অস্ট্রেলিয়ায় গ্রেফতার হওয়া জঙ্গি নওরোজের স্ত্রী ঢাকায় কারাবন্দি
ঢাকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্রগুলো বলছে, গত বছরের ২ অক্টোবর র্যাব চকবাজার এলাকা থেকে সাদিয়া আমিন নামে এক তরুণীকে গ্রেফতার করে, যে অস্ট্রেলিয়ায় গ্রেফতার হওয়া নওরোজ আমিনের স্ত্রী। নাদিয়াকে গ্রেফতারের পর র্যাব-৩-এর কর্মকর্তারা বলেছিলেন, গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর ঢাকার খিলগাঁও থানাধীন দক্ষিণ বনশ্রী এলাকা থেকে জেএমবির ‘সারোয়ার-তামিম গ্রুপ’-এর ‘ব্রিগেড আদ্-দার-ই-কুতনি’র কমান্ডার ইমাম মেহেদী হাসান ওরফে আবু জিব্রিল নামে এক তরুণকে গ্রেফতার করা হয়। পরবর্তী সময়ে দুই দফা রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে সে জানায়, সে ‘সারোয়ার-তামিম গ্রুপ’-এর ব্যাকআপ ব্রিগেড হিসেবে ‘ব্রিগেড আদ্-দার-ই-কুতনি’ শক্তিশালী করার চেষ্টা করছিল। তার সঙ্গে অনেক আনসার সদস্য (সাহায্যকারী), মুহাজির (যোদ্ধা), সালাফী আলেম বোর্ড ও অর্থদাতা দেশি-প্রবাসী ব্যক্তি রয়েছে বলেও জানায়। র্যাব-৩-এর কর্মকর্তা সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘‘ইমাম মাহাদী হাসানের দেওয়া তথ্য মতে, গত বছরের ২ অক্টোবর বিকেলে রাজধানীর চকবাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে ‘ব্রিগেড আদ্-দার-ই-কুতনি’র সক্রিয় সদস্য সাদিয়া আমিনকে গ্রেফতার করি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সাদিয়া ওই সময় জানিয়েছে, ২০১৪ সালের নভেম্বর মাসে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী আবু আতার ওরফে নওরোজ রাইয়্যাত আমিনের সঙ্গে পারিবারিকভাবে তার বিয়ে হয়। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আবু আতার ইংল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করলেও পরবর্তী সময়ে ১৯৯৫ সালে সপরিবারে অস্ট্রেলিয়ায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। বিয়ের পর ২০১৪ ও ২০১৫ সালে আবু আতার ওরফে নওরোজ আমিন দুই দফায় ৬ মাস বাংলাদেশে অবস্থান করে।’’
র্যাব কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘বিয়ের আগেই নওরোজ উগ্রবাদী মতাদর্শে বিশ্বাসী ছিল। বাংলাদেশ অবস্থানকালে ২০১৫ সালে নওরোজ আমিনের সঙ্গে উগ্রবাদী মতাদর্শে বিশ্বাসী এক যুবকের পরিচয় হয়। ওই যুবক তাকে ইমাম মেহেদী হাসানের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল। পরবর্তী সময়ে স্বামী নওরোজ আমিনের মাধ্যমে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ে সাদিয়া আমিন।’ লালবাগের স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, সাদিয়া আমিনের বাসার ঠিকানা ৯/১০ চকবাজার। খাজা টাওয়ার নামে একটি বহুতল ভবনের চতুর্থ তলায় পরিবারের সঙ্গে থাকতো সে। সাদিয়া ২০১৫ সালে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল ম্যাপললিফ থেকে ‘ও লেভেল’ সম্পন্ন করার পর পুরান ঢাকার একটি কিন্ডার গার্ডেন স্কুলে শিক্ষিকতা করতো। র্যাব-৩-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এমরানুল হাসান বলেন, ‘নওরোজ তার স্ত্রী সাদিয়া আমিনকে জঙ্গিবাদী মতাদর্শে উদ্বুদ্ধ করে তোলে। অস্ট্রেলিয়া থেকে নওরোজ স্ত্রী সাদিয়ার মাধ্যমে ইমাম মাহাদী হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করতো। এমনকি ইমাম মাহাদী হাসান সংগঠনের জন্য যে অস্ত্র সংগ্রহ করার চেষ্টা করছিল, তাতে অর্থ সহযোগিতাও করতো নওরোজ।’ সাদিয়ার স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে লে. কর্নেল এমরানুল হাসান বলেন, ‘ইমাম মাহাদী হাসান একাধিক অস্ত্র কেনার জন্য নওরোজের কাছে সাত লাখ টাকা চেয়েছিল। এরই পরিপ্রেক্ষিতে নওরোজ তার স্ত্রী সাদিয়া আমিনের মাধ্যমে একলাখ টাকা দেয়। সাদিয়া জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য স্বীকার করার পাশাপাশি আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতেও এসব তথ্য জানিয়েছে।’