কয়েক বছর আগে সহিংস উগ্রপন্থার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে তদন্তও করা হয়েছিল। এমপিদের উদ্দেশে থেরেসা মে বলেন, ‘গতকাল সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে আমাদের গণতন্ত্রকে নীরব করার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু একটি বার্তা দিতে আজ আমরা স্বাভাবিকভাবে একত্রিত হয়েছি। যেভাবে আমাদের পূর্ববর্তী প্রজন্ম একত্রিত হয়েছিলেন এবং যা পরবর্তী প্রজন্ম বজায় রাখবে। বার্তাটি হলো: আমরা ভীত নই এবং সন্ত্রাসবাদ দিয়ে আমাদেরকে সংকল্প থেকে সরিয়ে আনা যাবে না।’

উল্লেখ্য, বুধবার ওয়েস্টমিনস্টার সেতুর ওপর দিয়ে পার্লামেন্টের দিকে আসার পথে সজোরে গাড়ি চালিয়ে তা পথচারীদের ওপর উঠিয়ে দেন এক ব্যক্তি। পরে গাড়িটি পার্লামেন্টের নিরাপত্তাবেষ্টনীতে গিয়ে আঘাত হানে। এরপর হামলাকারী ৮ ইঞ্চি ছুরি নিয়ে পার্লামেন্ট ভবনে প্রবেশের চেষ্টা করলে নিরাপত্তারক্ষীরা বাধা দেন। এসময় এক পুলিশ সদস্যের ওপর ছুরিকাঘাত করলে পুলিশের গুলিতে হামলাকারী নিহত হয়। এতে এক পুলিশ কর্মকর্তাসহ কমপক্ষে ৫ জন নিহত হন। আহত হন আরো অন্তত ৪০ জন।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn