অনলাইনে নির্ভরতার গল্প
bartaadmin
মে ১৬, ২০১৮
অনলাইনে নির্ভরতার গল্প২০১৮-০৫-১৬T১২:২৬:২৬+০০:০০
মুক্তমত, শিরোনাম, সর্বশেষ, সর্বাধিক পঠিত
মুন্নী সাহা-
এমন করেই বোধহয় চিনতে শুরু হওয়াটা ঠিক ছিল। আগে তিতা পরে মিঠা। যদি তিতার পরে মিঠার সুযোগ আদৌ থাকে! আমার সুযোগটা হয়েছে। বলছি, অনলাইন নিউজ পোর্টালের সঙ্গে আমার কৌতূহল আর নির্ভরতার গল্প। বাংলাদেশের সংবাদকর্মীরা সবাই আমরা জানি, ২০০৫ সালের জুনে বিডিনিউজ-এর শুরুর দিকটা। তবে তেমন গভীরভাবে দেখিনি। পরে ২০১৩ সালে আমিই একট ি জাতীয় দৈনিকের অনলাইনে শিরোনাম হলাম। ‘গসিপ’ বললে গসিপ শব্দটার প্রতি অবিচার হয়। কী যে ছিল, তার ব্যাখ্যা না দেই। বরং বলি, কী করেছি আর কী লিখেছে দৈনিকটির অনলাইন। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন কাভার করতে গেছি, প্রধানমন্ত্রীর সরকারি সফর দলে। আগে থেকেই চেষ্টা করছিলাম প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎকার নেওয়ার। সেবার সহযোগিতা করলেন সায়মা হোসেন। একটা ফর্মাল কল অন কাভার করার জন্য অপেক্ষমাণ সবার মধ্য থেকে সায়মা হোসেন পুতুল আমাকে বললেন, মুন্নী আপা মেইল চেক করেন। হুম, আমি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সাক্ষাৎকারের সময় পেয়েছি। তার হোটেল রুমের পাশে কনফারেন্স রুমে। যথাবিহিত অপেক্ষার পর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তার স্বভাবসুলভ আন্তরিকতায়, ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের বিদায় জানাতে জানাতে চোখের ইশারায় কাছে টেনে নিলেন আমাকে। পেছনে এটিএন বাংলার ক্যামেরাপারসন আলমগীর। আমি ওকে ধার নিয়ে গেছি ওর ঢাউস ক্যামেরাসহ। লম্বা ইন্টারভিউ। এত কাছে, one to one কথা বলার সুযোগ আমরা বাংলাদেশে পাই না। শেখ হাসিনা এবার আমার তিন ক্যামেরার সামনে অন্য মানুষ। কখনও হাসছেন, মজা করছেন, আমাকে খোঁচাচ্ছেন। তিনি বসেছেন সোফায়, আমি চেয়ার টেনে বসতে গিয়ে দেখি, একটু কেমন ফ্রেম হয়, একবার ক্যামেরায় লুক থ্রু করি, একবার পাশে ল্যাম্পশেডটা টেনে এনে বাউন্স লাইট করি। সামনে মিটমিট হাসছেন প্রধানমন্ত্রী। আমাকে একটু প্রশংসাই করলেন। ‘বাপ রে, সব শিখ্যা গেছো! শোনো ওই চেয়ারটা টেনে বসো। ব্যালেন্স ফ্যালেন্স লাগবে না। তুমি একটু লম্বা, মাথাটা উঁচাই দেখা যাবে, বুঝবে তোমার দর্শকরা। আর তুমি হাঁটু গেড়ে মাটিতে বসলে কেমন দেখা যাবে? আমি তো অনেকক্ষণ কথা বলবো।’ তিনজনই হাসি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ক্যামেরা পারসন আলমগীর আর আমি। তিনজনই তখন ওই কনফারেন্স রুমে। দরজার কাছে শুধু সিকিউরিটি ও প্রোটোকলের কয়েকজন। আলমগীর ক্যামেরা ট্রাইপয়েডে বসাচ্ছে, আমাদের প্রিয় আপার কণ্ঠ এবার, ‘তোমার নাম কী রে ভাই? তোমরা দুই চ্যানেল মিলে আমার ইন্টারভিউ নিবা? মাইক তো একটাই।’
আলমগীর এতক্ষণ ভয়ে কাঁপছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর এই আদুরে প্রশ্নে নির্ভয়ে উত্তর করলেন, ‘না আপা। দিদি তো এক্সক্লুসিভ টাইম পেয়েছেন। দিদির চ্যানেলেই পুরোটা দেখাবো। দিদির সঙ্গে ক্যামেরাপারসন আসেননি। তাই আমাকে নিয়ে এসেছেন।’ প্রধানমন্ত্রী মুখ টিপে হাসতে হাসতে আমার দিকে একটু মজা করেই বললেন, ‘হ্যাঁ, দিদি প্রশ্ন করুন। আপনি তো আবার জ্বালাময়ী…!’ দু’জনে মিলে ওই হাসাহাসিটুকুও ক্যামেরায় ধরলেন আলমগীর। এবার থ্রি ক্যামেরা রোল, থ্রি টু ওয়ান জিরো. . .অ্যাকশন! অনলাইন নিয়ে লিখতে বসে শেখ হাসিনার ইন্টারভিউর অ্যাম্বিয়েন্স বা পারিপার্শ্বিক বর্ণনা করছি বলে বিরক্ত হচ্ছেন তো? হুম। ওই ইন্টারভিউর পরেই ওই জাতীয় দৈনিকটির অনলাইনে শিরোনাম ‘মুন্নী সাহার কেলেঙ্কারি, গোপন ক্যামেরায় প্রধানমন্ত্রীর গোপনকথা রেকর্ডের চেষ্টা!’ প্রধানমন্ত্রীর হোটেল থেকে আমার হোটেলে ৪/৫টা ব্লক পরে। মনভালো, মন খারাপ নিয়ে আমি আলমগীর হেঁটে আসতে না আসতেই বাংলাদেশ থেকে ফোন শুরু। প্রভাষ আমিন ফোনে জানতে চান, কী হয়েছে? বড় বিপদ কিনা? একাত্তরের জুলহাজ ফোন করেন, আপনি তাড়াতাড়ি বলেন কী হয়েছে, আপনাকে অ্যারেস্ট করবে না তো? আমি ‘থ’! কী হলো, কী করলাম? ১০ মিনিটে বাংলাদেশ তোলপাড়, আমি নিজে সাংবাদিক হয়েও এই মিথ্যা রটনার গতি ঠাহর করতে পারলাম না। ওই যে বললাম, মন ভালো মন খারাপ! কারণ, আমি লম্বা সময় কথা বলার সুযোগ পেয়েছি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। ইন্টারভিউ শেষে আমাকে ও আলমগীরকে আদর করে রুমে ঢুকে গেলেন প্রধানমন্ত্রী। ঘটনাটি হয়েছিল- ইন্টারভিউ নেওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইংয়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ভেতরে ঢুকে আলমগীরের কাছ থেকে টেপ নিয়ে যান পরে দেওয়ার কথা বলে। তার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বাকি দুই ক্যামেরায় শট থাকা সত্ত্বেও আমরা কোনও ইন্টারভিউ প্রচার করিনি।
অথচ ওই ইন্টারভিউ নিয়ে নানান গুজব। মিথ্যা রং চড়ানো কন্টেন্টই কি অনলাইন? মজা তো! মুষড়ে না পড়ে নানা ঝালমুড়ি মার্কা অনলাইনের লিংক দেখছি। blessings in disguised! এটাও একটা তরিকা। ফেসবু কের ফেক আইডির মতো ফেক নাম দিয়ে যদি একটা অনলাইন করা যায়, তাহলে ক্রিয়েটিভ মিথ্যার ভালো ব্যবসা হবে বাংলাদেশে। এই প্ল্যান করছিলাম দূর থেকে জুলহাসের সঙ্গে। তারপর থেকে নিবিড়ভাবে দেখা শুরু আমার অনলাইন। নিউজ ভিউজ তো দেখিই, রিপোর্টার লেখক, পেজ মেকআপ- সবকিছুর ভেতরটাও দেখি। কারও কারও লেখা ফলো করি, তাকে নিজের টিমে নিতেও চাই। আমরা টিভি ট্রেনিংয়ে টিভি দেখা শিখেছি আগে, আর জীবনের ট্রেইনিং শেখালো ভার্চুয়াল রহস্যময়তা ভেদ করার কৌশল। ঠিক কৌশল না আগ্রহ। আমি ইট-পাথর, কয়লা-ময়লা সবটার মধ্যেই প্রাণ সঞ্চারের কথা বলি, খুঁজি। একে ওকে বলি, লেখাগুলো কথা কয় না কেন? অনলাইন আয়নাটা কি তাই! ওয়ান ডায়মেনশন? উড়ে গিয়েই ফুরিয়ে যাবে এই তারই আনন্দ? আমার এই খোঁজ খোঁজে চোখকে নির্ভরতা দিয়েছে একটা লোগো BT। সাংবাদিক মুন্নী সাহার চোখে এই লোগোটি MD। মানে মালটি ডায়মেনশন। লেখাগুলো কথা কয়, মানবিক, দায়িত্ববান। খটখটে আয়নার ভার্চুয়াল এই খবরের স্ট্যান্ডে অনেক সময় কাটাই, কথা বলে, কথা শুনে। কেমন জানি মানুষ মানুষ লাগে। Man behind the virtuallity। জয়তু BT। লেখক: প্রধান নির্বাহী সম্পাদক, এটিএন নিউজ
