সভানেত্রী শেখ হাসিনার কাছে খোলাচিঠি
আদিবা এদিব খান-
মাননীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
প্রিয় নেত্রী,
আমার সালাম নিবেন। আশা করি, আল্লাহর রহমতে ভালো আছেন। আমি আদেলী এদিব খান আহ্নি; ঢাকা ডেন্টাল কলেজে ইন্টার্ন করছি। আমি ঢাকা মহানগর (উত্তর) ছাত্রলীগের ইতিহাসে প্রথম মেয়ে স্বাস্থ্য সম্পাদক হিসেবে এতদিন দায়িত্ব পালন করেছি। তাই আজ অধিকার নিয়ে আমি এই চিঠিটি প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে নয়, আমি আমার দলের সভানেত্রীকে লিখছি। কোনো ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা করে দিবেন। শিক্ষা, শান্তি ও প্রগতির পতাকাবাহী সংগঠন, জাতির মুক্তির স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া, জীবন ও যৌবনের উত্তাপে শুদ্ধ সংগঠন, সোনার বাংলা বিনির্মাণের কর্মী গড়ার পাঠশালা আমার প্রাণের ছাত্রলীগ। সময়ের প্রয়োজন মেটাতেই এগিয়ে চলা বাংলাদেশ ছাত্রলীগের। জন্মের প্রথম লগ্ন থেকে ভাষার অধিকার, শিক্ষার অধিকার, বাঙালির স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠা, দুঃশাসনের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থান, সর্বোপরি স্বাধীনতা ও স্বাধিকার আন্দোলনের ছয় দশকের সবচেয়ে সফল সাহসী সারথি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।
প্রিয় নেত্রী,
আপনার দিক নির্দেশনা অমান্য করে আমার প্রাণ প্রিয় সংগঠনে কোনো রূপ যাচাই বাছাই ছাড়া অর্থের বিনিময়ে দেশ বিরোধী শক্তির এজেন্টদের পদ-পদবি দেওয়া হয়েছে। কাদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে সংগঠন শীর্ষ নেতাগণ তাদের সংগঠনের সাথে বেঈমানি করে পদ-পদবি দিলেন; কোটা বিরোধী আন্দোলনই সেটা সবার কাছে পরিষ্কার করে দিয়েছে। অত্যন্ত দুঃখভারাক্রান্ত মন নিয়ে আজ লিখছি। আমার প্রাণের সংগঠনকে মানুষ লুটেরা, চাঁদাবাজ, ধান্দাবাজ, নারী নির্যাতনকারী বলে আখ্যায়িত করেছে ঐ সকল লেবাসধারীদের কারণে।নিজের দায়িত্ববোধের কারণে লেবাসধারি ছাত্রলীগের কুকর্মের প্রতিবাদ ও তাদের দমাতে গিয়ে অপমানিত হয়েছি সংগঠনের শীর্ষনেতাদের কাছে বারবার এবং ব্যর্থ হয়েছে আমার সব রকম চেষ্টা। জন্মভূমি এবং প্রিয় সংগঠনের জন্যে করতে চেয়েও পারিনি। কারণ আমি একজন নারী।বাংলাদেশ ছাত্রলীগে এখনো অনেক সোনারটুকরা কর্মী রয়েছে যারা নিজের জীবন উৎসর্গ করতে প্রস্তুত মাতৃভূমির জন্যে। কিন্তু অন্যায়ের প্রতিবাদ করলেই প্রবঞ্চনার শিকার হতে হয়েছে খোদ শীর্ষনেতাদের কাছেই। মন থেকে ভালবেসে সংগঠনের জন্যে ভালো কিছু করতে চাইলে বাধা হয়েছে লেবাসধারি ঐ শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। আমি ক্ষমাপ্রার্থী প্রিয় নেত্রী। সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও আমার প্রাণপ্রিয় ছাত্রলীগের সম্মান রক্ষা করতে পারিনি।
প্রিয় নেত্রী,
বাংলাদেশ আজ ডিজিটাল। আল্লাহর রহমতে মানুষের চিন্তা ভাবনা থেকে শুরু করে জীবন ব্যবস্থা সব কিছু বদলে গেছে আপনার দক্ষ নেতৃত্ব এবং দূরদর্শিতার কারণে। কিন্তু আমাদের সরকারের এত উন্নয়ন ও সফলতা ম্লান করতেই যেন আজ মরিয়া ঐ লেবাসধারি ছাত্রলীগ সিন্ডিকেট।
প্রিয় নেত্রী,
আমি খুব গর্ব করে বলি আমি ছাত্রলীগের একজন নারীকর্মী। আমি আমার একমাত্র গর্বটিকে নষ্ট হতে দিতে চাইনা। আমি চাই ছাত্রলীগ তার গৌরবময় ইতিহাসটুকু ধরে রাখুক। ব্যক্তিগত কোনো চাওয়া আমার নেই। শুধু চাই মানুষ আমার প্রিয় সংগঠনকে লক্ষ্য করে আঙুল তোলার কোনো কারণ যেন কেউ না পায়। আমি বিশ্বাস করি, মানুষের মন জয় করা যায় ভালোবেসে, অপরাজনীতি করে নয়। বর্তমানে মারামারি কিংবা নোংরামি পছন্দ করেনা কেউই। সবাই চায় শিক্ষিত, স্মার্ট, ভদ্র এবং সামাজিক ছাত্রনেতা। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের ছাত্রলীগ অবশ্যই অনেক ভালো কিছু করতে পারবে এবং নিজের সোনালি অতীত সমুন্নত রাখতে পারবে যদি এবারের সম্মেলনে সংগঠন তার যোগ্য নেতৃত্ব পায়।
প্রিয় নেত্রী,
আমার ছোটবেলার অনেক স্মৃতিবিজড়িত হয়ে আছে আপনার সাহচর্যের কারণে। বর্তমানে যা আমার দৃঢ়তা ও সাহসের উৎসস্থল। জন্মদাত্রি মা এবং মাতৃভূমির মতন প্রাণের চেয়েও বেশি ভালোবাসি আপনাকে। আপনিই আমাদের একমাত্র আশ্রয়স্থল, আস্থা এবং ভরসার জায়গা। আপনিই পারেন আমাদের প্রাণের ছাত্রলীগে যোগ্য, বলিষ্ঠ ও যুগোপযোগী নেতৃত্ব নির্বাচিত করে সোনালি ইতিহাসের আলোকে সংগঠনকে রাজনীতির মূল ধারায় ফিরিয়ে আনতে। দোয়া করবেন আমার জন্য যাতে আপনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে ধারণ করে দেশ ও দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে পারি আমরণ।
শ্রদ্ধান্তে,
আদিবা এদিব খান
স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, ঢাকা উত্তর।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু