বৈরী আবহাওয়ায় সুনামগঞ্জে ব্যাহত হচ্ছে ধান সংগ্রহ
সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলে ধান সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়েছে। বৈরী আবহাওয়া ও বৃষ্টিপাতের কারণে বোরো ধান সংগ্রহ অভিযান ব্যাহত হচ্ছে। আবুল হোসেন নামের এক ব্যক্তি মাত্র ১ টন ধান বিক্রি করেছেন জেলার জামালগঞ্জ উপজেলার সাচনা এলএসডি খাদ্য গুদামে। চলতি বছরে জেলায় ৬ হাজার মেট্রিক টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্য থাকলেও ১৩ মে ধান সংগ্রহের সরকারি পত্র পাওয়ার পর ২৬ মে পর্যন্ত মাত্র ১ মেট্রিক টন ধান ক্রয় করতে পেরেছেন জেলা খাদ্য বিভাগ। জেলা খাদ্য অফিস সূত্রে জানা যায়, অভ্যন্তরীণ বোরো ধান সংগ্রহ ২০১৮ আওতায় ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে মাত্র ৬ হাজার মেট্রিক টন। অভ্যন্তরীণ বোরো সংগ্রহ ২০১৮ মৌসুমে দেশে খাদ্য নিরাপত্তা মজুদ গড়ে তোলার লক্ষ্যে এবং হাওর এলাকার মানুষের ধান শুকানো এবং রক্ষণাবেক্ষণের সমস্যার কথা বিবেচনা করে জেলার ১১টি উপজেলার খাদ্য গুদামগুলোতে ছয় হাজার মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করা হবে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, সারা জেলায় কৃষি কার্ডধারী কৃষকের সংখ্যা ৩ লাখ ৪৯ হাজার।
সুনামগঞ্জ জেলার ১১টি উপজেলার মধ্যে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় ৫০০ মেট্রিক টন, দক্ষিণ সুনামগঞ্জে ৫০০ মেট্রিক টন, দোয়ারা বাজারে ৪০০ মেট্রিক টন, ছাতকে ৪০০ মেট্রিক টন, জগন্নাথপুরে ৬০০ মেট্রিক টন, দিরাইয়ে ৭০০ মেট্রিক টন, শাল্লায় ৭০০ মেট্রিক টন, জামালগঞ্জে ৬০০ মেট্রিক টন, ধর্মপাশায় ৮০০ মেট্রিক টন, বিশ্বম্ভরপুরে ৩০০ মেট্রিক টন ও তাহিরপুরে ৫০০ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করবে সরকার। এ ব্যাপারে জামালগঞ্জ উপজেলার খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অসীম তালুকদার বলেন, ২০ মে থেকে সারা জেলায় থেমে থেমে বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে যা এখনও চলমান। এই কারণে কৃষক ধান নিয়ে গুদামে যেতে সমস্যায় পড়ছেন। এ ব্যাপারে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামনা রঞ্জন দাস বলেন, হাওর এলাকার বেশির ভাগ কৃষক নৌকায় পরিবহন করে ধান খাদ্য গুদামে বিক্রির জন্য নিয়ে আসেন। গত কয়েকদিন ধরে আবহাওয়া খারাপ থাকায় কৃষকরা হাওরের ঢেউয়ের কারণে নৌকাডুবি ও শুকনো ধান ভিজে যাওয়ার কথা বিবেচনা করে গুদামে ধান নিয়ে আসতে পারছেন না। তবে ২১ মে থেকে সরকার নির্ধারিত সময়ে উপজেলা খাদ্য গুদাম ধান ক্রয়ের জন্য খোলা রয়েছে।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সমীর বিশ্বাস বলেন, আমরা রোববার থেকে ধান সংগ্রহ শুরু করবো। তবে অপ্রতুল লক্ষ্যমাত্রা হওয়ার কারণে কৃষকরা গুদামে ধান দিতে খুব বেশি আগ্রহী নন। উপজেলার প্রত্যেক কৃষকের কাছ থেকে ১ মেট্রিক টন করে ধান সংগ্রহ করা হবে। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. জাকারিয়া মুস্তফা বলেন, ১৩ মে সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে ধান ক্রয়ের নির্দেশনার চিঠি এসেছে। এটির প্রয়োজনীয় অফিসিয়াল কার্যক্রম শেষ করতে ৭ দিন সময় লেগেছে। ২ মে থেকে গুদামগুলো ধান ক্রয়ের জন্য খোলা রয়েছে। কিন্তু আবহাওয়া খারাপ থাকায় কৃষকরা ধান নিয়ে আসাতে সমস্যায় পড়ছেন। এ বছর প্রকৃত কৃষক যাতে গুদামে ধান দিতে পারে সেটি প্রশাসন ও খাদ্য বিভাগ নিশ্চিত করবে। এক্ষেত্রে সরকারি ধান ক্রয়ের সুবিধা মিডলম্যানরা পেতে না পারে, সে বিষয়ে সবাই সজাগ রয়েছে। হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট বজলুল মজিদ চৌধুরী বলেন, চলতি বোরো মওসুমে জেলায় ২ লাখ ২২ হাজার হেক্টর জমিতে ধান আবাদ করা হয়েছে। জেলায় প্রান্তিক ছোট, বড় ও মাঝারি শ্রেণির ৩ লাখ ৪৯ হাজার ৭৪২ জন কৃষক। এতে ৮ লাখ মেট্রিক টন চাল ও ১২ লাখ ৩৫ হাজার ৬৩৫ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হয়েছে, যার বাজারমূল্য তিন হাজার কোটি টাকা। ধান ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা আরও বাড়ানো উচিত। তা না হলে কৃষকরা বঞ্চিত হবেন।