আলমগীর এতক্ষণ ভয়ে কাঁপছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর এই আদুরে প্রশ্নে নির্ভয়ে উত্তর করলেন, ‘না আপা। দিদি তো এক্সক্লুসিভ টাইম পেয়েছেন। দিদির চ্যানেলেই পুরোটা দেখাবো। দিদির সঙ্গে ক্যামেরাপারসন আসেননি। তাই আমাকে নিয়ে এসেছেন।’ প্রধানমন্ত্রী মুখ টিপে হাসতে হাসতে আমার দিকে একটু মজা করেই বললেন, ‘হ্যাঁ, দিদি প্রশ্ন করুন। আপনি তো আবার জ্বালাময়ী…!’ দু’জনে মিলে ওই হাসাহাসিটুকুও ক্যামেরায় ধরলেন আলমগীর। এবার থ্রি ক্যামেরা রোল, থ্রি টু ওয়ান জিরো. . .অ্যাকশন! অনলাইন নিয়ে লিখতে বসে শেখ হাসিনার ইন্টারভিউর অ্যাম্বিয়েন্স বা পারিপার্শ্বিক বর্ণনা করছি বলে বিরক্ত হচ্ছেন তো? হুম। ওই ইন্টারভিউর পরেই ওই জাতীয় দৈনিকটির অনলাইনে শিরোনাম ‘মুন্নী সাহার কেলেঙ্কারি, গোপন ক্যামেরায় প্রধানমন্ত্রীর গোপনকথা রেকর্ডের চেষ্টা!’ প্রধানমন্ত্রীর হোটেল থেকে আমার হোটেলে ৪/৫টা ব্লক পরে। মনভালো, মন খারাপ নিয়ে আমি আলমগীর হেঁটে আসতে না আসতেই বাংলাদেশ থেকে ফোন শুরু। প্রভাষ আমিন ফোনে জানতে চান, কী হয়েছে? বড় বিপদ কিনা? একাত্তরের জুলহাজ ফোন করেন, আপনি তাড়াতাড়ি বলেন কী হয়েছে, আপনাকে অ্যারেস্ট করবে না তো? আমি ‘থ’! কী হলো, কী করলাম? ১০ মিনিটে বাংলাদেশ তোলপাড়, আমি নিজে সাংবাদিক হয়েও এই মিথ্যা রটনার গতি ঠাহর করতে পারলাম না। ওই যে বললাম, মন ভালো মন খারাপ! কারণ, আমি লম্বা সময় কথা বলার সুযোগ পেয়েছি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। ইন্টারভিউ শেষে আমাকে ও আলমগীরকে আদর করে রুমে ঢুকে গেলেন প্রধানমন্ত্রী। ঘটনাটি হয়েছিল- ইন্টারভিউ নেওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইংয়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ভেতরে ঢুকে আলমগীরের কাছ থেকে টেপ নিয়ে যান পরে দেওয়ার কথা বলে। তার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বাকি দুই ক্যামেরায় শট থাকা সত্ত্বেও আমরা কোনও ইন্টারভিউ প্রচার করিনি।
অথচ ওই ইন্টারভিউ নিয়ে নানান গুজব। মিথ্যা রং চড়ানো কন্টেন্টই কি অনলাইন? মজা তো! মুষড়ে না পড়ে নানা ঝালমুড়ি মার্কা অনলাইনের লিংক দেখছি। blessings in disguised! এটাও একটা তরিকা। ফেসবু কের ফেক আইডির মতো ফেক নাম দিয়ে যদি একটা অনলাইন করা যায়, তাহলে ক্রিয়েটিভ মিথ্যার ভালো ব্যবসা হবে বাংলাদেশে। এই প্ল্যান করছিলাম দূর থেকে জুলহাসের সঙ্গে। তারপর থেকে নিবিড়ভাবে দেখা শুরু আমার অনলাইন। নিউজ ভিউজ তো দেখিই, রিপোর্টার লেখক, পেজ মেকআপ- সবকিছুর ভেতরটাও দেখি। কারও কারও লেখা ফলো করি, তাকে নিজের টিমে নিতেও চাই। আমরা টিভি ট্রেনিংয়ে টিভি দেখা শিখেছি আগে, আর জীবনের ট্রেইনিং শেখালো ভার্চুয়াল রহস্যময়তা ভেদ করার কৌশল। ঠিক কৌশল না আগ্রহ। আমি ইট-পাথর, কয়লা-ময়লা সবটার মধ্যেই প্রাণ সঞ্চারের কথা বলি, খুঁজি। একে ওকে বলি, লেখাগুলো কথা কয় না কেন? অনলাইন আয়নাটা কি তাই! ওয়ান ডায়মেনশন? উড়ে গিয়েই ফুরিয়ে যাবে এই তারই আনন্দ? আমার এই খোঁজ খোঁজে চোখকে নির্ভরতা দিয়েছে একটা লোগো BT। সাংবাদিক মুন্নী সাহার চোখে এই লোগোটি MD। মানে মালটি ডায়মেনশন। লেখাগুলো কথা কয়, মানবিক, দায়িত্ববান। খটখটে আয়নার ভার্চুয়াল এই খবরের স্ট্যান্ডে অনেক সময় কাটাই, কথা বলে, কথা শুনে। কেমন জানি মানুষ মানুষ লাগে। Man behind the virtuallity। জয়তু BT। লেখক: প্রধান নির্বাহী সম্পাদক, এটিএন নিউজ
সংবাদ টি পড়া হয়েছে :
২৭৪ বার